দ্য লাইন: একটি ভবন একটি শহর, মরুর বুকে কল্পরাজ্য

এ শহর চলবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায়, সেবার কাজে থাকবে রোবট, ফ্লাইং ট্যাক্সি আর বিশালাকার কৃত্রিম চাঁদ থাকবে প্রযুক্তির সেই স্বর্গে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Sept 2022, 08:35 AM
Updated : 3 Sept 2022, 08:35 AM

মরুভূমির বুকে নির্মাণ করা হবে সরলরেখায় আশ্চর্য এক ভবন, যাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠবে ১০৬ মাইল দীর্ঘ ‘ওয়ান-বিল্ডিং সিটি’; সেই শহরে বাস করবে ৯০ লাখ মানুষ।

শুনতে অবাক লাগলেও দুবাই আর আবু ধাবির মত শহরগুলোর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অদ্ভুত এই প্রকল্প হাতে নিয়েছে সৌদি আরব।

সিএনএন জানিয়েছে, কল্পনার ওই ভবনের নকশাও ইতোমধ্যে প্রকাশ করা হয়েছে। দুই পাশে কাচের দেয়ালে ঘেরা এ অবকাঠামো যেন কল্পবিজ্ঞান থেকে উঠে আসা কোনো দালান। শহরের নাম দেওয়া হয়েছে ‘দ্য লাইন’। মরুর বুক চিরে সরল রেখার মত এই ভবন সোজা চলে যাবে মাইলের পর মাইল।

সৌদি সরকারের নিওম প্রকল্পের অংশ হিসেবে জাঁকালো এই স্থাপত্য নির্মাণে লাগবে বহু বছর। যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের ঘোষণা অনুযায়ী, উপসাগরীয় দেশটির উত্তর-পশ্চিমে লোহিত সাগরের কাছে অত্যাধুনিক এ শহর গড়ে উঠবে।

সৌদি সরকারের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, প্রস্তাবিত ভবনটি হবে ২০০ মিটার চওড়া (৬৫৬ ফুট)। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৫০০ মিটার বা ১ হাজার ৬৪০ ফুট উপরে থাকবে খাড়া এই শহর। ভবনটির মোট আয়তন হবে ৩৪ বর্গ কিলোমিটার।

খুব বেশি তথ্য প্রকাশ করা না হলেও শহরটি পুরোপুরি নবায়নযোগ্য জ্বালানির ওপর ভিত্তি করে গড়ে তোলার কথা জানানো হয়েছে। সেখানে কোনো সড়ক থাকবে না, গাড়ি থাকবে না, তাই জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে কার্বন নির্গমনও হবে না। উচ্চগতির রেলসংযোগ হবে শহরের বিভিন্ন অংশের যোগাযোগের মাধ্যম।

প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব হবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে সমালোচকদের। ঝকমকে যে ভিডিওতে সৌদির এই পরিকল্পনা প্রকাশ করা হয়েছে, তা দেখে কেউ কেউ বলছেন, ওই শহর হবে নরকতুল্য।

উপসাগরীয় অঞ্চলের প্রতিদ্বন্দ্বী দুই প্রতিবেশী দুবাই ও আবু ধাবির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পর্যটক আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হওয়ার উচ্চাভিলাস আর সৌদি অর্থনীতিকে ঢেলে সাজাতে ২০৩০ সালের মধ্যে এই প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

তা সম্ভব হলে এই দশকের শেষে প্রতি বছর ১০ কোটি মানুষ সেখানে ভ্রমণ করবে বলে সৌদি সরকার আশা করছে; সেই সুবাদে স্থানীয় অর্থনীতিতে যুক্ত হবে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার।

কাচঘেরা আকাশচুম্বী ভবনটির নকশা সৌদি আরবের নিওম প্রকল্পের সর্বশেষ উন্নয়নকে তুলে ধরবে। ক্লিন এনার্জি বা পরিবেশবান্ধব জ্বালানির মাধ্যমে আলোকিত হবে শহরটি।

শুধু তাই নয়, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মাধ্যমে পরিচালিত হবে ‘দ্য লাইন’। সেবার কাজে থাকবে রোবট। ফ্লাইং ট্যাক্সি ও বিশালাকার কৃত্রিম চাঁদ থাকবে প্রযুক্তির সেই স্বর্গে।

সৌদি সরকার এবং দেশটির সরকারি বিনিয়োগ তহবিলে আওতায় ৫০০ বিলিয়ন ডলারের নিওম প্রকল্পের অংশ হিসেবে এ শহরের নির্মাণ কাজ ২০২৫ সালের মধ্যে শেষ করার লক্ষ্য ধরা হলেও অতিরিক্ত আরও পাঁচ বছর হাতে রাখা হয়েছে।

বিপত্তির গল্প

বিশ্বের ইতিহাসে এরকম বড় বড় সুপার প্রজেক্ট ব্যর্থ হওয়ার নজির রয়েছে।

দুবাইয়ে ২০০৯ সালে নাখিল বন্দর ও টাওয়ার উন্নয়নের কাজে ৩৮ বিলিয়ন ডলারের প্রকল্প প্রস্তাবনার ছয় বছর পর বাদ দেওয়া হয়েছিল বৈশ্বিক অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের কারণে।

চীনা সরকার আশা করেছিল, মঙ্গোলিয়ার মরুভূমিতে চীনের কাংবাশি শহরে এক বিলিয়ন ডলারের অবকাঠামো উন্নয়ন করলে শহরটিতে ১০ লাখ মানুষ থাকতে পারবে। কিন্তু ২০১৬ সালে সেখানে প্রত্যাশার মাত্র ১০ শতাংশ মানুষের জায়গা হয়।

চীনের তিয়ানজিনের ইউজিয়াপু এবং মিয়ানমারের রাজধানী নেপিডোতে এরকম ব্যয়বহুল প্রকল্প ভুতুরে শহরে পরিণত হয়েছে।

১৯৮৯ সালে উত্তর কোরিয়া পিয়ংইয়ংয়ের ৩৩০ মিটার উঁচু রিউগিয়ং হোটেলটিকে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু হোটেল বানাতে চেয়েছিল। নাম দেওয়া হয়েছিল ‘হোটেল অব ডুম’। ২০১৯ সালেও এর নির্মাণ শেষ হয়নি। তখনও সেটি ছিল বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু খালি ভবন।