লকডাউনে আটকে ছেলে, স্কুটার চালিয়ে নিয়ে এলেন মা

করোনাভাইরাস ঠেকাতে চলছে লকডাউন, বন্ধ যানবাহন। এ অবস্থায় সন্তানের বিপদে চুপ করে বসে থাকতে পারেননি মা। তাই তিনদিন ধরে স্কুটারে ১৪শ’ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে আরেক রাজ্যে আটকে পড়া ছেলেকে বাড়ি ফিরিয়ে এনেছেন তিনি।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 April 2020, 11:06 AM
Updated : 10 April 2020, 01:48 PM

ঘটনাটি ভারতের তেলেঙ্গানার।সেখান থেকেই দুই চাকার স্কুটি চালিয়ে গিয়ে পাশের রাজ্য অন্ধ্রপ্রদেশের নেল্লোর থেকে ছেলেকে উদ্ধার করেন মা।পুলিশের অনুমতি নিয়ে গত সোমবার সকালে শুরু হয় তার যাত্রা।

৭শ’ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে মঙ্গলবার দুপুরে তিনি পৌঁছান নেল্লোরে। তারপর সেখান থেকে তার ১৭ বছরের ছেলে মোহাম্মদ নিজামুদ্দিনকে নিয়ে আবার ৭শ’ কিলোমিটার স্কুটার চালিয়ে যখন ফেরেন, তখন বুধবার সন্ধ্যা।

৫০ বছরের সাহসী এই নারীর নাম রাজিয়া বেগম। নিজামাবাদের বোধানে একটি সরকারি স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা তিনি। ১২ বছর আগেই স্বামীকে হারিয়েছেন। সংসার বলতে এক ছেলে আর এক মেয়ে। ছেলে নিজামুদ্দিন ডাক্তারি প্রবেশিকার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

‘হিন্দুস্তান টাইমস’ পত্রিকা জানায়, ১২ মার্চ বন্ধুর সঙ্গে নেল্লোরের রহমতাবাদ গিয়েছিলেন নিজামুদ্দিন।এর মধ্যেই শুরু হয় ২১ দিনের লকডাউন। নিজামুদ্দিন আটকা পড়েন নেল্লোরেই।

বেশ কয়েকদিন ছেলের সঙ্গে যোগাযোগ হয়নি মায়ের। পরে তিনি জানতে পারেন ছেলে তার বন্ধুর বাড়িতে আছে।যেভাবেই হোক সে বাড়ি ফিরতে চায়।এরপরই রাজিয়া ছেলেকে ফিরিয়ে আনবেন বলে ঠিক করেন।

পুলিশ রাজিয়াকে লকডাউনের মধ্যেও যাত্রা করার লিখিত অনুমতি দেয় এবং অন্ধ্রপ্রদেশেও তাকে ঢুকতে দেওয়ার আবেদন জানায় একটি চিঠি দিয়ে।

এরপর সুনসান নীরবতা আর নির্জন পথঘাট কীভবে পাড়ি দিলেন সে অভিজ্ঞতা বর্ণনায় রাজিয়া বলেন, “আমি অবিরাম ফাঁকা রাস্তায় স্কুটি চালিয়েছি। গ্রামের ধূলোমাখা পথ পেরিয়ে গেছি।ভয় পাইনি।”

“পুলিশ আমাকে জায়গায় জায়গায় থামিয়েছে। কিন্তু পুলিশের চিঠি দেখানোর পর তারা আমাকে ছেড়ে দিয়েছে। পুলিশ আমাকে সহযোগিতা করেছে। আমি যাতে ক্লান্ত হয়ে না পড়ি সেজন্য দু’ঘন্টা পরপর বিরতি নেওয়ার পরামর্শও দিয়েছে।”

কয়েকটা রুটি সঙ্গে নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন রাজিয়া। রাতে গা ছমছমে পরিবেশ; নেই কোনও গাড়িঘোড়া, ধুধু রাস্তায় মানুষের দেখা নেই। তারপরও থামেননি তিনি। নেল্লোরে পৌঁছেও এক মুহূর্ত দেরি করেননি রাজিয়া। সঙ্গে সঙ্গেই ছেলেকে নিয়ে ফিরতি পথ ধরেন।

অবশেষে পৌঁছান বোধানে। “ছেলেকে দেখার প্রবল ইচ্ছাই আমাকে এ শক্তি জুগিয়েছে”, বলেন রাজিয়া।