শামিমার শিশু সন্তানকে উদ্ধার করা খুবই বিপজ্জনক হত: হান্ট

ইসলামিক স্টেট (আইএস) যোদ্ধাপত্নী শামিমা বেগমের শিশু সন্তানকে উদ্ধার করতে সিরিয়ায় ব্রিটিশ কর্মকর্তাদের পাঠাতে গেলে তাদের জীবন অত্যন্ত ঝুঁকিতে পড়ত বলেই মনে করেন যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেরেমি হান্ট।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 March 2019, 03:41 PM
Updated : 8 Dec 2019, 08:35 AM

২০১৫ সালে যুক্তরাজ্য থেকে পালিয়ে সিরিয়ায় জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটে যোগ দেওয়া ব্রিটিশ-বাংলাদেশি শামিমা বেগমের নবজাতক ছেলে সেখানে একটি শরণার্থী শিবিরে মারা গেছে।

ছেলের জীবন বাঁচাতে শামিমা তাকে যুক্তরাজ্যে ফেরত যাওয়ার অনুমতি দেওয়ার আবেদন করেছিলেন। কিন্তু জঙ্গি সংগঠনে যোগ দেওয়ার কারণে যুক্তরাজ্য সরকার তার ব্রিটিশ নাগরিকত্ব বাতিল করে।

শামিমার নাগরিকত্ব বাতিল হলেও জারাহ নামে তিন সপ্তাহ বয়সের শিশুটি যুক্তরাজ্যের নাগরিক ছিল বলে নিশ্চিত করেন হান্ট । তাকে কেন রক্ষা করা হল না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বিবিসি’কে বলেন, “ওই মা একটি স্বাধীন দেশ ছেড়ে জঙ্গিদলে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

“শিশুটিকে বাঁচাতে সিরিয়ার শরণার্থী শিবিরে কোনো উদ্ধারকর্মীকে পাঠালে তার জীবন ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেওয়া হত।”

বেশ কয়েকজন সাংবাদিক সিরিয়ায় ওই শরণার্থী শিবিরে গেছেন এবং শামিমার সঙ্গে কথা বলেছেন স্বীকার করে হান্ট আরো বলেন, “আমি যুক্তরাজ্যের কর্মকর্তাদের যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠাব কিনা তার জন্য আমাদের আগে তাদের নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে অবশ্যই ভাবতে হবে।”

“শামিমা যখন আইএস এ যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় তখন সে সবই জানত; সে জানত সে এমন একটি দেশে যাচ্ছে যেখানে কোনো দূতাবাস নেই, সেখানে কনস্যুলার সহযোগিতা নেই। যদিও বিষয়টি ভয়াবহ, তারপরও ওই সিদ্ধান্তের জন্য তাদেরকে ভুগতেই হত।”

তবে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র অধিদপ্তর এবং আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সম্পর্কিত অধিদপ্তর তথাকথিত আইএসযোদ্ধা পত্নীদের ব্রিটিশ নাগরিক সন্তানদের খুঁজে বের করা এবং সেখান থেকে বাইরে নিয়ে আসতে কাজ করছে বলেও জানান তিনি।

শামিমার সঙ্গে রিমা ইকবাল ও জারা নামে দুই বোনের নাগরিকত্বও বাতিল করেছে যুক্তরাজ্য সরকার। পাকিস্তানি বাবা-মা’য়ের সন্তান এই দুই বোন পূর্ব লন্ডনের বাসিন্দা ছিলেন। একটি আইনি সূত্রের বরাত দিয়ে ‘দ্য সানডে টাইমস’ এ খবর জানিয়েছে।

কে এই শামিমা:

 ২০১৫ সালের শুরুর দিকে লন্ডনের বেথনাল গ্রিন একাডেমির নবম শ্রেণির ছাত্রী শামিমা ও তার সহপাঠী আরেক ব্রিটিশ-বাংলাদেশি খাদিজা সুলতানাসহ তিন তরুণী আইএসে যোগ দিতে সিরিয়ায় পাড়ি জমিয়েছিলেন।

সেখানে আইএস উৎখাতে আশ্রয় হারিয়ে শামিমার ঠাঁই হয় এক শরণার্থী শিবিরে। সেখানেই ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝিতে এক সাংবাদিক তার খোঁজ পান। ব্রিটিশ দৈনিক টাইমসের সাংবাদিক অ্যান্থোনি লয়েডকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে শামিমা জানান তার ঘরে ফেরার আকাঙ্খার কথা।

সিরিয়ায় আইএস ঘাঁটিতে গিয়ে ধর্মান্তরিত এক ডাচকে বিয়ে করা শামিমা সে সময় নয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। পরে ১৮ ফেব্রুয়ারিতে শামিমা ছেলে সন্তানের জন্ম দেওয়ার কথা জানান। সিরিয়ায় এর আগেও দুটি সন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন শামিমা। তার ওই দুই সন্তানও মারা গেছে।

অনাগত সন্তান যাতে চিকিৎসা সেবা পায় সেজন্য তিনি ব্রিটেনে ফিরতে চান বলে টাইমসের সাংবাদিককে বলেছিলেন শামিমা। তার স্বামীও পরিবার নিয়ে নেদ্যারল্যান্ডসে ফেরার আবেদন করেছিলেন।