নাশকতা পরিকল্পনায় নর্থ সী’ তে রাশিয়ার ছদ্মবেশী জাহাজ

ডেনমার্ক, নরওয়ে, সুইডেন ও ফিনল্যান্ডের যৌথ তদন্ত প্রতিবেদন বলছে, নর্থ সী-তে মাছ ধরা ট্রলার এবং গবেষণা জাহাজের ছদ্মবেশে রাশিয়ার জাহাজের একটি বহর রয়েছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 April 2023, 05:34 PM
Updated : 19 April 2023, 05:34 PM

নর্থ সী’র বায়ু খামার এবং ইউরোপের দেশগুলোর যোগাযোগের তার ধ্বংস করতে নাশকতার পরিকল্পনা করার নতুন অভিযোগ উঠেছে রাশিয়ার বিরুদ্ধে।

ডেনমার্ক, নরওয়ে, সুইডেন ও ফিনল্যান্ডের সরকারি সম্প্রচারমাধ্যমগুলোর যৌথ তদন্ত প্রতিবেদনে এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য বেরিয়ে এসেছে। বলা হয়েছে, নর্থ সী-তে মাছ ধরার ট্রলার এবং গবেষণা জাহাজের ছদ্মবেশে রাশিয়ার জাহাজের একটি বহর রয়েছে।

এসব জাহাজ পানির নিচে নজরদারি সরঞ্জাম বহন করে সম্ভাব্য নাশকতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ সব স্থানের ম্যাপ তৈরি করছে।

বিবিসি জানতে পেরেছে যে, রাশিয়ার জাহাজগুলো এই পরিকল্পনা অংশ হিসাবে যুক্তরাজ্যের জলসীমার আশেপাশে চলাফেরা করছে- এ ব্যাপারে ব্রিটিশ কর্মকর্তারা ওয়াকিবহাল।

এ ধারাবাহিক তদন্ত প্রতিবেদনের প্রথম পর্ব বুধবার ডেনমার্কের ডিআর, নরওয়ের এনআরকে, সুইডেনের এসভিটি ও ফিনল্যান্ডের ওয়াইএলই টিভিতে সম্প্রচার করা হবে।

ডেনমার্কের এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেছেন, পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে পরিপূর্ণ সংঘর্ষ বেধে যাওয়ার ক্ষেত্রে এই নাশকতার পরিকল্পনা প্রস্তুত করে রাখছে মস্কো।

নরওয়ের গোয়েন্দাপ্রধান সম্প্রচারমাধ্যমগুলোকে বলেছেন, নাশকতার জন্য মূল সাইটগুলোর ম্যাপ তৈরির কাজটি রাশিয়ার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হচ্ছে এবং মস্কোর সরাসরি নিয়ন্ত্রণে একাজ পরিচালিত হচ্ছে।

সম্প্রচারমাধ্যমগুলো বলছে, তারা রাশিয়ার যোগাযোগে আড়িপেতে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে নর্ডিক দেশগুলোর জলসীমায় ছদ্মবেশী জাহাজগুলো চলাচলের আভাস পেয়েছে। জাহাজের অবস্থান যাতে প্রকাশ না পায় সেজন্য সেগুলোর ট্রান্সমিটার বন্ধ করা ছিল।

তদন্ত প্রতিবেদনে ‘অ্যাডমিরাল ভ্লাদিমিরস্কি’ নামের একটি রুশ জাহাজের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সরকারিভাবে এটি একটি ডুবো গবেষণা বিষয়ক জাহাজ। কিন্তু প্রতিবেদনে অভিযোগ করে বলা হয়েছে যে, এটি আসলে রাশিয়ার একটি গুপ্তচর জাহাজ।

তদন্তে যুক্তরাজ্য ও নেদারল্যান্ডসের উপকূলের কাছে সাতটি বায়ু খামারের আশপাশে জাহাজটির গতিবিধি শনাক্ত করতে একজন বেনামি ব্রিটিশ রয়্যাল নৌ বিশেষজ্ঞের সহায়তা নেওয়া হয়।

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বায়ুর খামার ও লোটার রয়েছে এমন অঞ্চলের কাছে পৌঁছানোর পথে জাহাজের গতি ধীর হয়ে যায়। জাহাজটি রাডারে ধরা পড়া এড়াতে ট্রান্সমিটার বন্ধ রেখে এক মাসের জন্য যাত্রাপথে ছিল।

একজন প্রতিবেদক ছোট্ট একটি নৌকায় চড়ে জাহাজটির কাছে যাওয়ার পর তিনি এক মুখোশধারী ব্যক্তির মুখোমুখি হন, যার কাছে একটি সামরিক অ্যাসল্ট রাইফেল ছিল বলে প্রতীয়মান হয়েছে।

গত বছর স্কটিশ উপকূলে একই জাহাজ দেখা গিয়েছিল বলে খবর পাওয়া গেছে। জাহাজটিকে ১০ নভেম্বর মোরে ফার্থে প্রবেশ করতে দেখা যায়।

বিবিসি জানিয়েছে, যুক্তরাজ্যের কর্মকর্তারা তাদের সগরের তলদেশে রাশিয়ার ম্যাপিং অভিপ্রায় সম্পর্কে সচেতন। গত ফেব্রুয়ারিতে ডাচ গোয়েন্দারা সাগরঅঞ্চলে রাশিয়ার নাশকতার পরিকল্পনা ও প্রস্তুতির সন্দেহে একটি সরকারি সতর্কতা জারি করেছিলেন।

দেশটির সামরিক গোয়েন্দাপ্রধান জেনারেল জ্যান সুইলেন্স বলেছিলেন, নর্থ সী-তে একটি বায়ু খামারের কাছে রাশিয়ার জাহাজ শনাক্ত করা হয়েছে, যেটি বিভিন্ন সাইট ম্যাপিং করছিল।

“আমরা সম্প্রতি কয়েক মাসে দেখেছি যে, রাশিয়া নর্থ সী’তে কীভাবে জ্বালানি ব্যবস্থা কাজ করে তা বের করার চেষ্টা করছে। আমরা প্রথম এমন কর্মকাণ্ড দেখছি”, বলেন তিনি।

এক্ষেত্রে রাশিয়ার উদ্দেশ্য হতে পারে যোগাযোগের ক্ষতি করা কিংবা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য পশ্চিমা দেশগুলোর বিদ্যুৎ ব্যবস্থা বিঘ্নিত করা।

এবছর ১৩ এপ্রিল নরওয়ে ১৫ রুশ কূটনীতিককে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে বহিষ্কার করেছে। ২০২২ সালে রাশিয়া ইউক্রেইন আগ্রাসন শুরুর পর ইউরোপজুড়ে বিভিন্ন দেশের রুশ কূটনীতিক বহিষ্কারের ঢেউয়ের মধ্যে এটি ছিল সর্বশেষ ঘটনা।

আর গত বছর অক্টোবরে শেটল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জে একটি তার কেটে গিয়ে মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে নরওয়ের যোগাযোগ মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হয়েছিল। তখন কোনও মাছ ধরার জাহাজের কারণে ওই সমস্যা হয়ে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হয়েছিল।