করোনাভাইরাস: মোদী ডাকলেন ‘জনতা কারফিউ’

ভারতে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকায় দেশজুড়ে উদ্বেগের প্রেক্ষাপটে জাতির উদ্দেশে ভাষণে আগামী ২২ মার্চ রোববার সকাল ৭ টা থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত জনতা কারফিউ পালনের ডাক দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 March 2020, 03:07 PM
Updated : 20 March 2020, 01:41 PM

এ সময় কাউকে ঘরের বাইরে না বেরনোর আর্জি জানিয়েছেন তিনি। বলেছেন, “ধৈর্য্য ধরুন, সজাগ থাকুন, সচেতন থাকুন”।

৬০-৬৫ বছর বয়সীদেরও ঘর থেকে না বেরোনোর আবেদন জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। দেশবাসীকে তিনি বলেন, “আগামী কয়েক সপ্তাহ খুব প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে যাবেন না। আমাকে কয়েক সপ্তাহ সময় দিন।”

ভারতে করোনাভাইরাস আক্রান্ত হয়ে চার জনের মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার ৭০ বছরের এক বৃদ্ধ মারা গেছেন পঞ্জাবে। এ ছাড়া দেশজুড়ে মোট আক্রান্ত হয়েছেন ১৭৩ জন। প্রতিদিনই আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে।

এমন পরিস্থিতিতেই জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিলেন প্রধানমন্ত্রী। করোনাভাইরাস মোকাবেলায় সরকারের পক্ষ থেকে নতুন কোনও পদক্ষেপের কথা প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেন কি না, তা জানার জন্য মুখিয়ে ছিল ভারতবাসী।

ভাষণে মোদী বলেছেন, “একজোট হয়ে এর বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে। মানব সভ্যতা এখন সংকটে। প্রথম এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের থেকেও দেশ অনেক বেশি করোনাভাইরাসের গ্রাসে পড়েছে। দু’টি বিশ্বযুদ্ধেও এত দেশ জড়িয়ে পড়েনি। বিশ্বযুদ্ধের চেয়েও ভয়াবহ পরিস্থিতি । গভীর সঙ্কটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে গোটা দেশ।”

“আজ আমাদের প্রতিজ্ঞা করতে হবে, আমরা নিজেরা সংক্রামণ থেকে বাঁচব, অন্যদেরও বাঁচাব। এর জন্য দেশবাসীর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ”

“বহু মানুষকে আইসোলেশনে রেখে পরিস্থিতির মোকাবেলা করা হচ্ছে। আমাদের সবার উচিত সতর্ক থাকা, আপনারা এ দিক সে দিক ঘুরে বেড়াবেন, আর করোনা থেকে বাঁচবেন, এটি সম্ভব নয়।”

“আপনাদের আগামী কয়েক সপ্তাহ আমি চাই। আজ ১৩০ কোটি দেশবাসীর কাছে কিছু চাইতে এসেছি। আপনাদের কাছে যখনই কিছু চেয়েছি, আপনারা নিরাশ করেননি। ফলে দেশবাসীর সজাগ ও সতর্ক থাকা প্রয়োজন।” আগামী শুক্র ও শনিবার এ নিয়ে প্রচারও চালাতে বললেন মোদী।

ভারতবাসীকে আরো যেসব বার্তা দিয়েছেন মোদী:

·       অন্যের সেবা যারা করছেন তাদের জন্য রোববার বিকাল ৫ টায় ৫ মিনিট হাততালি, থালা, ঘণ্টা বাজিয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছেন মোদী।

·       রুটিন চেকআপের জন্য হাসপাতালে যেতেও তিনি মানা করেছেন। যে সমস্ত সার্জারি একান্ত জরুরি নয়, সেগুলোর তারিখ পিছিয়ে দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

·       অর্থনীতিতে করোনাভাইরাসের ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, পরিস্থিতি সামলাতে অর্থমন্ত্রীর নেতৃত্বে কোভিড-১৯ ইকনোমিক টাস্ক ফোর্স তৈরি হচ্ছে। তারা গোটা পরিস্থিতির ওপর নজর রেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।

·       ব্যবসায়িক মহল এবং উচ্চবিত্ত শ্রেণির কাছে অন্যদের বেতন না কাটার আহ্বান জানিয়েছেন মোদী।

·       জনগণ যেন হুজুগে পড়ে আতঙ্কে কেনাকাটা না করেন সে ব্যাপারে সতর্ক করে মোদী বলেছেন, বাজারে যথেষ্ট যোগান আছে।

·       তিনি বলেন, অহেতুক আতঙ্ক এবং গুজব থেকে বাঁচুন।

আগামী সপ্তাহে জারি থাকছে আরো কিছু সতর্কতা:

·       ২২ মার্চ থেকে এক সপ্তাহের জন্য ভারতের মাটিতে অবতরণ করতে পারবে না কোনও আন্তর্জাতিক যাত্রীবাহী বাণিজ্যিক বিমান।

·       ৬৫ বছরের উর্ধ্বে সব নাগরিককে (চিকিৎসা কর্মী/জনপ্রতিনিধি/সরকারি কর্মচারি/চিকিৎসা পেশায় নিয়োজিতরা ছাড়া) ঘরে থাকতে বলা হয়েছে।

·       ১০ বছরের কম বয়সী শিশুদের বাড়িতে থাকতে বলা হয়েছে। তাদেরকে বাইরে ঘোরাঘুরিও করতে দেওয়া যাবে না।

·       শিক্ষার্থী, রোগী এবং বিশেষভাবে অক্ষম ছাড়া বাকি সবার ভ্রমণে ছাড় স্থগিত করতে বলা হয়েছে রেল এবং বিমানকে।

·       রাজ্যগুলোকে বেসরকারি খাতের কর্মীদের (জরুরি সেবা কর্মী ছাড়া) বাড়ি থেকেই কাজ করে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে।

·       কর্মক্ষেত্রে একসঙ্গে বেশি মানুষের উপস্থিতি এড়াতে কেন্দ্রীয় সরকারের সব গ্রুপ বি এবং সি কর্মীদের সময় এবং দিন পাল্টাপাল্টি করে অফিসে কাজ করতে বলা হচ্ছে।