শুক্রবার রাতেও সুড়ঙ্গে আটকা ৪১ জন শ্রমিকের উদ্ধার পাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
Published : 24 Nov 2023, 09:08 PM
ভারতের উত্তরাখন্ড রাজ্যে উত্তরকাশীর নির্মাণাধীন সুড়ঙ্গে আটকে পড়া শ্রমিকদের উদ্ধারে আবারও বাধার মুখে পড়তে হল উদ্ধারকারীদের। শেষ পর্যায়ে পৌঁছে থমকে গেল কাজ।
সিল্কইয়ারা সুড়ঙ্গে নামা ধসের শেষ প্রান্তে পৌঁছতে পারলেন না উদ্ধারকারীরা। তার আগেই ড্রিলিং মেশিনের গোলযোগে থমকে গেল গোটা প্রক্রিয়া। ফলে শুক্রবার রাতেও সুড়ঙ্গে আটকা ৪১ জন শ্রমিকের উদ্ধার পাওয়া অনিশ্চিত হয়ে গেল।
শ্রমিকদের বের করে আনার জন্য পথ প্রস্তুত করতে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি ড্রিলিং মেশিন দিয়ে খোঁড়াখুঁড়ি চলছিল। মেশিনটিতে সমস্যা দেখা দেওয়ায় ড্রিলিং সাময়িকভাবে বন্ধ করতে হয়। এরই মধ্যে মেশিনটি মেরামত করা হয়েছে এবং ড্রিলিং শুক্রবারেই আবার শুরু হবে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পিএস ধামী ঘটনাস্থল ঘুরে আসার পর খবর জানিয়ে বলেছেন, ‘‘পরিস্থিতি বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। শেষ পর্যায়ে অনেক বেশি সাবধান হতে হবে। অনেক বেশি দ্রুততার সঙ্গেও কাজ করতে হবে।’’
উদ্ধার কর্মকর্তারা এর আগে ১০-১২ঘণ্টায় বৃহস্পতিবার রাতের মধ্যেই শ্রমিকদের বের করে আনতে পারার আশা প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু ফের বাধার কারণে এখন শ্রমিকদের উদ্ধারে আরও কিছুটা দেরি হবে।
টানা ১৩ দিন ধরে সুড়ঙ্গে আটকে আছেন ৪১ জন শ্রমিক। তাদের বের করে আনতে নানা কৌশল অবলম্বন করা হচ্ছে। ধ্বংসস্তূপ খুঁড়ে চওড়া পাইপ ঢুকিয়ে শ্রমিকদের বাইরে আনার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু গত শুক্রবারও খোঁড়াখুঁড়ির কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। সুড়ঙ্গের ভেতরেও আবার নামে ধস।
এরপর বুধবার সুড়ঙ্গের মুখের কাছে ফের ড্রিলিংয়ের মাধ্যমে উদ্ধার কাজ শুরু হওয়ার পর আবার নতুন বাধা আসে। ফলে খননের কাজ বন্ধ রাখতে হয়েছিল। বৃহস্পতিবার সেই বাধা কাটিয়ে ফের শুরু হয় খোঁড়াখুঁড়ি।
এরপরই কর্মকর্তারা সবকিছু ঠিকঠাকমত চললে শিগগিরই সবাইকে উদ্ধারের আশা প্রকাশ করেছিলেন।
কিন্তু ড্রিলিং করতে গিয়ে উদ্ধারকারীরা কি কি বাধার মুখে পড়েন তার ওপরই অনেককিছু নির্ভর করছে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন ভারতের জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের (এনডিএমএ) সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল সৈয়দ আতা হাসনাইন।
তিনি বলেন, “আটকে পড়া শ্রমিকদের উদ্ধারের জন্য অনুভূমিকভাবে ড্রিলিং করার সময় নানা বিপত্তি ঘটতে পারে। কাজটি চ্যালেঞ্জিং। তাই এরকম একটি জটিল উদ্ধার অভিযান কখন শেষ হবে তা বলা কঠিন।”
সুড়ঙ্গ বিষয়ক বিশেষজ্ঞ আরনল্ড ডিক্স উদ্ধারকর্মীদেরকে কাজে সহায়তা করছেন। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, দিনভর উদ্ধার অভিযান চালানোর সময় ড্রিলিং মেশিনটি তিনবার ভেঙেছে। উদ্ধারকারীরা এখন আটকে পড়া শ্রমিকদের কাছ থেকে মাত্র এক বাস সমান দূরত্বে আছে বলে জানান তিনি।
এলাকাটি পার্বত্যময় হওয়ায় এবং ভূমিধস ও ভূমিকম্পের ঝুঁকি থাকার কারণেও উদ্ধার অভিযানে বিঘ্ন ঘটছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।
গত ১২ নভেম্বর নির্মীয়মাণ সুড়ঙ্গটিতে ধস নামে। ৮ মিটার প্রশস্ত ওই সুড়ঙ্গে আটকা পড়া শ্রমিকরা ভারতের ভিন্ন ভিন্ন রাজ্যের বাসিন্দা। জীবিকার জন্য তারা এ কাজে এসেছিলেন।
বিভিন্ন ধরনের চওড়া পাইপ ধ্বংসস্তুপের দেয়ালের ভেতর দিয়ে আনুমানিক ৬০ মিটার পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। যাতে একটি মাইক্রো টানেল তৈরি করা যায়, যার ভেতর দিয়ে শ্রমিকরা হামাগুড়ি দিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসতে পারেন।
একবার সর্বশেষ পাইপ যেটি দিয়ে শ্রমিকরা বের হবেন,সেটি তাদের পৌঁছে গেলে তাদের শারিরীক অবস্থা পরীক্ষা করার জন্য একজন চিকিৎসককে সেখানে পাঠানো হবে।
আর সুড়ঙ্গের বাইরে প্রস্তুত রাখা হবে অ্যাম্বুলেন্স। কর্মকর্তারা বলছেন, শ্রমিকদেরকে নিরাপদে বের করে আনা হবে এবং এরপর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তাদেরকে কাছের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হবে।