এবারের নির্বাচনে চীন বেশ জোরেশোরেই তাইওয়ানের স্বাধীনতার পক্ষের দল ডিপিপির বিপক্ষে প্রচার চালিয়েছে।
Published : 13 Jan 2024, 07:51 PM
চীনের প্রভাব বলয়ে নয় বরং তাইওয়ানের বাসিন্দারা নিজেদের স্বাধীনতা চান। তাইতো শনিবারের প্রেসিডেন্ট ও পার্লামেন্টারি নির্বাচনের ভোটে স্বাধীনতার পক্ষে শক্ত অবস্থানে থাকা ডেমোক্রেটিক প্রগ্রেসিভ পার্টির (ডিপিপি) প্রার্থী লাই চিং-তে কে তারা বেছে নিয়েছেন।
গত আট বছর ধরে তাইওয়ানের ক্ষমতায় রয়েছে ডিপিপি। তাইওয়ানের বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডিপিপি-র সাই ইং ওয়েন। কিন্তু তিনি পরপর দুই মেয়াদে ক্ষমতায় থাকায় সংবিধান অনুযায়ী এবারের নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেননি।
তাইওয়ান নিজেদের স্বাধীনতা ঘোষণা করলেও চীন সেটা মানে না। বরং তাইওয়ানকে তারা নিজেদের বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া অংশ মনে করে, যারা একদিন পুনরায় একত্রিত হবে। এজন্য প্রয়োজনে বলপ্রয়োগের হুমকিও দিয়ে রেখেছে চীন।
ডিপিপি তাইওয়ানের পৃথক পরিচয়ের পক্ষে আর তারা দ্বীপটির উপর চীনের মালিকানার দাবি প্রত্যাখ্যান করে আসছে। এবারের নির্বাচনী ইশতেহারেও এটাই ছিল দলটির মূল বক্তব্য। এ অবস্থানের উপর ভিত্তি করেই তারা নির্বাচনী প্রচার চালিয়েছে।
এবারের নির্বাচনে চীন বেশ জোরেশোরেই ডিপিপির বিপক্ষে প্রচার চালিয়েছে। এমনকি প্রচ্ছন্ন হুমকি দিয়ে বেইজিং তাইওয়ানের ভোটারদের এটাও বলেছে, তারা যেনো ‘যুদ্ধ ও শান্তির মধ্যে একটিকে বেছে নেয়’।
বহুদিন ধরে কর্তৃত্ববাদী শাসন ও সামরিক আইন চলার পর ১৯৯৬ সাল থেকে তাইওয়ানে সরাসরি নির্বাচনের মধ্যমে প্রেসিডেন্ট বেছে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়। তারপর থেকে তাইওয়ানে গণতান্ত্রিক নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তনের ধারা অব্যাহত আছে।
এবারের নির্বাচনে ভোট গ্রহণ শেষ হয় শনিবার স্থানীয় সময় বিকাল ৪টায়। তারপর শুরু হয় ভোট গণনার কাজ। এবার লাইয়ের দুই প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন তাইওয়ানের প্রধান বিরোধীদল কুয়োমিনটাং (কেএমটি) এর প্রার্থী হু যু-ই, অপরজন অপেক্ষাকৃত নবীন দল তাইওয়ান পিপলস পার্টির (টিপিপি) প্রার্থী রাজধানী তাইপের সাবেক মেয়র কো ওয়েন-জে। দলটি ২০১৯ সালে গঠিত হয়।
উভয় প্রার্থী নিজেদের পরাজয় স্বীকার করে নিয়েছেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
লাই চিং-তে যিনি উইলিয়াম লাই নামেও পরিচিত। ভোটে জয় নিশ্চিত হওয়ার পর বিজয় ভাষণে তিনি বলেন, “তাইওয়ানের জনগণকে ধন্যবাদ। আমরা ইতিহাস তৈরি করেছি। বিশ্ব দেখতে থাকবে।
“তাইওয়ান, এগিয়ে যাও।”
তবে উইলয়াম লাই জিতলেও শনিবারের ভোটে পার্লামেন্টে কোনো দল একক সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজনীয় ৫৭ আসন জিততে পারেনি। তাইওয়ানের পার্লামেন্টে আসন সংখ্যা ১১৩।
প্রধান বিরোধীদল কেএমটি সবচেয়ে বেশে ৫২টি আসনে পেয়েছে। একটি আসন কম পেয়েছে লাই এর দল ডিপিপি। ২০১৬ সাল থেকে ডিপিপি পার্লামেন্টে একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল ছিল। টিপিপি জিতেছে আটটি আসন। বাকি দুই আসনে পেয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে উইলিয়াম লাই ৪০ শতাংশের কিছু বেশি ভোট পেয়ে জয়লাভ করেছেন। কিন্তু যেহেতু তার দল পার্লামেন্টে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি, এমনকি সবচেয়ে বেশি আসনও তাদের নয় তাই প্রেসিডেন্ট হিসেবে লাই এর নতুন যাত্রা খুব বেশি সুখকর হবে না বলে মনে করেন রাজনীতি বিশেষজ্ঞরা।
সেই সঙ্গে সাই গত আট বছর যেভাবে তাইওয়ানকে মূলভূখণ্ড চীন থেকে আলাদা রাখার নীতিতে সফল হয়েছেন লাইকেও সেই সাফল্যের ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। তরুণ ভোটারদের দাবি-দাওয়ার বিষয়টিও তাকে মাথায় রাখতে হবে।