তহবিলের সঙ্গে আশাও দিলেন ৯৯ বছরের ‘যোদ্ধা’ টম

বয়স একটি সংখ্যা ছাড়া কিছুই নয়, আজকাল হরহামেশাই কথাটি শোনা যায়। তবে করোনাভাইরাসের সাথে বিশ্ব যখন অকল্পনীয় এক যুদ্ধে অবতীর্ণ, তখন সেটা নতুন করে দেখালেন প্রবীণ এক ব্রিটিশ সেনা।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 April 2020, 10:21 AM
Updated : 17 April 2020, 03:49 PM

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ভারত, বার্মা (এখনকার মিয়ানমার) আর সুমাত্রায় দায়িত্ব পালন করা ক্যাপ্টেন টম মুর বয়সকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে সেঞ্চুরির দ্বারপ্রান্তে। এমন সময়ই করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে আরেকবার লড়াইয়ে নেমে দেখিয়ে দিলেন বয়স আসলে কিছুই না।

ক্যাপ্টেন মুর ঘোষণা দিয়েছিলেন শততম জন্মদিনের (৩০ এপ্রিল) আগে তার বাগানের ২৫ মিটার জুড়ে ১০০টি পাক দেবেন হেঁটে। উদ্দেশ্য হল- ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়তে ব্রিটেনের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের ‘চ্যারিটিজ টুগেদার’ এর জন্য ১০০০ পাউন্ডের তহবিল জোগাড় করা।

কিন্তু নিতম্বের হাড় ভেঙে যাওয়ার পর থেকে যা তার নিত্যদিনের সঙ্গী, সেই চাকাযুক্ত ক্র্যাচে ভর করে শততম চক্কর শেষ করার আগেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে যান টম। তহবিল গঠনের জন্য ‘জাস্টগিভিং’ ওয়েবসাইটে খোলা তার পেইজে ততক্ষণে অনুদান দিয়ে ফেলেন আট লাখ মানুষ; জমা হয় এক কোটি ২০ লাখ পাউন্ড।

এরপরও থেমে থাকেনি। ওইদিন বিকাল নাগাদ তহবিলে জমা হয় এক কোটি ৫০ লাখ পাউন্ড। আর শুক্রবার সকালে অনুদান এক কোটি ৭০ লাখ পাউন্ড ছাড়িয়ে যায়।

গত সপ্তাহেই ‘জাস্টগিভিং’ সাইটে খোলা হয়েছিল পেইজটি।

টম মুরের তহবিলে ডিউক অব ক্যামব্রিজও অংশ নিয়েছেন। তবে তিনি কত অর্থ দিয়েছেন তা জানা যায়নি। ডিউক অব কেমব্রিজ অভিনন্দন বার্তাও পাঠিয়েছেন প্রবীণ এই সেনাকে।

মানুষের এমন অভাবনীয় সাড়ায় উচ্ছ্বসিত ক্যাপ্টেন টম বিবিসিকে বলেন, “আমি দারুণ আছি! আশা করি সবাই ভালো থাকবে। আমি কখনও স্বপ্নেও ভাবিনি এমন কাজে নিজেকে যুক্ত করতে পারব!”

করোনাভাইরাসের কারণে অবরুদ্ধ পরিস্থিতির সাথে লড়াইরত ব্রিটেনবাসীর জন্য আশার বাণীও শুনিয়েছেন তিনি।

“এটা শেষ হবে, সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে, এটা নিশ্চয়ই সবাই জানেন। যারা এখন এই বিষয়টিকে কঠিন ভাবছেন, তাদেরকে বলছি- সূর্য’র আলো এসে মেঘ সরিয়ে দেবেই।”

বাবাকে ‘অন্ধকার এই সময়ে আশার বাতিঘর’ হিসেবে উল্লেখ করে ক্যাপ্টেন টমের মেয়ে হানাহ ইনগ্রাম-মুর বলেন, “লক্ষ্যের চেয়েও বেশি অর্জিত হয়েছে, কিন্তু আমরা খুবই খুশি, খুবই কৃতজ্ঞ এবং গর্বিত।”

নাতনি জর্জিয়াও তার দাদার জন্য গর্বিত বলে জানিয়েছেন। 

রাজনীতিক, সেলিব্রেটি আর ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের কর্মীদের প্রশংসায়ও ভাসছেন শতবর্ষে পা রাখতে চলা টম মুর। এমনকি তাকে নাইট খেতাব দেওয়ার এক আবদনে এরই মধ্যে তিন লাখ মানুষের স্বাক্ষর জমা পড়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনও তাকে সম্মান জানানোর চিন্তা করছেন বলে জানিয়েছে ডাউনিং স্ট্রিট।

তবে বিনয়ী টমের মতে, এমন সম্মান পাওয়াটা চমৎকার বিষয় হলেও, এমন কিছু হোক তিনি সেটা চান না।

টমকে অভিনন্দন জানানোর তালিকায় আছে চ্যান্সেলর রিশি সুনাক, ইয়র্কশায়ার রেজিমেন্টের কর্নেল অ্যান্ড্রু জ্যাকসন, নামকরা বিচারক জুডি শিন্ডলিন এবং সাবেক ফর্মুলা ওয়ান চ্যাম্পিয়ন ড্যামন হিল। অভিনেতা, কণ্ঠশিল্পী মাইকেল বলের বিশেষ শুভেচ্ছাবার্তাও পেয়েছেন ক্যাপ্টেন টম।

তার অর্জনকে ‘অসাধারণ’ হিসেবে বর্ণনা করার পাশাপাশি টমের প্রতি সম্মান জানিয়ে মাইকেল বল বিবিসি ব্রেকফাস্ট অনুষ্ঠানে সরাসরি গেয়ে শোনান ‘ইউ উইল নেভার ওয়াক অ্যালোন’ শিরোনামের একটি গান।

স্বাস্থ্য সেবায় যুক্ত বিভিন্ন দাতব্য সংস্থাকে সহায়তা দেওয়া ব্রিটেনের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের ‘চ্যারিটিজ টুগেদার’ ক্যাপ্টেন টমের এই তহবিলের সুবিধা পাবে।

এর চেয়ারম্যান ইয়ান লাস জানিয়েছেন, অন্তত ১৫০ দাতব্য সংস্থাকে এই তহবিল থেকে অর্থ দেওয়া সম্ভব হবে।

জাস্টগিভিং’র পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তাদের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে একক কোনো উদ্যোগে সংগ্রহ করা তহবিলের মধ্যে এটাই এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড়।

ক্যাপ্টেন টমের তহবিলে তারাও এক লাখ পাউন্ড দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।