Published : 18 Feb 2025, 11:48 PM
ইউক্রেইন যুদ্ধ অবসানে সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে অনুষ্ঠিত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার কর্মকর্তাদের বৈঠক। এই বৈঠককে ইউক্রেইন যুদ্ধ অবসানের দীর্ঘ ও কঠিন পথে যাত্রার ‘প্রথম ধাপ’ বলে অভিহিত করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও।
ওদিকে, রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ বলেছেন, আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া দুই দেশই পূর্ণ সহযোগিতার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে কাজ করতে রাজি হয়েছে।
প্রায় তিন বছর ধরে ইউক্রেইনে রাশিয়ার আগ্রাসন চলছে। এর মধ্যে এবারই প্রথম সেই যুদ্ধ বন্ধে সরাসরি আলোচনায় বসল যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া। তবে এই আলোচনায় আমন্ত্রিত ছিল না ইউক্রেইন ও ইউরোপীয় দেশগুলো।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রুবিও এবং রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ল্যাভরভের নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধিরা সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদের দিরিয়া প্রাসাদে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন।
বৈঠকের পর রুবিও বলেন, “আমরা ইউক্রেইন যুদ্ধ অবসান নিয়ে প্রাক-আলোচনা করছি না। এটি হচ্ছে কিছু সময়ের জন্য রুদ্ধ কক্ষে কঠিন কূটনীতির মতো কিছু বিষয়। সংঘাত শেষ হতে হলে তাতে জড়িত সব পক্ষই এ প্রক্রিয়ায় রাজি থাকতে হবে বা তাদের কাছে প্রক্রিয়াটি গ্রহণযোগ্য হতে হবে।”
আজকের বৈঠকের লক্ষ্য ছিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে হওয়া ফোন আলাপের পরবর্তী আলোচনার পট প্রস্তুত করা। আজকের দিনটি দীর্ঘ ও কঠিন যাত্রাপথে প্রথম ধাপ। তবে এটি গুরুত্বপূর্ণ, বলেন রুবিও।
তিনি বলেন, ট্রাম্প ইউক্রেইন যুদ্ধের একটি সুষ্ঠু এবং টেকসই সমাধান চান। তাছাড়া, ইউক্রেইন যুদ্ধের অবসানে ‘গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়ায়’ জড়িত হতে মস্কোরও যে সদিচ্ছা আছে, সেটি বুঝতে পেরেছেন বলেও জানান রুবিও।
অপরদিকে, রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ সৌদি আরবে অনুষ্ঠিত বৈঠকের আলোচনা খুবই ফলপ্রসূ হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, আমেরিকান পক্ষ এখন আমাদের অবস্থানকে আরও ভালভাবে বোঝে- সেটি আমার বিশ্বাস করার কারণ আছে।
দুই দেশ যেসব বিষয়ে একমত হয়েছে সেগুলো উল্লেখ করে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া একে অপরের দেশে অবস্থিত দূতাবাসে রাষ্ট্রদূত নিয়োগ দেবে।
ইউক্রেইন যুদ্ধের সমাধানে পৌঁছার প্রক্রিয়া শুরু করতে যুক্তরাষ্ট্র একটি টীম গঠন করে প্রতিনিধিদের নিয়োগ দেবে। তারপর রাশিয়াও একইভাবে তাদের প্রতিনিধি নিয়োগ করবে।
যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে পূর্ণ সহযোগিতা পুনরায় চালু করা এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে তা সম্প্রসারণ করার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরিতে কাজ করবে দুই দেশ।
ল্যাভরভ রাশিয়ার পুরোনো অবস্থানও তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন, পশ্চিমা সামরিক জোট নেটোর কোনওরকম সম্প্রসারণ এবং তাতে ইউক্রেইনের সদস্যপদ পাওয়াকে রাশিয়া তাদের জন্য ‘সরাসরি হুমকি’ হিসাবেই দেখবে।
তাছাড়া, ইউক্রেইনে শান্তিরক্ষী সেনা মোতায়েনের বিষয়ে তিনি বলেন, নেটো জোট থেকেই হোক বা ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পতাকাতলেই হোক- কোনও দেশ থেকেই ইউক্রেইনের মাটিতে শান্তিরক্ষী সেনা রাশিয়া মেনে নেবে না।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার সোমবার বলেছিলেন, যুদ্ধবিরতি হলে পরে ইউক্রেইনে ব্রিটিশ সেনা পাঠাতে ইচ্ছুক তিনি। রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী এর বিরুদ্ধেই প্রতিক্রিয়া জানালেন।
ভবিষ্যত শান্তি আলোচনায় ইউক্রেইনকে নেওয়ার প্রসঙ্গে ল্যাভরভ কিছু বলেননি। তবে ইউক্রেইন বলেছে, তাদের অংশগ্রহণ ছাড়া তারা কোনও শান্তি চুক্তি মেনে নেবে না।