উত্তাল বিক্ষোভের মুখে ক্ষমা চাইলেন হংকংয়ের নেতা

হংকংয়ে লাখো মানুষের উত্তাল বিক্ষোভের মুখে ক্ষমা চাইলেন নেতা ক্যারি লাম। এর আগে লাম বিতর্কিত প্রত্যর্পণ বিল স্থগিতের ঘোষণা দিলেও বিক্ষোভকারীরা তা পুরোপুরি বাতিল করা এবং তার পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ অব্যাহত রাখে।

>>রয়টার্স
Published : 16 June 2019, 04:58 PM
Updated : 16 June 2019, 04:58 PM

রোববার লাখ লাখ বিক্ষোভকারী কালো পোশাক পরে রাস্তায় নেমে নেতা ক্যারি লামের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ করে এবং বিতর্কিত বিলও পুরোপুরি বাতিলের দাবি জানায়।

এ পরিস্থিতিতেই এক বিবৃতিতে হংকং-এর জনগণের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন ক্যারি লাম। সরকারের এক মুখপাত্র বলেছেন, বিলটি নিয়ে সরকারের কার্যক্রম সমাজে বিতর্ক এবং বিরোধ সৃষ্টি করেছে। এতে জনমনে হতাশা এবং ক্ষোভ জন্ম নিয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “লাম  হংকংয়ের জনগণের কাছে এর জন্য ক্ষমা চেয়েছেন। সমাজে সমালোচনাকে সৎসাহস ও বিনয়ী মনোভাব নিয়ে গ্রহণ করে নেওয়া এবং আরো ভালভাবে জনগণের সেবা করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন।”

বিচারের জন্য বাসিন্দাদের চীনের মূলভূখণ্ডে পাঠানোর সুযোগ রেখে হংকং সরকারের প্রত্যর্পণ বিল পাসের পরিকল্পনা নিয়ে গত সপ্তাহ থেকে হংকংয়ে কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ ও সহিংসতা দেখা দিয়েছে।

গণ আন্দোলনের মুখে হংকং সরকার ওই পরিকল্পনা স্থগিতের ঘোষণা দিলেও  প্রতিবাদকারীরা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তারা হংকংয়ের ওপর বেইজিংয়ের ক্রমবর্ধমান প্রভাব বিস্তারের চেষ্টায় উদ্বেগ জানিয়েছে।

রোববার বিক্ষোভকারীদের কারো কারো হাতে ‘গুলি করো না, আমরা হংকংয়ের নাগরিক’ লেখা ব্যানার দেখা গেছে। এশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ এই বাণিজ্য নগরীতে গত বুধবার বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ রাবার বুলিট ও টিয়ার গ্যাসের শেল ছোড়ে।

রোববার অনেকে পুরো পরিবার নিয়ে বিক্ষোভে অংশ নিয়েছে। এদিন সেন্ট্রাল হংকংয়ের সড়কগুলো যেনো কালো রঙের সমুদ্রে পরিণত হয়। তারা প্রধান নির্বাহী ক্যারি লামের বিরুদ্ধে তাদের হতাশা ও ক্ষোভ উগরে দেয়।

তারা ‘পদত্যাগ করো’ ‘পদত্যাগ করো’ বলে স্লোগান দেয়। কেউ কেউ বিক্ষোভকারীদের উপর দমন অভিযান চালানো পুলিশদের খুঁজে বের করে শাস্তির মুখোমুখি করার দাবি করছে। গত বুধবার পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে অন্তত ৭০ বিক্ষোভকারী আহত হন।

যুক্তরাজ্য ১৯৯৭ সালে চীনের কাছে হংকংকে হস্তান্তর করলেও, বেশ কিছু ক্ষেত্রে শহরটির স্বায়ত্তশাসনের প্রতিশ্রুতি আদায় করে নেয়। সাবেক এ ব্রিটিশ কলোনির কারণেই চীনকে ‘এক দেশ, দুই ব্যবস্থাপনার’ নীতিতে চলতে হচ্ছে।

বহিঃসমর্পণ নিয়ে প্রস্তাবিত যে বিলটির কারণে হংকং রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে তাতে  আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে ফৌজদারি অপরাধে অভিযুক্ত হংকংয়ের যে কোনো বাসিন্দাকে তাইওয়ান, ম্যাকাউ কিংবা চীনের মূলভূখণ্ডে পাঠানোর সুযোগ রাখা হয়েছে।

বেইজিংপন্থি হংকং সরকারের যুক্তি, বহিঃসমর্পণের সুযোগ না থাকায় হংকং চীনের অন্যান্য অংশের অপরাধীদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে।

মানবাধিকার লংঘন রুখতে ‘রক্ষাকবচ’ হিসেবে হংকংয়ের আদালতকেই মামলা ধরে ধরে বহিঃসমর্পণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেওয়ার এখতিয়ারও বিলে দেওয়া হয়েছে, ভাষ্য তাদের।

অন্যদিকে, একে ব্যবহার করে চীন হংকংয়ের গণতন্ত্রপন্থি রাজনীতিকদের ওপর দমনপীড়ন চালাতে পারে বলে আশঙ্কা সমালোচকদের।

আর বিরোধীদের আশঙ্কা, বিলটি কার্যকর হলে হংকংয়ের বেইজিংবিরোধী হিসেবে পরিচিতরা কমিউনিস্ট পার্টি নিয়ন্ত্রণাধীন চীনের বিচার ব্যবস্থার জালে আটকা পড়বেন।

বিলটি নিয়ে আপত্তি জানিয়ে গত রোববার শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী, ধর্মীয় সংগঠনের সদস্য, শিক্ষকসহ লাখো বাসিন্দা হংকংজুড়ে বিক্ষোভ শুরু করে।

দুইদিনের মাথায় গত মঙ্গলবার আইন পরিষদের বাইরে পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষও হয়। যে কারণে পরদিন বুধবার বিলটি নিয়ে আইন পরিষদে দ্বিতীয় দফা বিতর্কের কথা থাকলেও সরকার তা স্থগিত করতে বাধ্য হয়।

বিক্ষোভের কারণে হংকং কার্যত অচল হয়ে পড়ায় কর্তৃপক্ষ গত বৃহস্পতিবার আইন পরিষদ বন্ধ রাখে এবং সপ্তাহের বাকি দিনগুলোতে আরো বেশকিছু সরকারি দপ্তরও বন্ধ রাখা হয়।

শুরুতে নেতা ক্যারি লাম বিলটি নিয়ে অগ্রসর হওয়ার ব্যাপারে দৃঢ়তা দেখালেও পরে জ্যেষ্ঠ রাজনীতিক ও উপদেষ্টাদের সঙ্গে কথা বলে পিছু হটেন।

তিনি তার সরকারের প্রতি জনগণের ‘বিরতি দাও ও চিন্তা কর’ আহ্বানে সাড়া দিয়ে প্রস্তাবিত বিলটির কার্যক্রম স্থগিত রাখার ঘোষণা দেন।

“কাজের ঘাটতি ও বিতর্ক সৃষ্টি করা অন্যান্য বিষয়ের জন্য আমি গভীরভাবে দুঃখিত,” বলেন তিনি। বিলটির ব্যাখ্যা ও জনগণকে বোঝাতে তার সরকারের উদ্যোগ ‘যথেষ্ট’ ছিল না বলেও লাম স্বীকার করে নেন।