সাগরে অন্তত ২০ রোহিঙ্গার মৃত্যু হয়েছে: জাতিসংঘ

ইন্দোনেশিয়ার আচেহ প্রদেশের তীরে ভেসে আসা একটি নৌকা থেকে সোমবার ১৭৪ রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করা হয়েছে। নিখোঁজ যে নৌকাটি ডুবে গেছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছিল, এটি সেই নৌকা।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Dec 2022, 09:36 AM
Updated : 27 Dec 2022, 09:36 AM

সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে সাগরে অন্তত ২০ রোহিঙ্গার মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা (ইউএনএইচসিআর)।

দুই মাসে একাধিক নৌকায় কয়েকশ রোহিঙ্গা ইন্দোনেশিয়ায় নামার পর মঙ্গলবার তারা একথা বলেছে।

সোমবারও ইন্দোনেশিয়ার আচেহ প্রদেশের তীরে ভেসে আসা একটি নৌকা থেকে ১৭৪ রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করা হয়েছে।

কয়েক সপ্তাহ ধরে সমুদ্রে ভাসতে থাকা ওই রোহিঙ্গাদের অধিকাংশই পানিশূন্যতা ও ক্লান্তিতে ভুগছিলেন, তাদের জরুরি চিকিৎসা সেবা দরকার হয়ে পড়েছিল বলে আচেহ-র দুর্যোগ বিষয়ক সংস্থার কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

রোহিঙ্গাদের সহযোগিতা দিয়ে আসা আরাকান প্রজেক্টের ক্রিস লেয়া বলেছেন, দেড়শতাধিক রোহিঙ্গাবোঝাই যে নৌকাটির খোঁজ মিলছিল না, যেটি ডুবে গেছে বলে আশঙ্কাও করা হচ্ছিল, সোমবার সেই নৌকাই ইন্দোনেশিয়ায় পৌঁছেছে।

বাংলাদেশের শরণার্থী শিবিরগুলোর দুর্দশা থেকে বাঁচতে চাওয়া রোহিঙ্গাদের সংখ্যা বাড়ায় দশককালের মধ্যে ২০২২ সালের সমুদ্রই মিয়ানমারের সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়টির জন্য সবচেয়ে প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে যাচ্ছে, সোমবার বলেছিল ইউএনএইচসিআর।

মিয়ানমারে দীর্ঘদিন ধরে নির্যাতনের শিকার রোহিঙ্গাদের বড় একটি অংশ এখন বাংলাদেশের শরণার্থী শিবিরগুলোতে বাস করছে।

বছরের পর বছর ধরে নভেম্বর থেকে এপ্রিলের মধ্যে, এই সময়টা সমুদ্র তুলনামূলক শান্ত থাকে, বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গাকে থাইল্যান্ড এবং মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় ছুটতেও দেখা যাচ্ছে।

বাংলাদেশের জনবহুল শরণার্থী শিবিরগুলোতে এখন প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা বসবাস করছে, যাদের বেশিরভাগই সীমান্ত টপকেছে ২০১৭ সালে রাখাইনে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বর্বর দমন অভিযান শুরু হওয়ার পর।

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বাংলাদেশের শরণার্থী শিবির ছেড়ে সমুদ্র পথে মালয়েশিয়া-ইন্দোনেশিয়া যাওয়ার চেষ্টা করা রোহিঙ্গার সংখ্যা বেড়েছে বলে জানাচ্ছে একাধিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো। তাদের হিসাবে, গত বছর এই সংখ্যা ছিল ৫০০-র মতো, এ বছর সেটি বেড়ে আড়াই হাজারের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। 

কেন বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা এখন শরণার্থী শিবির ছাড়ছে, তা স্পষ্ট না হলেও, দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে কোভিড বিধিনিষেধ উঠে যাওয়ার কারণে তাদের জন্য পছন্দের জায়গায় যাওয়ার সুযোগ বেড়েছে বলে অনেকে মনে করছেন।

“আমরা বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শরণার্থী শিবির থেকে এ আশা নিয়ে এসেছি যে, ইন্দোনেশিয়ার জনগণ আমাদের শিক্ষার সুযোগ করে দেবে,” বলেছেন ইন্দোনেশিয়ার একটি আশ্রয় কেন্দ্রে থাকা উমর ফারুক; ইন্দোনেশিয়ার চিকিৎসকরা ওই কেন্দ্রে সাগরে ভেসে আসা রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ, শিশুদের সেবা দিচ্ছিলেন।

এর আগে রোববারই আরেকটি নৌকায় সমুদ্রে মাসখানেক ভেসে থাকা ৫৭ রোহিঙ্গা ইন্দোনেশিয়ার আচেহতে নামেন। নভেম্বরেও দুই নৌকায় মোট ২৩০ জন রোহিঙ্গা শরণার্থী দেশটিতে এসেছিল।

এ মাসের শুরুর দিকে শ্রীলঙ্কার নৌবাহিনীও সমুদ্র থেকে ১০৪ রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করে; ভাসমান পানির ট্যাংক আঁকড়ে ধরে থাকা ৬ জনকে বাঁচিয়েছে থাই কর্তৃপক্ষও।