বিবিসি জানায়, ক্যালিফোর্নিয়ার একটি আদালত শুক্রবার ডেভিড টুরপিন (৫৭ ও লুইস টুরপিনকে (৫০) সন্তানদের নির্যাতন, দুর্ব্যবহার ও বাড়িতে কারাগার বানিয়ে আটকে রাখাসহ ডজনখানেক অপরাধে দোষীসাব্যস্ত করে আজীবন কারাদণ্ডাদেশ দেয়।
বাবা-মার নিষ্ঠুর নির্যাতন থেকে ভাই-বোনদের বাঁচাতে গত বছর জানুয়ারিতে এ দম্পতির এক মেয়ে জানালা বেয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়ে পুলিশকে ফোন করে।
পুলিশ লস অ্যাঞ্জেলেস থেকে ৯৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে পেরিস এলাকায় ওই দম্পতির বাড়ি গিয়ে অন্ধকার ঘরে দুর্গন্ধময় নোংরা পরিবেশে বিছানার সঙ্গে শেকল আর তালা দিয়ে আটকে রাখা সন্তানদের উদ্ধার করে এবং টুরপিন দম্পতিকে গ্রেপ্তার করে।
উদ্ধার ১২ ভাই-বোনের মধ্যে সাত জনের বয়সই ১৮ বছরের বেশি ছিল। অথচ চরম অপুষ্টির কারণে তাদের সবাইকে শিশুর মত দেখাচ্ছিল।
টুরপিন দম্পতির এ কাণ্ড ওই সময় খবরের শিরোনাম হয়েছিল এবং বিশ্ববাসীকে হতবাক করে দিয়েছিল।
গতবছর ১৮ জানুয়ারি টুরপিন দম্পতিকে আদালতে হাজির করা হলে তারা এ ঘটনায় নিজেদের নির্দোষ দাবি করেছিলেন।
এক বছরের বেশি সময় ধরে বিচার কাজ চলার পর শুক্রবার রায় ঘোষণার দিন ধার্য করা হয়।
এক শিশুর পক্ষ থেকে তার ভাই তার বিবৃতি পড়েন, “আমি আমার বাবা-মাকে খুব ভালোবাসি।
“যদিও তারা আমাদের যেভাবে বড় করেছেন, হয়তো সেটা সেরা ছিল না। তারপরও আমি তাদের কাছে কৃতজ্ঞ। কারণ, তাদের কারণেই আমি আজকের আমি হতে পেরেছি।”
অন্য একজন বলেন, “আমরা যে অবস্থার মধ্য দিয়ে গেছি সেটা আমার পক্ষে ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব না। আমি এখনও দুঃস্বপ্ন দেখি; দেখি আমার ভাই-বোনদের শেকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে বা পেটানো হচ্ছে।
“ওটা এখন অতীত এবং এটা বর্তমান। আমি আমার বাবা-মাকে ভালোবাসি এবং আমি তাদের ক্ষমা করে দিয়েছি। তারা আমাদের জন্য অনেক কিছু করেছে।”
তবে টুরপিন দম্পতির সব সন্তান তাদের ক্ষমা করতে পারেনি। তাদের এক মেয়ে বলেন, “আমার বাবা-মা আমার পুরো জীবন কেড়ে নিয়েছিল, কিন্তু এখন আমি আমার জীবন ফেরত পেয়েছি।
“আমি লড়াকু, আমি শক্তিশালী এবং আমার জীবন রকেটের মত জ্বলজ্বল করছে।”
টুরপিন দম্পতি তাদের ব্যবহারের জন্য সন্তানদের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন।
এ দম্পতির সন্তানদের মধ্যে সাতজন এখন প্রাপ্ত বয়স্ক এবং ছয়জন শিশু। যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ২০ জন মানুষ তাদের দায়িত্ব গ্রহণের আগ্রহ দেখিয়েছে বলে জানান বিবিসি।