কৃষ্ণাঙ্গ হত্যায় উত্তাল যুক্তরাষ্ট্রে কারফিউ ভেঙে বিক্ষোভ

পুলিশ কর্মকর্তার নিপীড়নে কৃষ্ণাঙ্গ মৃত্যুর ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বিক্ষোভের আগুন জ্বলে উঠেছে। বিভিন্ন শহরে কারফিউ জারি করেও দমানো যায়নি বিক্ষোভকারীদের।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 May 2020, 02:09 PM
Updated : 31 May 2020, 06:07 PM

বহু জায়গায় কারফিউ ভেঙে বিক্ষোভ হয়েছে। চলেছে লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, পোড়ানো হয়েছে গাড়ি। পরিস্থিতি সামাল দিতে কয়েকটি রাজ্যে ন্যাশনাল গার্ড সেনা নামাতে হয়েছে।

১৬ টি রাজ্যের অন্তত ২৫ টি শহরে কারফিউ জারি থাকার পরও শনিবার রাতে এমনকী রোববার দিনের শুরুতেও ব্যাপক বিক্ষোভে পরিস্থিতি ছিল অশান্ত। চার পুলিশের বিরুদ্ধে খুনের মামলা দায়ের ও গ্রেপ্তারের দাবি তুলেছে বিক্ষোভকারীরা।

পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভ-সংঘর্ষে তিনজন গুলিবিদ্ধ এবং একজন নিহত হওয়া ছাড়াও শত শত বিক্ষোভকারী আটক হয়েছে। পরিস্থিতি এখনও উত্তপ্ত বলে জানিয়েছে সিএনএন।

শনিবার রাতের বিক্ষোভে ইন্ডিয়ানাপোলিস শহরতলীতে কমপক্ষে তিনজন গুলিবিদ্ধ এবং একজন নিহত হয় বলে প্রেস কনফারেন্সে জানিয়েছেন পুলিশ প্রধান রান্ডার টেলর। সংঘর্ষে আহত হয়েছে পুলিশও।

আটলান্টায় পুলিশ শনিবার রাতে ৭০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। সিয়াটলে আটক হয়েছে ২৭ জন। যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে অন্তত ৩০ টি শহরে বিক্ষোভ চলছে। বিক্ষোভ মোকাবেলায় ওয়াশিংটন ডিসি এবং ১৫ টি রাজ্যে সক্রিয় রয়েছে ৫ হাজার ন্যাশনাল গার্ড সদস্য।

মিনিয়াপোলিসে জালিয়াতির অভিযোগে ৪৬ বছর বয়সী কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েডকে পুলিশ হাতকড়া পরিয়ে গলায় হাঁটু দিয়ে চেপে রাখার পর শ্বাসরোধ হয়ে তার মৃত্যু হয়। ঘটনার মোবাইল ফুটেজ সামনে আসার পরই জড়িত চার পুলিশকে বরখাস্ত করা হলেও প্রতিবাদের আগুন নেভেনি।

পুলিশের অত্যাচার নিয়ে সরব হয়েছে মানুষ। গত সোমবার সন্ধ্যায় মিনিয়াপোলিসে ওই ঘটনার পর মঙ্গলবার বিকাল থেকে শুরু হওয়া বিক্ষোভ ক্রমেই বাড়ছে।শনিবার প্রথমদিকে বিক্ষোভ শান্তিপূর্ণ থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা সহিংস রূপ নেয়।

কেমন যাচ্ছে চলমান পরিস্থিতি?

