‘আর ভয় নয়’, ইরানে বিক্ষোভ গড়াল চতুর্থ সপ্তাহে

শিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশটির সরকার মাশা আমিনির মৃত্য পরবর্তী এ টানা বিক্ষোভকে যুক্তরাষ্ট্রসহ ইরানের শত্রুদের ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Oct 2022, 09:33 AM
Updated : 9 Oct 2022, 09:33 AM

স্কুলছাত্রীদের স্লোগান, বিস্তৃত ধর্মঘট, সড়কে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ আর কর্তৃপক্ষের দমনপীড়ন, রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে ইরানে মাশা আমিনির মৃত্যু পরবর্তী প্রতিবাদ বিক্ষোভ চতুর্থ সপ্তাহে পড়েছে।

নারীদের জন্য ইরানে যে কঠোর পোশাক নীতি আছে, তা লংঘনের অভিযোগে ‘নীতি পুলিশের’ হাতে আটক হওয়ার তিনদিনের মাথায় গত ১৬ সেপ্টেম্বর নিরাপত্তা হেফাজতে ২২ বছর বয়সী মাশা আমিনির মৃত্যু হয়। এর পরপরই সমগ্র ইরান বিক্ষোভে ফেটে পড়ে।

শুক্রবার দেশটির কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তাদের তদন্ত প্রতিবেদনে আমিনির মৃত্যুর কারণ এসেছে দীর্ঘদিনের অসুস্থতা, মাথায় ‘আঘাত’ নয়। অন্যদিকে গ্রেপ্তার হওয়ার আগ পর্যন্ত আমিনি সুস্থ ছিল বলে তার পরিবার বারবারই বলে এসেছে।     

২২ বছরের এ তরুণীর মৃত্যুর পর শুরু হওয়া বিক্ষোভ শনিবারও অব্যাহত ছিল বলে জানিয়েছে আল-জাজিরা।

এদিন প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসিকে নতুন শিক্ষাবর্ষ উপলক্ষে তেহরানের আল-জাহরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছবির জন্য পোজ দিতে দেখা গেছে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে কেবল নারীরাই পড়তে পারেন।

শিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশটির সরকার আমিনির মৃত্য পরবর্তী টানা বিক্ষোভকে যুক্তরাষ্ট্রসহ ইরানের শত্রুদের ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছে। তারা সহিংসতার জন্য সশস্ত্র ভিন্নমতাবলম্বীদেরও দায়ী করছে।

সহিংসতায় এখন পর্যন্ত নিরাপত্তা বাহিনীর অন্তত ২০ সদস্যের প্রাণ গেছে বলেও খবর পাওয়া গেছে।

“তারা ভেবেছিল, তারা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে তাদের শয়তানি লক্ষ্য হাসিল করতে পারবে। কিন্তু আমাদের শিক্ষার্থী, অধ্যাপকরা যে সতর্ক এবং শত্রুদেরকে তাদের লক্ষ্য হাসিল করতে দেবে না, তা তাদের অজানা,” শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে দেওয়া বক্তৃতায় বলেন রাইসি।

শনিবার কুর্দিস্তানের পশ্চিমের প্রদেশে আমিনির শহর সাকেজে স্কুলছাত্রীরা মাথার ওপর স্কার্ফ দোলাতে দোলাতে ‘নারী, জীবন, স্বাধীনতা’ স্লোগান দিয়ে রাস্তায় বিক্ষোভ করেছে বলে রেকর্ড করা এক ভিডিও প্রকাশ করে বলেছে কুর্দিদের অধিকার নিয়ে কাজ করা গোষ্ঠী হেনগাও।

তাদের শেয়ার করা অন্য এক ভিডিওতে কুর্দিস্তান প্রদেশের রাজধানী সানান্দাজে একটি স্কুলের শিক্ষার্থীদের একই স্লোগান দিয়ে স্কুলে প্রবেশ করতে দেখা যাচ্ছে।

টুইটারে শেয়ার হওয়া একাধিক ভিডিওতে এক ব্যক্তিকে গাড়িতে চালকের আসনে মৃত অবস্থায় দেখা গেছে, অন্যান্য ফুটেজে শোনা গেছে ‍গুলির শব্দ।

