জিনজিয়াংয়ে লাখ লাখ উইঘুরকে আটকে রাখার অভিযোগ অস্বীকার চীনের

উত্তর-পশ্চিমের জিনজিয়াং এলাকার বিভিন্ন শিবিরে সংখ্যালঘু মুসলিম উইঘুর সম্প্রদায়ের ১০ লাখ মানুষকে ‘আটকে রাখার’ অভিযোগ অস্বীকার করেছে চীন।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 August 2018, 08:44 AM
Updated : 14 August 2018, 08:44 AM

শুক্রবার জাতিসংঘের বৈষম্য দূরীকরণ বিষয়ক কমিটির একটি প্যানেল অভিযোগটি উত্থাপন করেছিল, যাকে ‘পরিস্থিতি মোকাবেলায় নেওয়া পদক্ষেপের উদ্দেশ্য প্রণোদিত সমালোচনা’ বলে অভিহিত করেছে চীন; খবর বার্তা সংস্থা রয়টার্সের। 

সোমবার চীনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির উর্ধ্বতন কর্মকর্তা হু লিয়ানহে বলেছেন, দূর পশ্চিমের জিয়ানজিয়াং এলাকার নাগরিকদের ধর্মীয় বিশ্বাসের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা এবং ‘সাধারণ ধর্মীয় আচার পালনে’ কর্তৃপক্ষ সুরক্ষা দিয়ে আসছে।

তবে ‘উগ্রবাদীদের ধোঁকাবাজির শিকার কিছু মানুষকে পুনর্বাসন ও শিক্ষা কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে নেওয়া হচ্ছে’ বলেও জানিয়েছেন তিনি।

জিনজিয়াংকে নিজেদের এলাকা বলে দাবি করে আসা সংখ্যালঘু উইঘুর মুসলিমদের সঙ্গে সংখ্যাগরিষ্ঠ হান চাইনিজদের উত্তেজনা চলছে। এ উত্তেজনাকে উস্কে দিতে ইসলামি জঙ্গি ও বিচ্ছিন্নতাবাদীরা হামলার ষড়যন্ত্র করছে এবং এতে অঞ্চলটির নিরাপত্তার জন্য গুরুতর হুমকি তৈরি হচ্ছে বলে সতর্ক করে আসছে বেইজিং।

জাতিসংঘের সংখ্যালঘু সংক্রান্ত প্যানেল সদস্য গে ম্যাকডোগেল উইঘুরের ১০ লাখ মুসলমানকে চীন ‘গোপনে বিভিন্ন শিবিরে আটকে রেখেছে এবং তাদের কোনো ধরনের অধিকার দেওয়া হচ্ছে না’, এমন অভিযোগের ‘বিশ্বাসযোগ্য প্রতিবেদন’ পাওয়ার দাবি করেছিলেন।

“পুনর্শিক্ষণ কেন্দ্রগুলোতে ১০ লাখ উইঘুরকে আটকে রাখার কথা পুরোপুরি মিথ্যা। পুনর্শিক্ষণ কেন্দ্রের মতো কোনো কিছুই নেই,” সাম্প্রদায়িক বৈষম্যের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন হু।

চীনের ৫৫টি নৃগোষ্ঠীর অধিকার সুরক্ষার রেকর্ড পর্যালোচনা প্রসঙ্গে প্যানেলের দ্বিতীয় দিনের আলোচনায় চীনা কমিউনিস্ট পার্টির এ উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বিদেশি সন্ত্রাসী ও উগ্রবাদীরা জিনজিয়াংয়ের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের উসকে দিয়ে হত্যা, অগ্নিসংযোগ ও বিষ প্রয়োগের মতো ঘটনা ঘটাচ্ছে বলে পাল্টা অভিযোগ করেছেন।

আইন প্রয়োগের মাধ্যমেই চীন এসব অপরাধ দমনে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলেও দাবি তার। জিনজিয়াংয়কে ‘ইসলামমুক্ত’ করতে বেইজিং চায় না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

“তবে ধর্মীয় উগ্রবাদীদের ধোঁকাবাজির শিকার ব্যক্তিদের পুনর্বাসন ও শিক্ষা কার্যক্রমের মাধ্যমে সাহায্য করা হবে,” বলেন হু।

চীনে গুরুতর অপরাধের জন্য কারাদণ্ডের মতো শাস্তি হয়, লঘু অপরাধীদের বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণে পাঠানো হয়; নির্বিচারে আটক ও অসাদাচরণ করা হয় না বলেও দাবি এ চীনা কর্মকর্তার।

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিশেষজ্ঞ এবং উইঘুরের মুসলমানদের নিয়ে কাজ করা সংগঠনের কর্মীরা চীনা কমিউনিস্ট পার্টির এ প্রতিনিধির মন্তব্যে সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন।

“পুনর্শিক্ষণ কিংবা এ জাতীয় দীক্ষা কেন্দ্র থাকার বিষয়টি আপনারা যে পুরোপুরি অস্বীকার করেননি তা বুঝতে পেরেছি আমি,” সোমবার চীনের প্রতিনিধিদের উদ্দেশ্যে এমনটাই বলেন ম্যাকডোগেল। মোট কতজনকে পুনর্শিক্ষা কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে এ বিষয়ে ব্যাখ্যাও দাবি করেন তিনি।

ম্যাকডোগাল পরে রয়টার্সকে বলেছেন, চীনের সঙ্গে এ বিষয়ক সংলাপে দীর্ঘপথ পাড়ি দিতে হবে। 

চীনা প্রতিনিধিদের দেওয়া বিভিন্ন উত্তরকে ‘খুবই রক্ষণাত্মক’ অ্যাখ্যা দিয়েছেন প্যানেল আলোচক গুন কুট বলেছেন, “চীন থেকে এতটা পথ পাড়ি দিয়ে কেবল সবকিছু ঠিকঠাক আছে, এ নিয়ে কিছু করার নেই, এমনটা বলার জন্যই আপনারা আসেননি বলেই আমি নিশ্চিত।”

অধিবেশনে অংশ নেন নির্বাসিত বিশ্ব উইঘুর কংগ্রেসের প্রেসিডেন্ট ডলকুন ইসাও। তার কণ্ঠেও ছিল হতাশার সুর।

“তারা এমনকী পুনর্শিক্ষণ শিবিরের কথাও অস্বীকার করছে। কয়েকশ মানুষ নয়, ১০ থেকে ৩০ লাখ মানুষ সেখানে আটকা। অথচ চীন সরকার চোখ বন্ধ করে রেখেছে,” এমনটাই বলেন ইসা।

জাতিসংঘের উইঘুর বিষয়ক প্যানেল আগামী ৩০ অগাস্ট তাদের এ সংক্রান্ত সম্পূর্ণ প্রতিবেদন দেবে বলে জানিয়েছে রয়টার্স।