সম্পদ জালিয়াতির মামলা: জরিমানার অর্থ পরিশোধ করতে পারছেন না ট্রাম্প

নিজের সম্পদের মূল্য নিয়ে মিথ্যাচার করার অভিযোগে হওয়া একটি মামলায় গত ফেব্রুয়ারিতে নিউ ইয়র্কের একটি আদালত ট্রাম্পকে দোষীসাব্যস্ত করে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 March 2024, 03:45 PM
Updated : 19 March 2024, 03:45 PM

নিউ ইয়র্কে হওয়া একটি জালিয়াতির মামলায় ডনাল্ড ট্রাম্পকে মোটা অংকের যে জরিমানা করা হয়েছে তা তিনি পরিশোধ করতে পারছেন না। এমনকি তার হয়ে ৪৬ কোটি ৪০ লাখ মার্কিন ডলার পরিশোধ করার দায়িত্ব নেবে এমন কোনো বেসরকারি বীমা কোম্পানিও খুঁজে পাচ্ছেন না তার আইনজীবীরা।

নিজের সম্পদের মূল্য নিয়ে মিথ্যাচার করার অভিযোগে গত ফেব্রুয়ারিতে নিউ ইয়র্কের একটি আদালত ট্রাম্পকে দোষীসাব্যস্ত করে প্রায় সাড়ে ৩৫ কোটি ডলার জরিমানা করে। যা সুদে-আসলে মিলে প্রায় ৪৬ কোটি ৪০ লাখ ডলারে গিয়ে দাঁড়িয়েছে।

ফেব্রুয়ারিতে আদালতের দেওয়া ওই রায়ের বিরুদ্ধে ট্রাম্প আপিল করার ঘোষণা দিয়েছেন। কিন্তু আপিল শুনানি শুরু হওয়ার আগে ট্রাম্পকে জরিমানার পুরো অর্থ নগদে বা বন্ড আকারে আদালতে জমা করতে হবে বলে জানিয়েছে বিবিসি।

এবং অর্থ পরিশোধের জন্য সাবেক এই প্রেসিডেন্টর হাতে খুব বেশি সময়ও নেই। বিবিসির খবরে বলা হয়, আগামী ২৫ মার্চের মধ্যে যদি তিনি জরিমানার অর্থ পরিশোধ করতে ব্যর্থ হন তবে নিউ ইয়র্কের অ্যাটর্নি জেনারেল তার আবাসন ব্যবসার সম্পদ জব্দ করতে পারবে।

এ বিষয়ে ট্রাম্প বলেছেন, এই আকারের একটি বন্ড যোগাড় করা ‘বস্তুত অসম্ভব’।

ট্রাম্পের হয়ে কোনো বন্ডিং কোম্পানি নিউ ইয়র্ক আদালতকে জরিমানার পুরো অর্থ পরিশোধ করার দায়িত্ব নিতে পারে। সেক্ষেত্রে ট্রাম্প যদি আপিলে হেরে যান তবে তাকে নয় বরং ওই কোম্পানি তার হয়ে আদালতকে জরিমানার অর্থ পরিশোধ করবে।

এক বিবৃতিতে ট্রাম্প বলেন, তাকে যে পরিমাণ বন্ড দিতে বলা হয়েছে তা ‘যেকোনো কোম্পানির জন্যই অসম্ভব, এমনকি আমার মত সফল কারো পক্ষেও না’।

“বন্ডিং কোম্পানিগুলো এর আগে কখনো এত বড় আকারের বন্ড দেওয়ার কথা এমনকি শোনেওনি।”

আদালতে একটি লিখিত আবেদনে ট্রাম্পের আইনজীবীরা বলেন, “ট্রাম্প শিবির বিশ্বের সবচেয়ে বড় ইন্সুরেন্স কোম্পানিগুলোর একটির সঙ্গে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আলোচনা করেও কোনো সমাধানে আসতে পারেনি।”

ট্রাম্প শিবির ৩০টির মত কোম্পানির সঙ্গে আলোচনা করেও কোনো সফলতা পায়নি বলেও জানান তারা।

এই মামলায় ট্রাম্পের বড় দুই ছেলেকেও লাখ লাখ ডলার জরিমানা গুণতে হবে।

জরিমানা করা ছাড়াও নিউ ইয়র্কের বিচারক আর্থার এনগোরন তার রায়ে আরও বলেছেন, আগামী তিন বছর ট্রাম্প নিউ ইয়র্ক রাজ্যে কোনো ধরণের ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবেন না। এ সময়ে কোনো ব্যাংক থেকে তিনি ঋণ পাবেন না। এমনকি তার কোনো কোম্পানির পরিচালকও থাকতে পারবেন না।

ট্রাম্প মূলত মোটা অঙ্কের ঋণ পেতে ব্যাংকারদের কাছে তার নিজের ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোর সম্পদের মূল্য ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে দেখিয়েছেন অভিযোগে ওই মামলা হয়।

এ বছর নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। রিপাবলিকান দল থেকে ট্রাম্পের প্রার্থীতা অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে গেছে।

এ সময়ে এই মামলায় ট্রাম্প যে আইনী জটিলতায় পড়েছেন তা নজিরবিহীন। তাই এই মামলার পরবর্তী পদক্ষেপ কী হতে চলেছে তা আগে থেকে অনুমান করা কঠিন বলে মনে করেন সাবেক ফেডারেল প্রসিকিউটর ডায়ানা ফ্লোরেন্স। বলেন, এই পর্যায়ের জরিমানা সাধারণত বড় বড় কোম্পানির বিরুদ্ধে আরোপ করা হয়।

ট্রাম্পর আইনজীবী দল রায়ের বিরুদ্ধে আপিল প্রক্রিয়া বিলম্বিত করার খেলা খেলছে বলেও মনে করেন ফ্লোরেন্স। বলেন, “তবে পরিস্থিতি হয়তো সত্যিই তার হাতের বাইরে।

“এবং তাকে খুব সম্ভবত বাস্তবে এমন এক পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে হবে যেখানে অ্যাটর্নি জেনারেল তার সম্পদ নগদ অর্থে পরিণত করা শুরু করবেন এবং আদালত তাকে আরও সময় দিতে ইচ্ছুক কিনা তার উপর তিনি সত্যিই নির্ভরশীল।”

নিউ ইয়র্কের অ্যাটর্নি জেনারেল আদালতের রায় দেওয়ার পর ট্রাম্পকে বাড়তি ৩০ দিন সময় দিয়েছেন। যা আগামী মঙ্গলবার শেষ হয়ে যাবে।

Also Read: ট্রাম্পের বিরুদ্ধে জালিয়াতির মামলা