৫৬ বছর বয়সী ডেভিড টুরপিন ও ৪৯ বছর বয়সী লুইস টুরপিনের বিরুদ্ধে নির্যাতন, অপব্যবহার ও কৃত্রিম কারাগার বানানোসহ ডজনখানেক অভিযোগ আনা হয়েছে বলে খবর বিবিসির।
ডেভিড ও লুইসের এক মেয়ে বাড়ি থেকে পালানোর পর পুলিশ ক্যালিফোর্নিয়ার ওই বাড়িতে অভিযান চালিয়ে মেয়েটির বেশ ক’জন ভাইবোনকে বিছানার সঙ্গে শেকল বাঁধা অবস্থায় উদ্ধার করে। উদ্ধার শিশুদের অনেকেই মারাত্মক অপুষ্টিতে ভুগছিল।
বৃহস্পতিবার ডেভিড ও লুইস দম্পতিকে আদালতে হাজির করা হলে তারা এ ঘটনায় নিজেদের নির্দোষ দাবি করেছেন।
রিভারসাইড কাউন্টি ডিস্ট্রিক্টের অ্যাটর্নি মাইক হেস্ট্রিন বলেন, ওই দম্পতি শিশুদের শাস্তি দিতেই প্রথমে দড়ি ও পরে বিছানার সঙ্গে শেকল দিয়ে বেঁধে রাখত।
শাস্তির এ সময়সীমা কখনো কখনো কয়েক সপ্তাহ ও মাস পেরিয়ে যেত; সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ত শাস্তির তীব্রতাও।
তদন্ত কর্মকর্তারা বলছেন, বাচ্চারা টয়লেটে যেতে চাইলেও বাবা-মা তাদের শেকল খুলে দিতেন না বলে প্রমাণ মিলেছে।
বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে হেস্ট্রিন ডেভিড ও লুইস দম্পতির বিরুদ্ধে আরও কিছু অভিযোগের কথা জানান। এগুলো হচ্ছে- বাচ্চাদের মারধর ও গলা চেপে ধরা; বছরে একবারের বেশি গোসল করতে না দেওয়া, সারারাত ধরে বাচ্চাদের জাগিয়ে রেখে ভোর চারটা-পাঁচটার দিকে ঘুমাতে পাঠানো এবং সারাদিন ধরে ঘুম পাড়িয়ে রাখা; খেলনা দিয়ে খেলতে না দেওয়া, দিনে একবারের বেশি খেতে না দেওয়া।
১৩ ভাইবোন তাদের জীবদ্দশায় কখনো দাঁতের ডাক্তার দেখেনি; গত চার বছরে বাবা-মা তাদেরকে অন্য কোনো চিকিৎসকের কাছেও নিয়ে যায়নি। বন্দি জীবনের কারণে এদের সাধারণ মৌলিক জ্ঞানেরও অভাব আছে বলে হেস্ট্রিন জানিয়েছেন।
বিবিসি লিখেছে, লস অ্যাঞ্জেলেস থেকে ৯৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে পেরিস এলাকায় ওই দম্পতির বাড়ি। সেখানে বন্দি ছেলেমেয়েদের একজন রোববার জানালা দিয়ে পালিয়ে পুলিশকে নিজেদের দুর্দশার কথা জানায়।
রিভারসাইডের শেরিফের দপ্তরের এক বিবৃতিতে বলা হয়, যে মেয়েটি পালিয়েছিল তার বয়স ১৭ বছর। কিন্তু শারীরিকভাবে সে এতটাই রুগ্ন যে তাকে দেখাচ্ছিল ১০ বছরের বাচ্চার মত। পুলিশকে সে জানায়, তার আরও ১২ ভাইবোনকে আটকে রেখেছে তাদের বাবা-মা।
পুলিশ পরে ওই বাড়িতে গিয়ে দেখতে পায়, কয়েকজন শিশুকে অন্ধকার ঘরে দুর্গন্ধময় নোংরা পরিবেশে বিছানার সঙ্গে শেকল আর তালা দিয়ে আটকে রাখা হয়েছে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ওই দম্পতি ছেলেমেয়েদের এভাবে আটকে রাখার কোনো যৌক্তিক ব্যাখ্যা দিতে পারেনি বলে জানানো হয় শেরিফের বিবৃতিতে।
পুলিশ কর্মকর্তারা রীতিমত বিস্মিত হয়েছেন এটা দেখে যে, ওই ১৩ ভাইবোনের মধ্যে সাতজনের বয়সই ১৮ বছরের বেশি। সোমবার উদ্ধার করার পর দুই থেকে ২৯ বছর বয়সী ভাইবোনদের স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
এদের মধ্যে দুই বছর বয়সী শিশুর ওজন ঠিক থাকলেও বাকিদের চরম অপুষ্টিতে ভোগার কথা জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। সবচেয়ে বড় ২৯ বছর বয়সীর ওজন মাত্র ৩৭ কেজি।
“চরম ও দীর্ঘদিন ধরে চলা শারিরীক নির্যাতনের কারণে বেশিরভাগ শিশুরই বুদ্ধি প্রতিবন্ধকতা দেখা দিয়েছে, স্নায়ুর ক্ষতি হয়ে দেখা দিয়েছে নিউরোপ্যাথিও,” বলেন হেস্ট্রিন।
১৩ ভাইবোনের পড়াশোনার অবস্থা পুরোপুরি অবগত না হলেও কর্মকর্তারা বলছেন, এদের অনেকে লিখতে ও পড়তে পারে।
ক্যালিফোর্নিয়ায় আসার আগে ডেভিড ও লুইস দম্পতি টেক্সাসে বসবাস করতেন। আনা অভিযোগগুলোতে দোষী প্রমাণিত হলে তাদেরকে সর্বোচ্চ ৯৪ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডের মুখোমুখি হতে হবে বলে হেস্ট্রিন জানিয়েছেন।