প্রথমে জাপান, অস্ট্রেলিয়া, তাইওয়ান ও সিঙ্গাপুরে বিক্ষোভ শুরু হয়, ক্রমে তা ইউরোপের ও যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে ছড়িয়ে পড়ে।
Published : 09 Sep 2024, 01:23 PM
ভারতের কলকাতায় আরজি কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের শিক্ষানবিশ নারী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও হত্যার বিচারের দাবিতে রোববার বিশ্বজুড়ে হাজার হাজার প্রবাসী ভারতীয় বিক্ষোভ করেছেন।
সংগঠকরা জানিয়েছেন, এদিন এই দাবি জানিয়ে বিশ্বের ২৫টি দেশের ১৩০টিরও বেশি শহরে বিক্ষোভ হয়েছে।
রয়টার্স জানায়, প্রথমে জাপান, অস্ট্রেলিয়া, তাইওয়ান ও সিঙ্গাপুরে ছোটবড় বিভিন্ন দল বিক্ষোভ শুরু করার পর ক্রমে তা ইউরোপের ও যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে ছড়িয়ে পড়ে।
এদিকে আর জি কর মেডিকেল কলেজের ঘটনায় ইতোমধ্যে সাবেক অধ্যক্ষসহ এক সন্দেহভাজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
বিশ্বব্যাপী বিক্ষোভের সংগঠক দীপ্তি জৈন বলেন, “দায়িত্বরত একজন তরুণ ইন্টার্ন চিকিৎসকের ওপর এই জঘন্য, নির্মম, নৃশংসতায় আমরা বাকরুদ্ধ।’
নিহত চিকিৎসক গত ৮ অগাস্ট টানা ৩৬ ঘণ্টার ডিউটিতে ছিলেন, রাতে সহকর্মীদের সঙ্গে খাবার খেয়ে তিনি পালমোনোলজি বিভাগের সেমিনার হলে বিশ্রাম নিতে যান।
পরদিন সকালে তার জুনিয়র সহকর্মীরা ওই হলের ভেতরেই তার অর্ধনগ্ন মরদেহ পড়ে থাকতে দেখেন। ওই তরুণীর পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ তাদের প্রথমে জানিয়েছিল তাদের মেয়ে ‘আত্মহত্যা’ করেছে। পরে অবশ্য তীব্র ক্ষোভের মুখে পুলিশ এই ঘটনায় খুন ও ধর্ষণের মামলা দায়ের করেছে।
এই ঘটনায় আরজি কর মেডিকেল কলেজের পদত্যাগকারী অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধেও অভিযোগ উঠেছে। তিনিও বিষয়টি ‘আত্মহত্যা’ বলে ধামাচাপা দিতে চেয়েছিলেন এবং বলেছিলেন, “রাতের বেলা একা একা সেমিনার হলে গিয়ে মেয়েটি দায়িত্বজ্ঞানহীন কাজ করেছে।”
যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকোর সমুদ্রতীরবর্তী বেশ কয়েকটি শহরে শত শত ভারতীয় নারীদের সঙ্গে হওয়া নির্যাতনের জবাবদিহি ও নিরাপত্তার দাবিতে বিক্ষোভ করে।
সান ফ্রান্সিসকো থেকে প্রায় ৫৬ কিলোমিটার পূর্বে ক্যালিফোর্নিয়ার ডাবলিনে বিক্ষোভকারীরা ন্যায়বিচার চেয়ে স্লোগান দেয়। এছাড়াও বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে অনেকেই বিক্ষোভে সামিল হন।
ডাবলিনে বিক্ষোভে যোগ দেওয়া চিকিৎসক সুকল্প চৌধুরী (৩৯) বলেন, “আমরা নারীর নিরাপত্তা চাই, তবে কর্মক্ষেত্রে (নারী-পুরুষ) প্রত্যেকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরী।”
এছাড়া সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে নারীরা সার্গেলস থোই স্কয়ারে জড়ো হয়ে বাংলায় গান গেয়ে এবং প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে বিক্ষোভ করেন।
পশ্চিমবঙ্গের গণমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকা জানায়, রবিবার রাতে কলকাতাসহ পশ্চিমবঙ্গের নানা প্রান্তে মানুষ রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করছেন। কেউ রাস্তা আটকে বিক্ষোভ-মিছিল করছেন, কেউ আবার কালো বেলুন উড়িয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে বিচার চেয়েছেন।
আরজি কর-কাণ্ডের বিচারের দাবিতে ভারতের রাজধানী দিল্লিতেও কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। রোববার সন্ধ্যায় দিল্লির চিত্তরঞ্জন পার্ক এলাকায় মোমবাতি জ্বালিয়ে নির্যাতিতার বিচারের দাবিতে প্রতিবাদ জানানো হয়।
২০১২ সালে নয়াদিল্লিতে চলন্ত বাসে ২৩ বছর বয়সী এক নারীকে দলগত ধর্ষণ ও হত্যার পর ভারতের ধর্ষণ আইন আরও কঠোর করা হলেও, কলকাতার ঘটনা দেখিয়ে দিয়েছে দেশটিতে নারীরা কীভাবে প্রতিনিয়ত যৌন সহিংসতার শিকার হচ্ছেন।