কানাডায় পাড়ি জমালেন ঘর পালানো সৌদি তরুণী

অতিমাত্রায় রক্ষণশীল পরিবার থেকে পালানো সৌদি তরুণী রাহাফ মোহাম্মদ মুতলাক আল-কুনুন শেষ পর্যন্ত থাইল্যান্ড ছেড়ে কানাডার পথে পাড়ি জমিয়েছেন।

>>রয়টার্স
Published : 11 Jan 2019, 06:48 PM
Updated : 11 Jan 2019, 07:54 PM

কানাডা রাহাফকে আশ্রয় দিতে রাজি হয়েছে। কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বিষয়টি নিশ্চিত করে সাংবাদিকদের বলেছেন, “কানাডা বরাবরই দ্ব্যার্থহীনভাবে মানবাধিকার এবং বিশ্বজুড়ে নারীদের অধিকারের পক্ষে সোচ্চার। জাতিসংঘ যখন আমাদের কাছে রাহাফ আল-কুনুন কে আশ্রয় দেওয়ার অনুরোধ করেছে তখন আমরা তাতে রাজি হয়েছি।”

এর আগে থাইল্যান্ডের প্রধান অভিবাসন কর্মকর্তা সুরাচাত হাকপার্ন জানিয়েছিলেন, কানাডা রাহাফের আশ্রয়প্রার্থনা মঞ্জুর করেছে এবং শুক্রবার রাতেই তার থাইল্যান্ড ছাড়ার কথা রয়েছে।

ব্যাংকক বিমানবন্দরের এক কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, শুক্রবার রাত ১১ টা ৩৭ মিনিটে  একটি কোরিয়ান ফ্লাইটে করে সিউলের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন রাহাফ। এরপর সিউলের ইনচেওন বিমানবন্দর থেকে আরেকটি ফ্লাইটে কানাডার টরেন্টোয় রওনা হবেন তিনি। শনিবার সকালেই রাহাফ গন্তব্যে পৌঁছে যাবেন।

“তার (রাহাফ) কানাডাতেই যাওয়ার ইচ্ছা ছিল,” সাংবাদিকদের বলেছেন থাইল্যান্ডের প্রধান অভিবাসন কর্মকর্তা হাকপার্ন। তিনি বলেন, “রাহাফ এখন পর্যন্ত তার বাবা এবং ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করতে রাজি হননি। ফলে তারাও হতাশ হয়ে দেশে ফিরে যাচ্ছে।”

পরিবারের সঙ্গে কুয়েত ভ্রমণে থাকার সময় গত ৪ জানুয়ারি পালিয়ে অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার চেষ্টা করেন ১৮ বছরের তরুণী রাহাফ। কুয়েত এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে তিনি ব্যাংকক বিমানবন্দরে পৌঁছান। সেখান থেকে তার অস্ট্রেলিয়ার ফ্লাইট ধরার কথা ছিল।

কিন্তু ব্যাংকক বিমানবন্দরে তিনি আটকা পড়েন। সৌদি আরবের একজন কূটনীতিক তার পাসপোর্ট জব্দ করে। থাইল্যান্ড বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ তাকে কুয়েত ফেরত পাঠাতে চেয়েছিল। কিন্তু রাহাফ হোটেল কক্ষ ছাড়তে অস্বীকার করেন।

বিমানবন্দরের হোটেল কক্ষে বসে টুইটারে নিজের ও পাসপোর্টের ছবি দিয়ে রাহাফ বলেন, কুয়েতে পাঠানো হলে তার পরিবার তাকে সেখান থেকে সৌদি আরব নিয়ে গিয়ে হত্যা করবে। ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করায় পরিবার তার ওপর ক্রুদ্ধ বলে টুইটারে জানান এ তরুণী।

এরপর বিষয়টি নিয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে তুমুল আলোচনা শুরু হলে থাই অভিবাসন পুলিশ রাহাফকে ফেরত না পাঠিয়ে থাইল্যান্ডে প্রবেশের অনুমতি দেয়। পরে জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) তত্ত্বাবধানে ব্যাংকক বিমানবন্দর ছেড়ে নিরাপদ স্থানে যান রাহাফ।

ইউএনএইচসিআর গত বুধবার রাহাফকে শরণার্থীর মর্যাদা দিয়ে তাকে অস্ট্রেলিয়ায় আশ্রয় দেওয়ার সুপারিশ করে। কিন্তু অস্ট্রেলিয়া রাহাফের আবেদন খতিয়ে দেখার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে জানালেও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানানোর কোনো সময়সীমা উল্লেখ করেনি।

এরপর শুক্রবার প্রধান থাই অভিবাসন কর্মকর্তা হাকপার্ন সিএনএন’কে বলেন, অস্ট্রেলিয়া রাহাফকে আশ্রয় দিতে রাজি হয়েছে এবং একইসঙ্গে কানাডাও রাহাফকে আশ্রয়ের প্রস্তাব দিয়েছে। রাহাফ কোথায় যাবেন সে সিদ্ধান্ত হওয়া মাত্রই তিনি থাইল্যান্ড ছাড়বেন।

কিন্তু অস্ট্রেলিয়া সরকার রাহাফকে আশ্রয় দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য করেনি এবং তা নিশ্চিতও করেনি।

জাতিসংঘ সাধারণত এক সময়ে একটিমাত্র দেশের কাছেই কাউকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য সুপারিশ করে থাকে। কিন্তু রাহাফের ক্ষেত্রে অস্ট্রেলিয়ার কাছে সুপারিশের পর জাতিসংঘ আবার কেন কানাডার শরণাপন্ন হল তা স্পষ্ট নয়।

তবে ধারণা করা হচ্ছে, শরণার্থীদের প্রতি অস্ট্রেলিয়ার কঠোর নীতির কারণে রাহাফের আশ্রয় পাওয়ার প্রক্রিয়াটি সময়সাপেক্ষ হতে পারে- এমন আশঙ্কা থেকেই হয়ত বিকল্প হিসাবে কানাডাকে বেছে নেওয়া হয়েছে।