বিচারের জন্য বাসিন্দাদের চীনের মূলভূখণ্ডে পাঠানোর সুযোগ রেখে হংকং সরকারের প্রত্যর্পণ বিল পাসের পরিকল্পনা নিয়ে গত সপ্তাহ থেকে হংকংয়ে কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ ও সহিংসতা দেখা দিয়েছে।
গণ আন্দোলনের মুখে হংকং সরকার ওই পরিকল্পনা স্থগিতের ঘোষণা দিলেও প্রতিবাদকারীরা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তারা হংকংয়ের ওপর বেইজিংয়ের ক্রমবর্ধমান প্রভাব বিস্তারের চেষ্টায় উদ্বেগ জানিয়েছে।
রোববার বিক্ষোভকারীদের কারো কারো হাতে ‘গুলি করো না, আমরা হংকংয়ের নাগরিক’ লেখা ব্যানার দেখা গেছে। এশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ এই বাণিজ্য নগরীতে গত বুধবার বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ রাবার বুলিট ও টিয়ার গ্যাসের শেল ছোড়ে।
রোববার অনেকে পুরো পরিবার নিয়ে বিক্ষোভে অংশ নিয়েছে। এদিন সেন্ট্রাল হংকংয়ের সড়কগুলো যেনো কালো রঙের সমুদ্রে পরিণত হয়। তারা প্রধান নির্বাহী ক্যারি লামের বিরুদ্ধে তাদের হতাশা ও ক্ষোভ উগরে দিচ্ছে।
তারা ‘পদত্যাগ করো’ ‘পদত্যাগ করো’ বলে স্লোগান দিচ্ছে। কেউ কেউ বিক্ষোভকারীদের উপর দমন অভিযান চালানো পুলিশদের খুঁজে বের করে শাস্তির মুখোমুখি করার দাবি করছে। গত বুধবার পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে অন্তত ৭০ বিক্ষোভকারী আহত হয়েছেন।
যুক্তরাজ্য ১৯৯৭ সালে চীনের কাছে হংকংকে হস্তান্তর করলেও, বেশ কিছু ক্ষেত্রে শহরটির স্বায়ত্তশাসনের প্রতিশ্রুতি আদায় করে নেয়। সাবেক এ ব্রিটিশ কলোনির কারণেই চীনকে ‘এক দেশ, দুই ব্যবস্থাপনার’ নীতিতে চলতে হচ্ছে।
বহিঃসমর্পণ নিয়ে প্রস্তাবিত যে বিলটির কারণে হংকং রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে তাতে আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে ফৌজদারি অপরাধে অভিযুক্ত হংকংয়ের যে কোনো বাসিন্দাকে তাইওয়ান, ম্যাকাউ কিংবা চীনের মূলভূখণ্ডে পাঠানোর সুযোগ রাখা হয়েছে।
বেইজিংপন্থি হংকং সরকারের যুক্তি, বহিঃসমর্পণের সুযোগ না থাকায় হংকং চীনের অন্যান্য অংশের অপরাধীদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে।
মানবাধিকার লংঘন রুখতে ‘রক্ষাকবচ’ হিসেবে হংকংয়ের আদালতকেই মামলা ধরে ধরে বহিঃসমর্পণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেওয়ার এখতিয়ারও বিলে দেওয়া হয়েছে, ভাষ্য তাদের।
অন্যদিকে, একে ব্যবহার করে চীন হংকংয়ের গণতন্ত্রপন্থি রাজনীতিকদের ওপর দমনপীড়ন চালাতে পারে বলে আশঙ্কা সমালোচকদের।
বিলটি নিয়ে আপত্তি জানিয়ে গত রোববার শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী, ধর্মীয় সংগঠনের সদস্য, শিক্ষকসহ লাখো বাসিন্দা হংকংজুড়ে বিক্ষোভ শুরু করে।
দুইদিনের মাথায় গত মঙ্গলবার আইন পরিষদের বাইরে পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষও হয়। যে কারণে পরদিন বুধবার বিলটি নিয়ে আইন পরিষদে দ্বিতীয় দফা বিতর্কের কথা থাকলেও সরকার তা স্থগিত করতে বাধ্য হয়।
বিক্ষোভের কারণে হংকং কার্যত অচল হয়ে পড়ায় কর্তৃপক্ষ গত বৃহস্পতিবার আইন পরিষদ বন্ধ রাখে এবং সপ্তাহের বাকি দিনগুলোতে আরো বেশকিছু সরকারি দপ্তরও বন্ধ রাখা হয়।
শুরুতে নেতা ক্যারি লাম বিলটি নিয়ে অগ্রসর হওয়ার ব্যাপারে দৃঢ়তা দেখালেও পরে জ্যেষ্ঠ রাজনীতিক ও উপদেষ্টাদের সঙ্গে কথা বলে পিছু হটেন।
তিনি তার সরকারের প্রতি জনগণের ‘বিরতি দাও ও চিন্তা কর’ আহ্বানে সাড়া দিয়ে প্রস্তাবিত বিলটির কার্যক্রম স্থগিত রাখার ঘোষণা দেন।
“কাজের ঘাটতি ও বিতর্ক সৃষ্টি করা অন্যান্য বিষয়ের জন্য আমি গভীরভাবে দুঃখিত,” বলেন তিনি।
বিলটির ব্যাখ্যা ও জনগণকে বোঝাতে তার সরকারের উদ্যোগ ‘যথেষ্ট’ ছিল না বলেও লাম স্বীকার করে নেন।
আইন পরিষদে জুলাইয়ের আগে বিলটি পাসের যে তৎপরতা ছিল, ‘সম্ভবত তা এখন আর নেই’ বলেও আশ্বস্ত করেন এ শীর্ষ নির্বাহী।
তবে বিলটি স্থায়ীভাবে প্রত্যাহার করা হবে কি না, সে বিষয়ে কিছু বলেননি তিনি।
বিক্ষোভকারীরার এখন বিলটি সম্পূর্ণ বাতিল এবং লামের ক্ষমা প্রর্থনা ও পদত্যাগের দাবি করছে। ১৬ বছরের ক্যাথেরিন চেউং বলেন, “ক্যারি লাম গতকাল ক্ষমা চাইবেন না বলে জানিয়েছেন, এটা অগ্রহণযোগ্য।
“তিনি মিথ্যায় মোড়া একজন ভয়ঙ্কর নেতা। আমার বিশ্বাস প্রস্তাবিত বিল স্থগিত করা তার একটি কৌশল মাত্র। তিনি পরিস্থিতি ঠাণ্ডা হওয়ার অপেক্ষায় আছেন।”
তার আরেক সহপাঠী বলেন, “আমরা এ কারণেই বিলটি বাতিলের দাবিতে এখনো আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। আমরা তাকে আর বিশ্বাস করি না। তাকে অবশ্যই পদত্যাগ করতে হবে।”