চীনের পার্লামেন্টে হংকং নিরাপত্তা আইনের প্রস্তাব পাস

স্বায়ত্তশাসিত নগর হংকংয়ে সরাসরি জাতীয় নিরাপত্তা আইন জারি করার প্রস্তাব অনুমোদন করেছে চীনের পার্লামেন্ট।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 May 2020, 09:22 AM
Updated : 30 June 2020, 01:59 PM

বৃহস্পতিবার চীনের ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেসের দুই হাজার ৮৭৮ জন প্রতিনিধি স্ট্যান্ডিং কমিটির আনা খসড়া বিলের পক্ষে ভোট দেন বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।

বিলটির বিপক্ষে একটি ভোট পড়ার পাশাপাশি ৬ জন প্রতিনিধি ভোটদানে বিরত ছিলেন।

চীন বলছে, গত বছর টানা কয়েকমাস ধরে সরকারবিরোধী আন্দোলন ও সহিংসতা দেখা হংকংয়ে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন, বৈধ সরকারকে উৎখাতের চেষ্টা, সন্ত্রাসবাদ ও বিদেশি হস্তক্ষেপ রুখতে এ নিরাপত্তা আইন জরুরি হয়ে পড়েছিল।

অন্যদিকে সমালোচকরা বলছেন, গণতন্ত্রপন্থি আন্দোলনকারীদের কণ্ঠরোধ করতেই বেইজিং এখন এ ধরনের নিপীড়ণমূলক আইন চাপিয়ে দেয়ার পথ বেছে নিয়েছে।

বৃহস্পতিবার বেইজিংয়ের গ্রেট হল অব দ্য পিপলের স্ক্রিনে ভোটের ফলাফল দেখানোর সময় এ নিরাপত্তা আইনের সমর্থকদের উল্লাস ও হর্ষধ্বনি শোনা গেছে।

হংকংয়ের ‘বেসিক ল’ অর্থাৎ, মিনি সংবিধানের আর্টিকেল ২৩ অনুযায়ী, চীন সরকারের বিরুদ্ধে কোনোরকম বিদ্রোহ প্রতিহত করতে এই জাতীয় নিরাপত্তা আইন চালুর বিধান আছে।

কিন্তু এতে মানবাধিকার এবং বাক স্বাধীনতার মতো অধিকারগুলো ক্ষুণ্ণ হওয়ার আশঙ্কার কারণে এ আইন সেখানে কখনো বাস্তবায়ন করা হয়নি।

হংকং সরকার এর আগে ২০০৩ সালে আইনটি চালু করতে গিয়ে বাধার মুখে পড়েছিল। রাস্তায় ৫ লাখ লোকের প্রতিবাদের পর ওই উদ্যোগ আর নেওয়া হয়নি।

নতুন করে আইনটি চাপিয়ে দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হলে গত সপ্তাহ থেকেই ফের উত্তাল হয়ে ওঠে হংকং। হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। সেসব বিক্ষোভ থেকে এরই মধ্যে কয়েকশ ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে।

হংকংয়ে নিরাপত্তা আইন কার্যকরে বেইজিংয়ের এ চেষ্টার বিরোধিতা করছে যুক্তরাষ্ট্র।

বুধবার দেশটির কংগ্রেসে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও বলেছেন, চীন হংকংয়ের স্বাধীনতা ও স্বায়ত্তশাসন খর্বের চেষ্টা চালিয়ে যাওয়ায় শহরটি আর যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ মর্যাদা পাওয়ার যোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে না।

পম্পেওর সনদপত্র না পাওয়ায়, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প এখন হংকংকে এতদিন ধরে দেওয়া বিশেষ মর্যাদা বাতিল এবং এ সংক্রান্ত সব কিংবা কিছু কিছু সুবিধা বাতিল করতে যাচ্ছেন বলে মার্কিন কর্মকর্তারা ইঙ্গিত দিয়েছেন।

মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস ও বাণিজ্যঘাটতি নিয়ে ইতোমধ্যেই চীন-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক নাজুক হয়ে আছে। এ পরিস্থিতিতে চীনের কর্মকর্তাদের উপর নিষেধাজ্ঞার বিষয়টিসহ অনেকগুলো বিকল্প ট্রাম্প বিবেচনা করে দেখছেন বলে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পূর্ব এশিয়া বিষয়ক সহকারী মন্ত্রী ডেভিড স্টিলওয়েল জানিয়েছেন।

কয়েকদিনের মধ্যে ওয়াশিংটন চীনের নিরাপত্তা আইন চালুর পদক্ষেপের  বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে বলে মঙ্গলবার ট্রাম্প নিজেই জানিয়েছিলেন।

“এ পরিস্থিতির উপর ভিত্তি করে কোনো ন্যায়পরায়ণ মানুষই আজ জোর দিয়ে বলতে পারবেন না যে হংকং চীনের কাছ থেকে উচ্চ মাত্রার স্বায়ত্তশাসন সুবিধা ভোগ করে আসছে। এটা এখন স্পষ্ট যে, চীন হংকংকে নিজেদের মতোই বানাতে চাইছে,” বুধবার কংগ্রেসে পম্পেও এমনটাই বলেছেন।

যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য এবং আরও কিছু দেশ হংকং নিরাপত্তা আইন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স।

পম্পেওর মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ওয়াশিংটনের চীন দূতাবাস এ বিষয়ে বেইজিং ও হংকংয়ের বেইজিংসমর্থিত সরকারের মতোই নিরাপত্তা আইনটি হংকংয়ের স্বায়ত্তশাসনকে হুমকিতে ফেলবে না বলে আশ্বস্ত করেছে।

“হংকংয়ের বিষয়ে বিদেশি রাষ্ট্রগুলো হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা করলে, আমরাও পাল্টা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবো,” বলেছে তারা।