পুলিশের এক কর্মকর্তা ইরানের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ইরনাকে জানিয়েছেন, নিরাপত্তা রক্ষীরা তাজা গুলি ছোড়েনি, আর যে লোকটি মারা গেছে, তার মৃত্যু হয়েছে ‘প্রতিবিপ্লীদের’ হাতে।

ইরানের আধা সরকারি বার্তা সংস্থাগুলো তেহরানে সামান্য পরিসরে বিক্ষোভের খবর দিয়েছে।

বার্তা সংস্থা ইসনার খবরে বলা হয়েছে, রাজধানীর ১০টির মতো এলাকায় ‘সীমিত পরিসরে’ প্রতিবাদ দেখা গেছে।

ধর্মঘটের কথা উল্লেখ না করে তারা বলেছে, অনেক বাজারে দোকানদাররা অস্থিরতার কারণে ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কায় তাদের দোকান বন্ধ রেখেছে।

বিক্ষোভকারীদের একত্রিত হওয়া এবং তাদের বিক্ষোভের ছবি যেন বাইরে ছড়িয়ে পড়তে না পারে তা নিশ্চিতে ইন্টারনেটের ওপর ব্যাপক বিধিনিষেধ আরোপ করা হলেও বিক্ষোভকারীরা তাদের বার্তা পৌঁছে দিতে নিত্যনতুন কৌশলের দ্বারস্থ হচ্ছে।

“আমরা আর ভয় পাচ্ছি না, আমরা লড়বো,” তেহরানের মধ্যাঞ্চলে মোদারেজ মহাসড়কের একটি ওভারপাসে লাগানো বড় এক ব্যানারে এমনটাই লেখা রয়েছে।

নরওয়ে ভিত্তিক কুর্দিদের অধিকারভিত্তিক গোষ্ঠী হেনগাও বলেছে, শনিবার কুর্দিস্তান প্রদেশের সাকেজ, সানন্দাজ ও দিভানদারেহ এবং ওয়েস্ট আজারবাইজান প্রদেশের মাহাবাদে বিস্তৃত ধর্মঘট পালিত হয়েছে।

দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর শিরাজে বিক্ষোভ হওয়ার খবর দিয়েছে সোশাল মিডিয়া চ্যানেল ১৫০০ তাসবির; ইসফাহান ও তাবরিজে শিক্ষার্থীরা স্কুলের ক্লাস বাদ দিয়ে কর্মসূচি পালন করেছে বলে জানিয়েছে লন্ডনভিত্তিক ইরান অয়ার।

ইরানে গত এক মাসের বিক্ষোভ কর্মসূচি এরই মধ্যে কয়েক ডজন মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। এর প্রেক্ষিতে দেশটির প্রেসিডেন্ট রাইসি সবাইকে একতাবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

“অশুভ কামনাকারীদের সকল প্রচেষ্টা সত্ত্বেও ইসলামিক প্রজাতন্ত্র ইরানের শক্তিশালী ও পরিশ্রমী জনগণ ঐক্য ও সংহতির মাধ্যমে সামনের সকল সমস্যা কাটিয়ে উঠবে,” শনিবার তিনি এমনটাই বলেছেন বলে প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে।  

বিক্ষোভ উসকে দেওয়ার জন্য বিদেশি শক্তিকে দায় দেওয়া ইরান কয়েকদিন আগেই ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, পোল্যান্ড ও নেদারল্যান্ডসের নাগরিকসহ ৯ বিদেশিকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছিল।

ইরানে গণহারে চলা গ্রেপ্তারি এড়াতে শুক্রবার ফ্রান্স সরকার তার নাগরিকদের ‘যত দ্রুত সম্ভব দেশটি ত্যাগের’ পরামর্শ দিয়েছে। একই পরামর্শ দিয়ে ডাচ সরকার যেসব নাগরিক ইরানে যাওয়ার পরিকল্পনা করছিলেন, তাদেরকে তা বাদ দেওয়ার অনুরোধ করেছে।