বিবিসির খবরে বলা হয়, কানাডা সরকার ১৮ বছর বয়সী এই সৌদি তরুণীকে আশ্রয় দিতে রাজি হওয়ার পর ব্যাংকক থেকে সিউল হয়ে শনিবার কানাডা পৌঁছান তিনি।
কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড সাংবাদিকদের সামনে রাহাফকে পরিচয় করিয়ে দেন ‘দারুণ সাহসী এক নতুন কানাডীয়’ হিসেবে।
তবে গত কয়েক দিনের পরিস্থিতি আর দীর্ঘ ভ্রমণের কারণে রাহাফ ‘ক্লান্ত’ জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ওই তরুণী এ মুহূর্তে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলবেন না।
এর আগে কানাডায় রাহাফকে আশ্রয় দেওয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো সাংবাদিকদের বলেছিলেন, “কানাডা বরাবরই দ্ব্যার্থহীনভাবে মানবাধিকার এবং বিশ্বজুড়ে নারীদের অধিকারের পক্ষে সোচ্চার। জাতিসংঘ যখন আমাদের কাছে রাহাফ আল-কুনুন কে আশ্রয় দেওয়ার অনুরোধ করেছে তখন আমরা তাতে রাজি হয়েছি।”
পরিবারের সঙ্গে কুয়েত ভ্রমণে থাকার সময় গত ৪ জানুয়ারি পালিয়ে অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার চেষ্টা করেন ১৮ বছরের তরুণী রাহাফ।
কুয়েত এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে তিনি ব্যাংকক বিমানবন্দরে পৌঁছান। সেখান থেকে তার অস্ট্রেলিয়ার ফ্লাইট ধরার কথা ছিল।
কিন্তু ব্যাংকক বিমানবন্দরে সৌদি আরবের একজন কূটনীতিক তার সঙ্গে দেখা করে তার পাসপোর্ট জব্দ করে বলে দাবি রাহাফের।
জোর করে কুয়েতে ফেরত পাঠানো হতে পারে- এই আশঙ্কায় নিজের অবস্থার কথা বিশ্ববাসীকে জানাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের আশ্রয় নেন তিনি।
৬ জানুয়ারি বিমানবন্দরের হোটেল কক্ষে বসে টুইটারে নিজের ও পাসপোর্টের ছবি দিয়ে রাহাফ বলেন, কুয়েতে পাঠানো হলে তার পরিবার তাকে সেখান থেকে সৌদি আরব নিয়ে গিয়ে হত্যা করবে।
ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করায় পরিবার তার ওপর ক্রুদ্ধ বলেও টুইটারে জানান এই তরুণী। সৌদি আইনে ধর্মত্যাগের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড।
বিবিসিকে রাহাফ বলেছিলেন, নিজের দেশে তার লেখাপড়া করা বা কাজ করার সুযোগ নেই। তিনি স্বাধীন হতে চান, পড়তে চান, নিজের পছন্দ মত কাজ করতে চান।
নিজের পরিবারে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হওয়ার কথাও বলেছেন এই সৌদি তরুণী। তিনি জানিয়েছেন, চুল কেটে ছোট করায় তাকে ছয় মাস ঘরে আটকে রাখা হয়েছিল।
থাইল্যান্ড বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ শুরুতে তাকে কুয়েত ফেরত পাঠাতে চেয়েছিল। ৭ জানুয়ারি কুয়েত এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে তাকে তুলে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু রাহাফ হোটেল কক্ষ ছাড়তে অস্বীকার করেন।
এরপর আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে তুমুল আলোচনা শুরু হলে থাই অভিবাসন পুলিশ রাহাফকে ফেরত না পাঠিয়ে থাইল্যান্ডে প্রবেশের অনুমতি দেয়।
ইউএনএইচসিআরের তত্ত্বাবধানে ব্যাংকক বিমানবন্দর ছাড়েন রাহাফ। বাবা ও ভাই থাইল্যান্ডে পৌঁছালেও তাদের সঙ্গে দেখা করতে রাজি হননি এই সৌদি তরুণী।
রাহাফের অভিযোগের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি তার অভিভাবকরা। ওই পরিবারের একজন মুখপাত্র বিবিসিকে বলেছেন, তারা চান, তাদের মেয়ে নিরাপদে থাকুক।
ইউএনএইচসিআর রাহাফের দায়িত্ব নেওয়ার পর গত ৯ জানুয়ারি তাকে শরণার্থীর মর্যাদা দেওয়ার কথা জানায়। তাকে আশ্রয় দিতে অস্ট্রেলিয়া সরকারকে আনুষ্ঠানিক সুপারিশও করা হয়।
অস্ট্রেলিয়া সে সময় রাহাফের আবেদন বিবেচনা করার কথা বলেছিল, তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত তারা কখন জানাবে, সে বিষয়ে কিছু তখন বলেনি।
এরপর শুক্রবার থাইল্যান্ডের প্রধান অভিবাসন কর্মকর্তা সিএনএনকে বলেন, অস্ট্রেলিয়া ও কানাডা রাহাফকে আশ্রয় দিতে সম্মত হয়েছে। রাহাফ কোথায় যাবেন সে সিদ্ধান্ত হলেই তাকে ফ্লাইটে তুলে দেওয়া হবে।
এরপর শনিবার দক্ষিণ কোরিয়ার সিউল হয়ে কোরিয়ান এয়ারের একটি ফ্লাইটে করে কানাডার পিয়ারসন বিমানবন্দরে পৌঁছান রাহাফ।
সিউল থেকে আকাশে ওড়ার আগ মুহূর্তে কয়েকটি ছবি টুইটারে দিয়ে তিনি লিখেন, “আমি পেরেছি!”