মোদীর হাত ছাড়লেন বিহারের নীতীশ কুমার

বিহারের মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন নীতীশ কুমার। বিজেপির বিরুদ্ধে দলে ভাঙন ধরানোর অভিযোগ এনেছে নীতীশ কুমারের দল জেডিইউ।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 August 2022, 11:53 AM
Updated : 9 August 2022, 11:53 AM

ভারতে বিহার রাজ্যের জেডিইউ-বিজেপি জোট সরকারে ভাঙনের যে জল্পনা শুরু হয়েছিল, সেটিই সত্যি হয়েছে। বিহারের মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন নীতীশ কুমার।

মঙ্গলবার রাজভবনে রাজ্যপালের কাছে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেন তিনি।

জনতা দল-ইউনাইটেড (জেডিইউ) ভাঙানোর অপচেষ্টা করছে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। এ অভিযোগে ক্ষুব্ধ জেডিইউ প্রধান নীতীশ কুমার বিজেপি-র সঙ্গ ছেড়ে পদত্যাগ করলেন।

মুখ্যমন্ত্রিত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর বিষয়ে নীতীশ কুমার বলেন, দলের সাংসদ-বিধায়কদের সম্মতি নিয়েই এ পদত্যাগ এবং এনডিএ ছাড়ার সিদ্ধান্ত।

ভারতীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, বিহারে মঙ্গলবার সকাল থেকেই ছিল টানটান উত্তেজনা। নিজেদের অবস্থান ঠিক করতে দলীয় বিধায়কদের নিয়ে বৈঠকে বসে কংগ্রেস, রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি), জেডিইউ।

বৈঠকের পরই স্থির হয়- বিজেপির সঙ্গে জোটে থাকছে না নীতিশ কুমারের দল। একইসঙ্গে ঠিক হয় জেডিইউ-কে সমর্থন দেবে কংগ্রেস, আরজেডি, হিন্দুস্তানি আওয়াম মোর্চা। গঠিত হবে মহাজোটের নতুন সরকার।

বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হওয়ার কয়েকঘণ্টা পরই সন্ধ্যার দিকে নীতীশকুমার পদত্যাগের ঘোষণা দেন বলে জানিয়েছে এনডিটিভি।

এ ঘটনায় বিহারে বড় ধরনের ধাক্কা খেল বিজেপি। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে বিহারের মতো বড় রাজ্যে বিজেপি-কে ধাক্কা দিতে পারলে বিরোধী শিবির চাঙা হবে বলেই অভিমত রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের।

২০২০ সালে বিহারের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি’র সঙ্গে জোট বেঁধে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছলেন নীতীশ কুমার। কিন্তু দুই বছরের মধ্যে জোটে জটিলতা দেখা দেয়। সাবেক উপমুখ্যমন্ত্রী ও বিজেপি বিধায়ক সুশীল মোদী ছিলেন নীতীশ ঘনিষ্ঠ। কিন্তু এবার সরকার গঠনের পরই তাকে সরিয়ে দিয়েছে বিজেপি।

এমনকী, সুশীলকে বিহারের বাইরে বিভিন্ন কাজেরও দায়িত্ব দেওয়া হয়। সেটি ভালোভাবে নেয়নি বিহারের জনতা দল। একের পর এক কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ঘনিষ্ঠদের বিহারের মন্ত্রী করছিল বিজেপি। এতেই জেডিইউ ধারণা করেছে যে, বিহারের শাসনক্ষমতা সম্পূর্ণভাবে নিজেদের হাতে রাখতে চাইছে বিজেপি।

ওদিকে, বিজেপি শিবির থেকেও কিছু অভিযোগ ছিল। বিহারের বিজেপি নেতারা অভিযোগ করছিলেন যে, সরকার পরিচালনায় দলের মন্ত্রীদের পাত্তা দিচ্ছেন না বিহারের মুখ্যমন্ত্রী। ফলে দূরত্ব বাড়তে শুরু করে। সম্পর্কে ফাটল আরও সুদৃঢ় হয় আরসিপি সিংকে রাজ্যসভার টিকিট দেওয়াকে কেন্দ্র করে।

বিজেপির সঙ্গে সাবেক জেডিইউ নেতা আরসিপি সিংয়ের ঘনিষ্ঠতা সর্বসাম্প্রতিক জটিলতা সৃষ্টি করে। আরসিপি সিং দল ছাড়ার কথা ঘোষণা করতেই দু’দলের বিরোধ চরমে পৌঁছায়। জেডিইউ নেতা নীতীশের অভিযোগ, বহু আগে থেকেই দলকে শেষ করার ষড়যন্ত্র করছে বিজেপি। তাই শেষ অবধি জোট ভাঙার এই সিদ্ধান্ত।

‘দ্য হিন্দু’ পত্রিকা জানায়, বর্তমানে বিহার বিধানসভায় মোট আসন সংখ্যা ২৪২। সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে দরকার ১২১ জন বিধায়কের সমর্থন। বর্তমানে জেডিইউ বা নীতিশ কুমারের দলের বিধায়ক সংখ্যা ৪৪। বিজেপি’র বিধায়ক সংখ্যা ৭৭। কংগ্রেসের বিধায়ক সংখ্যা ১৯। তেজস্বী যাদবের আরজেডি’র ৭৯ জন বিধায়ক আছে।

এছাড়া, বামেদের মধ্যে সিপিআইএমএল-এর ১২ জন বিধায়কসহ সিপিআই ও সিপিআইএম এর দুজন করে এমএলএ, সাবেক মুখ্যমন্ত্রী জিতন রাম মানঝির হিন্দুস্তানি আওয়াম মোর্চার (এইচএএম) ৪ জন বিধায়ক এবং স্বতন্ত্রদের সমর্থনও আছে নীতিশ কুমারের।

ফলে জেডিইউ, আরজেডি, কংগ্রেস, এইচএএম, সিপিআইএমএল- এর জোট ১৬০ বিধায়কের সমর্থন নিয়ে সহজেই সংখ্যাগরিষ্ঠতার সীমা পার করবে বলে রাজনৈতিক মহলের ধারণা।