হংকংয়ে চীনবিরোধী বিক্ষোভ চলছেই

বিতর্কিত প্রত্যর্পণ বিল নিয়ে উত্তাল হংকং পরিস্থিতি শান্ত হওয়ার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। রোববারও রাস্তায় রাস্তায় স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ করেছে হাজার হাজার মানুষ।

>>রয়টার্স
Published : 14 July 2019, 03:56 PM
Updated : 14 July 2019, 04:28 PM

চীনের কাছে অপরাধী প্রত্যর্পণ বিলকে কেন্দ্র করে গত মাস থেকেই অশান্ত হংকং পরিস্থিতি। বিক্ষোভকারীরা এ বিলকে তাদের স্বাধীনতা পরিপন্থি বলেই মনে করছে।

প্রস্তাবিত এ বিলের কার্যক্রম স্থগিত, হংকংয়ের প্রধান নির্বাহী ক্যারি লামের ক্ষমা প্রর্থনা এবং বিলটিকে ‘মৃত’ ঘোষণা করে তার মেয়াদে ওই বিল নিয়ে কাজ না করার প্রতিশ্রুতি; কোনো কিছুই বিক্ষোভকারীদের মন গলাতে পারছে না।

বিরোধীদল এবং বিক্ষোভকারীরা প্রত্যর্পণ বিল সম্পূর্ণ বাতিলের দাবি করছেন। গতমাসে সন্দেহভাজন অপরাধীদের চীনের মূলভূখণ্ডে পাঠানোর সুযোগ রেখে হংকং সরকার প্রত্যর্পণ বিল প্রস্তাব করে তা পাসের উদ্যোগও নিয়েছিল।

বিলটি প্রস্তাবের পরপরই তা বাতিলের দাবিতে হাজার হাজার মানুষ হংকংয়ের সড়কে নেমে বিক্ষোভ শুরু করে। যা গত কয়েক দশকের ইতিহাসে হংকংয়ে সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ-সহিংসতায় রূপ নেয়। পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে।

আন্দোলনের তীব্রতা কমার বদলে দিন দিন বাড়ছে। রোববার হংকং দ্বীপ ও চীন সীমান্তের মাঝখানে অবস্থিত হংকংয়ের শহর শা থিনে ঘাম ঝরানো ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার মধ্যে হাজার হাজার বিক্ষোভকারী বিভিন্ন সড়ক দখল করে বিক্ষোভ শুরু করে। চীনা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ওপরও চড়াও হয় বিক্ষুব্ধরা। পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে।

বিক্ষোভে যোগ দেওয়া ৭৩ বছরের জেনি কেওয়ান বলেন, “আজকের দিনে চীনের উপর সত্যি কোনো আস্থা নেই। তাই বিক্ষোভকারীরা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করছে।”

তিনি বলেন, “তারা কি ৫০ বছরের প্রতিশ্রুতি দেয়নি? কোনো পরিবর্তন নেই? আমরা পরিবর্তনটি দেখছি। আমার বয়স ৭০ বছরের বেশি। আমি রাজনীতি সম্পর্কে কী জানি? কিন্তু রাজনীতিই আমাদের কাছে এসেছে।”

এক সময়ের ব্রিটিশ উপনিবেশ হংকংকে ১৯৯৭ সাল চীনের কাছে হস্তান্তর করে যুক্তরাজ্য। ওই সময় চীনের কাছ থেকে বেশ কিছু ক্ষেত্রে নগরীটির স্বায়ত্ত্বশাসন থাকার প্রতিশ্রুতি আদায় করে নেওয়া হয়। হংকংয়ের জন্য চীন ‘এক দেশ, দুই ব্যবস্থাপনার’ নীতি মেনে চলছে।

এ নীতিতে হংকংয়ের বাসিন্দাদের ৫০ বছরের জন্য স্বাধীনতা ভোগ করতে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া আছে। কিন্তু চীন এ প্রতিশ্রুতি মানতে আগ্রহী নয়। তারা হংকংয়ের বাসিন্দাদের আন্দোলন করার স্বাধীনতা দিতে রাজি নয়, এমনকি বিচার বিভাগের স্বাধীনতাও দিতে রাজি নয়।

এ পরিস্থিতিতেই হংকং সরকার গুরুতর অপরাধের অভিযোগ থাকা ব্যক্তিদের চীন চাইলে বিচারের জন্য মূল ভূমিতে হস্তান্তর করার বিধান রেখে ওই বিল আনে।যাকে চীনের আধিপত্য বিস্তারের কৌশল হিসেবেই দেখছে হংকংবাসীরা। যদিও চীন হংকংয়ের বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

রোববারের বিক্ষোভে অনেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের কাছে সাহায্য কামনা করেছেন। তাদের হাতে ট্রাম্পকে উদ্দেশ্য করে লেখা ব্যানার ছিল। তাতে লেখা ছিল ‘দয়া করে হংকংকে স্বাধীন করুন’, ‘আমাদের সংবিধানকে রক্ষা করুন’।

ওয়াশিংটন এবং লন্ডন হংকংয়ের বিতর্কিত প্রত্যর্পণ বিলের সমালোচনা করেছে। যা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বেইজিং।