খাশুগজির অন্তর্ধানে স্বপ্নভঙ্গের বেদনায় প্রেমিকা

জীবনের সব দুঃখ-কষ্ট আর আনন্দ ভাগ করে নিতে যে মানুষটিকে ভালোবেসে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন, আজ তাকেই হারিয়ে নতুন জীবনের স্বপ্নভঙ্গের বেদনায় দিন কাটাচ্ছেন প্রেমিকা হাতিস চেঙ্গিস।

দ্যনিউ ইয়র্ক টাইমস
Published : 14 Oct 2018, 06:15 PM
Updated : 20 Oct 2018, 12:44 PM

শনিবারই জন্মদিন ছিল সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশুগজির। দিনটি এল। কিন্তু  দিনটিকে ঘিরে আনন্দ-উৎসবের আশা পূরণ হল না তার বাগদত্তা চেঙ্গিসের।

গত ২ অক্টোবর খাশুগজি তুরস্কের ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেটে ঢোকার পর থেকে প্রিয় সেই মুখটি আর দেখেননি চেঙ্গিস। মাত্র এ কয়েকটি দিনই সবকিছু ওলট-পালট করে দিয়েছে। সারাক্ষণ একই ভাবনায় অস্থির হয়ে উঠছে তার মন। খাশুগজি কি বেঁচে আছেন? কোথায় আছেন? কেমন আছেন তিনি?

চেঙ্গিস এখনো চেয়ে তার পথ পানে। তাকে ঘিরে জড়িয়ে আছে অনেক স্মৃতি। আর তাই খাশুগজির জন্মদিনে আবেগঘন এক লেখায় তার সঙ্গে কাটানো সেইসব মুহূর্তেরই বর্ণনা তুলে ধরেছেন চেঙ্গিস। বলেছেন, খাশুগজির সঙ্গে তার পরিচয় থেকে গড়ে ওঠা সম্পর্কের কথা। খাশুগজির দেশপ্রেম, স্বাধীন একজন সাংবাদিক হিসাবে তার নির্ভয়ে কলম ধরা, তার সততা, আন্তরিকতা এমনকি তার নিঃসঙ্গ বোধের কথাও।

গত মে মাসে ইস্তাম্বুলে একটি সম্মেলনে খাশুগজির সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল চেঙ্গিসের। খাশুগজির ব্যক্তিত্ব, জ্ঞান, রাজনৈতিক প্রশ্ন করার সাহস, গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে তার কাজ মুগ্ধ করে চেঙ্গিসকে।

চেঙ্গিসের কথায়, খাশুগজি ছিলেন দেশপ্রেমিক। বিশ্বের বহু দেশ ঘুরেও তিনি হৃদয়ে ধারণ করেছেন সৌদি আরবকে। অথচ দেশেই তার ঠাঁই হয়নি।  সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের সমালোচনা করায় দেশ ছাড়তে হয়েছিল তাকে। তারপরও তার দেশপ্রেমে ভাটা পড়েনি। স্বাধীন সাংবাদিক হিসাবে দেশের মঙ্গল চিন্তায় সবসময়ই কলম ধরেছেন তিনি। দেশের বাইরে গিয়ে মুক্তভাবে লিখতে পারছেন এই ছিল তার সান্ত্বনা। এছাড়া তার লেখার আর কোনো পথও ছিল না।

এক বছরেরও বেশি সময় ধরে দেশ ছেড়ে, পরিবার, বন্ধুবান্ধব ছেড়ে বিদেশে পড়া থাকা খাশুগজির জন্য ছিল চরম কষ্টের। এ ছিল তার জন্য বোঝার মত। আর তাই খাশুগজি খুবই নিঃসঙ্গ বোধ করতেন। এ নিঃসঙ্গতা দূর করতেই চেঙ্গিসকে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন তিনি। একদিন ঘুম থেকে উঠে যেন মনে না হয় এ পৃথিবীতে তিনি একা- এই ছিল খাশুগজির স্বপ্ন।

চেঙ্গিস জানান, খাশুগজি সেদিন নির্ভয়েই সৌদি কনস্যুলেটে ঢুকেছিলেন। কিন্তু কে-ই বা জানত তার জন্য বিপদ অপেক্ষা করে আছে? জানা থাকলে তিনি নিজেও খাশুগজির সঙ্গে যেতেন। ওই দিন খাশুগজির সঙ্গে যেন তার জীবনেরও সব আনন্দ হারিয়ে গেছে।

চেঙ্গিস মনে করেন, নিঃসঙ্গ এই দেশপ্রেমিককে মেরে ফেলা হয়ে থাকলে এখানেই সবকিছুর শেষ নয়। আগামী দিনে আরো হাজারো খাশুগজি জন্মাবে। তার চিন্তা, স্বপ্নেরই প্রতিফলন ঘটবে তুরস্ক থেকে সৌদি আরব পর্যন্ত।