চীন-যুক্তরাজ্য সম্পর্কের সোনালি যুগ শেষ: ঋষি সুনাক

ব্রিটিশ স্বার্থ ও মূল্যবোধের প্রতি বেইজিংয়ের পদ্ধতিগত চ্যালেঞ্জ ক্রমবর্ধমানভাবে আরও তীব্র হয়ে উঠছে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Nov 2022, 05:04 AM
Updated : 29 Nov 2022, 05:04 AM

চীনের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের সম্পর্কের তথাকথিত ‘সোনালি যুগ’ শেষ হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক।

ব্রিটিশ স্বার্থ ও মূল্যবোধের প্রতি বেইজিংয়ের পদ্ধতিগত চ্যালেঞ্জ ক্রমবর্ধমানভাবে আরও তীব্র হয়ে উঠছে, নিজের প্রথম বৈদেশিক নীতি বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ বক্তৃতায় সুনাক এমনটি বলেছেন বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে।

চীনের প্রতি ব্রিটেনের দৃষ্টিভঙ্গী বিবর্তিত হওয়া দরকার এবং বেইজিং ‘সচেতনভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার সকল উপায় ব্যবহার করে বিশ্বব্যাপী প্রভাব বাড়ানোর প্রতিযোগিতা’ করছে, বলেছেন তিনি।

সোমবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় লন্ডনের বাণিজ্যিক এলাকার গিল্ডহলে বার্ষিক লর্ড মেয়রর্স ব্যাঙ্কোয়েট অনুষ্ঠানে ব্যবসায়িক নেতা, বিশিষ্ট বিদেশি অতিথি ও বৈদেশিক নীতি বিশেষজ্ঞদের উপস্থিতিতে দেওয়া বক্তৃতায় সুনাক বলেন, “পরিষ্কার করে বললে, বাণিজ্য সামাজিক ও রাজনৈতিক সংস্কারের দিকে নিয়ে যাবে এই সাদামাটা ধারণার সঙ্গে তথাকথিত ‘সোনালি যুগ’ শেষ হয়ে গেছে।”  

২০১৫ সালে যুক্তরাজ্যের সাবেক অর্থমন্ত্রী জর্জ অসবর্ন চীনের সঙ্গে ব্রিটেনের সম্পর্কের বর্ণনা করতে ‘সোনালি যুগ’ শব্দবন্ধটি ব্যবহার করেছিলেন।

পূর্বসূরী লিজ ট্রাসের তুলনায় সুনাক চীনের প্রতি কম আক্রমণাত্মক, এমন বিবেচনায় নিজ দল কনজারভেটিভ পার্টির অনেকে সুনাকের সমালোচনা করে আসছিলেন। গত বছর তিনি যখন অর্থমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন তখন চীনের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পকর্ সম্প্রসারণের লক্ষ্যে মানবাধিকার উদ্বেগ নিয়ে ভারসাম্যপূর্ণ সংক্ষিপ্ত কৌশল নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। 

কিন্তু চলতি মাসে ইন্দোনেশিয়ার বালিতে জি২০ শীর্ষ সম্মেলনে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে সুনাকের পরিকল্পিত বৈঠক ব্যর্থ হয়। এরপর গত সপ্তাহে যুক্তরাজ্যের স্পর্শকাতর সরকারি ভবনগুলোতে চীনের তৈরি নিরাপত্তা ক্যামেরা ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়।  

সুনাক বলেন, “আমরা শনাক্ত করেছি, চীন আমাদের মূল্যবোধ ও স্বার্থের প্রতি একটি পদ্ধতিগত চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে। তারা আরও বৃহত্তর কর্তৃত্ববাদের দিকে এগিয়ে যাওয়ার পথে এই চ্যালেঞ্জ আরও তীব্র হয়ে উঠছে।

“আমরা অবশ্যই বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বা জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বিষয়গুলোসহ বৈশ্বিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে চীনের তাৎপর্যকে উপেক্ষা করতে পারবো না। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, জাপান ও অন্য অনেকেই এটি বোঝে।”

সুনাক জানান, তার নেতৃত্বে ব্রিটেন ‘স্থিতিশীলতা’ বেছে নেবে না এবং আন্তর্জাতিক প্রতিযোগীদের মুখোমুখি হবে ‘বিশাল বাগাড়ম্বর দিয়ে না বরং শক্তিশালী বাস্তবধর্মিতার সঙ্গে’।

ইউক্রেইনের ক্ষেত্রে তার সরকার সাবেক প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ও ট্রাসের মতো দৃঢ় সমর্থন বজায় রাখবে এবং আগামী বছরও কিইভকে সামরিক সহায়তা দেবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

“তাই কোনো সন্দেহ নেই, যতদিন লাগুক আমরা ইউক্রেইনের পাশে থাকবো। আগামী বছর আমরা সামরিক সহায়তা একই হারে দিয়ে যাবো বা অথবা বাড়াবো। আর আমরা আকাশ প্রতিরক্ষার জন্য নতুন সমর্থন সরবরাহ করবো,” বলেন সুনাক।

সেপ্টেম্বরে ব্রিটেন জানিয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্রের পর তারাই ইউক্রেইনকে সবচেয়ে বেশি সামরিক সহায়তা দিয়ে আসছে, চলতি বছর দেশটিকে ২৮০ কোটি ডলারের সহায়তা দিয়েছে।

সুনকা বলেছেন, রাশিয়া ও চীনের মতো প্রতিপক্ষ ও প্রতিযোগীদের ক্ষেত্রে ব্রিটেনের একই ধরনের দীর্ঘমেয়াদি পন্থা গ্রহণ করা দরকার।