লস অ্যাঞ্জেলেসে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউসম শহরে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন। প্রস্তত রাখা হয়েছে ন্যাশনাল গার্ডও। শহরটিতে জারি থাকা কারফিউয়ের মধ্যেও দোকানে লুটপাট, জ্বালাও-পোড়াও হয়েছে। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়েছে। গ্রেফতারও হয়েছে অনেকে।

নিউ ইয়র্ক:  শহরটিতে কমপক্ষে ২০ টি গাড়ি পুড়িয়েছে বিক্ষোভকারীরা। গ্রেপ্তর হয়েছে কয়েক ডজন মানুষ। বিক্ষোভকারীদের ভিড়ের মধ্যে সেখানে একটি পুলিশের গাড়ির ঢুকে পড়তে দেখা গেছে ভিডিও ফুটেজে।

শিকাগো:  এ শহরে জারি থাকা কারফিউ ভঙ্গ করে কয়েকটি জায়গায় বিক্ষোভকারীরা পুলিশের সঙ্গে মারমুখি আচরণ করেছে।

আটলান্টা: কারফিউ জারির পরও রাস্তায় রাস্তায় বিক্ষোভকারীদের সরব উপস্থিতি দেখা গেছে। তারা বিভিন্ন ভবনে আগুন দেওয়াসহ গাড়ি ভাঙচুর করেছে।

মিনিয়াপোলিস: জর্জ ফ্লয়েডের এই মৃত্যুস্থানে শনিবার অপেক্ষাকৃত সহিংসতা কম হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সেখানে পুলিশের সঙ্গে নিয়োজিত রয়েছে ৭শ ন্যাশনাল গার্ড কর্মকর্তাও। কারফিউ বজায় রাখতে তারা দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে মিনিয়াপোলিস এবং তৎসংলগ্ন সেন্ট পল শহরে গত কয়েকদিনে ব্যাপক লুটপাট এবং জ্বালাও-পোড়াও হয়েছে। পরিস্থিতি সামলাতে সেখানে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর প্রথম পুরো ন্যাশনাল গার্ড বাহিনী মোতায়েন করতে হয়েছে বলে জানিয়েছেন মিনেসোটার গভর্নর।

ওয়াশিংটন ডিসি: শহরটিতে হোয়াইট হাউজের সামনে মোতায়েন ন্যাশনাল গার্ড সেনাদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভকারীরা জড়ো হয়ে স্লোগান দিয়ে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ করেছে।

ইন্ডিয়ানাপোলিস: শহরটিতে দিনে বিক্ষোভ শান্তিপূর্ণ থাকলেও পরে তা সহিংসতায় রূপ নেয়। বিক্ষোভে গুলিতে অন্তত একজন মারা গেছে।

ফিলাডেলফিয়া:  কারফিউয়ের মধ্যেও শহরটিতে সহিংসতায় ১৩ পুলিশ কর্মকর্তা আহত হয়েছে। দোকানে লুটপাট হয়েছে, পুলিশের গাড়িতে আগুন দেওয়াসহ ভবন ভাঙচুর করেছে বিক্ষুব্ধরা। গ্রেপ্তার হয়েছে অন্তত ৩৫ জন।

অন্যান্য শহরের মধ্যে কারফিউ ঘোষণা করা হয়েছিল মিয়ামি, পোর্টল্যান্ড এবং লুইসভিলে। সানফ্রান্সিকোতেও পরিস্থিতি অশান্ত হয়ে ওঠার পর কারফিউ জারি হয়।

তবে বিভিন্ন স্থানে সহিংসতা হলেও কোথাও কাথাও সংহতির দৃশ্যও দেখা গেছে। মিশিগানে ফ্লিন্ট শহরের শেরিফ বিক্ষোভ কঠোর হাতে দমনের পথে না গিয়ে বরং বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সামিল হয়েছেন।

জর্জ ফ্লয়েডের পরিবারের এক আইনজীবী ‘পূর্বপরিকল্পিতভাবে ফ্লয়েডকে খুন করা হয়েছে’ বলে পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন।

ওদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, “ফ্লয়েডের মৃত্যুতে আমেরিকানরা আতঙ্কিত হয়েছে, দুঃখে কাতর হয়েছে, ক্ষুব্ধ হয়েছে। শান্তিকামী প্রতিটি আমেরিকানের পাশে আমি বন্ধুর মতই রয়েছি।”

তবে বিষয়টি নিয়ে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের নামে চলতে থাকা লাগাতার ‘বিশৃঙ্খলা সহ্য করা হবে না’ বলেও স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন ট্রাম্প।