ইংল্যান্ডের সাউথপোর্টে ছুরি হামলায়তিন শিশু নিহতের ঘটনার পর থেকে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন শহরে ১৩ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ব্যাপক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়েছে।
Published : 05 Aug 2024, 06:27 PM
ইংল্যান্ডের সাউথপোর্টে ছুরি হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে যুক্তরাজ্যজুড়ে ছড়িয়ে পড়া দাঙ্গা-হাঙ্গামার নিন্দা করেছেন প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার।
দাঙ্গা-বিক্ষোভকারীদের কার্যকলাপকে ‘কট্টর-ডানপন্থি গুন্ডামি’ আখ্যা দিয়ে স্টারমার বলেছেন, অস্থিরতা সৃষ্টিতে জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে।
গত সপ্তাহে ইংল্যান্ডের সাউথপোর্ট শহরে একটি নাচের কর্মশালায় ছুরি হামলায় তিন শিশু নিহত হওয়ার পর থেকে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন শহরে ১৩ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ব্যাপক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়েছে। এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার হয়েছে ৪২০ জন।
সন্দেহভাজন ছুরি হামলাকারী একজন অভিবাসী এবং উগ্র ইসলামপন্থি বলে অনলাইনে ভুল তথ্য ছড়িয়ে পড়ার পর অভিবাসী-বিরোধী ও মুসলিম-বিরোধী গোষ্ঠীগুলো বিক্ষোভ শুরু করে।
যদিও পুলিশ বলছে, সন্দেহভাজন হামলাকারীর জন্ম যুক্তরাজ্যে। তারা ছুরি হামলাকে সন্ত্রাসী হামলা হিসেবে বিবেচনা করছে না। কিন্তু তাতেও দমেনি বিক্ষোভ।
শনিবার লিভারপুল, ব্রিস্টল এবং ম্যানচেস্টারসহ বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। দোকান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর ও লুটপাট হয়েছে। বিভিন্ন ভবন, গাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। আশ্রয়প্রার্থীরা থাকে এমন হোটেলগুলোকে হামলার নিশানা করা হয়েছে।
হামলায় বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা আহত হওয়ার পর কয়েক ডজন বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়। রয়টার্সের এক সাংবাদিক জানান, মুখোশ পরা বিক্ষোভকারীরা পুলিশের দিকে ইট ছুড়ে মারে এবং বেশ কয়েকটি হোটেলের জানালা ভেঙে ফেলে।
কয়েকদিনের এই সহিংস পরিস্থিতির পর রোববার প্রধানমন্ত্রী স্টারমার এক বিবৃতিতে বলেছেন, “এ সপ্তাহান্তে আমরা যে উগ্র ডানপন্থি গুন্ডামি দেখেছি তার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। যারা এ সহিংস কর্মকাণ্ডে অংশ নিয়েছে তারা নিঃসন্দেহে আইনের পূর্ণ শক্তির মুখোমুখি হবে।”
ন্যাশনাল পুলিশ চিফস কাউন্সিল জানিয়েছে, শনিবার সন্ধ্যা থেকে ১৪৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং সামনের দিনগুলোতে আরও গ্রেপ্তার করা হবে।
সোমবার দেশের পরিস্থিতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী স্টারমার পুলিশ প্রধানদের সঙ্গে জরুরি বৈঠকে বসবেন বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, রদারহ্যামের 'লুণ্ঠনকারী দলগুলোর' কারণে বাসিন্দারা 'চরম আতঙ্কে' রয়েছেন।
স্থানীয় পুলিশ জানিয়েছে, উত্তর ইংল্যান্ডের রথারহামে সংঘর্ষের সময় ১০ জন কর্মকর্তা আহত হয়েছেন। বিক্ষোভকারীরা আশ্রয়প্রার্থীদের একটি হোটেলের জানালা ভেঙে ঢোকার চেষ্টা করে।
সাউথ ইয়র্কশায়ার পুলিশের অ্যাসিস্ট্যান্ট চিফ কনস্টেবল লিন্ডসে বাটারফিল্ড বলেন, “আজ তাদের বিবেকহীন কর্মকাণ্ড নিছক ধ্বংস এবং জনসাধারণ ও বৃহত্তর সম্প্রদায়কে আতঙ্কের মধ্যে ফেলে দেওয়া ছাড়া আর কিছুই করেনি।”
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বিভিন্ন শহরে মসজিদগুলো হুমকির মুখে পড়ায় নতুন ব্যবস্থায় বাড়তি নিরাপত্তা দেওয়া হবে। মধ্য ইংল্যান্ডের ট্যামওয়ার্থের একটি হোটেলের আশপাশের এলাকা এড়িয়ে চলার জন্য জনসাধারণকে অনুরোধ জানিয়েছে স্থানীয় পুলিশ৷
তারা বলেছে, 'একটি বড় দল ওই এলাকায় প্রজেক্টাইল নিক্ষেপ করছে, ভাঙচুর চালাচ্ছে, আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে এবং পুলিশকে লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে৷”
সর্বশেষ ২০১১ সালে যুক্তরাজ্যে দাঙ্গা হয়েছিল, তখন লন্ডনে পুলিশের গুলিতে এক কৃষ্ণাঙ্গ নিহত হওয়ার পর হাজার হাজার মানুষ পাঁচ রাত ধরে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখিয়েছিল। সে সময় দেশটির প্রধান কৌঁসুলি ছিলেন স্টারমার।
লিভারপুলের নিকটবর্তী সাউথপোর্টে হত্যাকাণ্ডের শিকার কমিউনিটি নেতারা এবং নিহতদের পরিবার দেশজুড়ে অস্থিরতার সমালোচনা করেছেন।
লিভারপুলের একদল ধর্মীয় নেতা এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, “অনেক মানুষ এই মর্মান্তিক ঘটনাকে ধর্মীয় বিভাজন ও ঘৃণা সৃষ্টির কাজে ব্যবহার করার চেষ্টা করছে।”