উত্তর কোরিয়ার নেতার সঙ্গে হবু মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ‘বৈঠক’

যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সেন্ট্রাল ইন্টিলিজেন্স এজেন্সির (সিআইএ) পরিচালক মাইক পম্পেও উত্তর কোরিয়ায় গিয়ে দেশটির শীর্ষ নেতা কিম জং উনের সঙ্গে গোপন বৈঠক করেছেন বলে খবর মার্কিন গণমাধ্যমগুলোর।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 April 2018, 04:48 AM
Updated : 18 April 2018, 05:25 AM

উত্তরের নেতার সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সরাসরি বৈঠকের প্রস্তুতি নিতে ইস্টারের সপ্তাহান্তে পিয়ংইয়ংয়ে কিম-পম্পেও ওই বৈঠক হয় বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে জানিয়েছে ওয়াশিংটন পোস্ট ও রয়টার্স।

ফ্লোরিডার অবকাশযাপন কেন্দ্র মার-আ-লগোতে জাপানি প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবেকে স্বাগত জানানোর পর সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে দেওয়া বক্তব্যে ট্রাম্পও উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি উচ্চপর্যায়ের বৈঠকের কথা প্রকারান্তরে স্বীকার করেছেন।

“আমাদের সরাসরি কথা হচ্ছে, খুবই উচ্চ পর্যায়ে,” পম্পেওর সফর নিয়ে কিছু না বললেও কিমের সঙ্গে তার বৈঠকের জন্য পাঁচটি স্থানকে বিবেচনা করা হচ্ছে বলেও যোগ করেন তিনি।

দুই কোরিয়ার মধ্যে অর্ধশতাব্দী আগে হওয়া যুদ্ধের আনুষ্ঠানিক ইতি টানার আলোচনা শুরুর ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন থাকছে বলেও জানান মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

১৯৫০-৫৩ পর্যন্ত দুই কোরিয়ার যুদ্ধ হয়েছিল। যুদ্ধ সমাপ্তিতে কোনো শান্তিচুক্তি না হওয়ায় উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়া এখনও ‘কার্যত যুদ্ধবিরতির’ মধ্যে আছে।

সিআইএ পরিচালক পম্পেওকে যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী পররাষ্ট্র মন্ত্রী হিসেবে মনোনীত করেছেন ট্রাম্প। গত মাসে তিনি টিলারসনের স্থলাভিষিক্ত হিসেবে এ গোয়েন্দা কর্মকর্তার নাম ঘোষণা করেন। আনুষ্ঠানিক দায়িত্ব নেওয়ার আগে পম্পেওকে সিনেটের অনুমোদন পেতে হবে।

বিবিসি জানায়, হবু এ মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পিয়ংইয়ংয়ে গিয়ে কিমের সঙ্গে বৈঠকের খবরটি প্রথম দেয় ওয়াশিংটন পোস্ট। 

পররাষ্ট্র মন্ত্রী হিসেবে ট্রাম্পের মনোনয়ন পাওয়ার পরপরই পম্পেও গোপনীয় ওই বৈঠক করেন বলে সিআইএ পরিচালকের ‘উত্তর কোরিয়ায় সরাসরি সফর’ বিষয়ে অবগত দুটি সূত্র্রের বরাত দিয়ে জানায় মার্কিন এ গণমাধ্যম।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ট্রাম্প প্রশাসনের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে পরে বার্তা সংস্থা রয়টার্সও পম্পেওর পিয়ংইয়ং সফর ও কিমের সঙ্গে বৈঠকের খবর দেয়।

উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক না থাকলেও মার্কিন কূটনীতিকরা অতীতে বেশ কয়েকবারই পিয়ংইয়ং সফর করেছেন; দেশটির সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক উপায়ে যোগাযোগ চালিয়ে নেওয়ারও চেষ্টা করেছেন তারা।

জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে যোগসাজশে এসব যোগাযোগ হলেও পম্পেওর সফরও একই প্রক্রিয়ায় হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

এর আগে ২০০০ সালে তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রী মেডেলিন অলব্রাইট পিয়ংইয়ং গিয়ে কিম জং উনের বাবা উত্তরের তখনকার নেতা কিম জং ইলের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন।

দুই মার্কিন নাগরিকের মুক্তির ব্যাপারে দেনদরবার করতে চার বছর আগে সিআইএর তখনকার পরিচালক জেমস ক্ল্যাপারও উত্তর কোরিয়ায় এক গোপন সফরে গিয়েছিলেন।

মানবাধিকার লংঘনের অভিযোগ ও পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচির কারণে দশককাল ধরে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞায় থাকা উত্তর কোরিয়ার আলোচনার প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে গত মাসে বিশ্বকে বিস্ময় উপহার দিয়েছিলেন ট্রাম্প।

ফেব্রুয়ারিতে পিয়ংচ্যাংয়ে হওয়া শীতকালীন অলিম্পিককে কেন্দ্র করে উত্তর ও দক্ষিণের মধ্যে সম্পর্কের বরফ কমে আসার ধারাবাহিকতাতেই ওয়াশিংটনকে ট্রাম্প-কিম বৈঠকের প্রস্তাব দেওয়া হয়।

প্রস্তাব গ্রহণ করে ট্রাম্প জুনের প্রথম দিকে কিংবা তারও আগে উত্তরের শীর্ষ নেতার সঙ্গে বৈঠকের প্রস্তুতি নিতে প্রশাসনকে নির্দেশ দেন। বৈঠকস্থল হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে বেশ কয়েকটি স্থানকে বিবেচনা করা হচ্ছে বলেও পরে জানিয়েছেন তিনি।

পর্যবেক্ষকদের ধারণা, দুই কোরিয়ার ডিমিলিটারাইজ জোন কিংবা বেইজিংয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর কোরিয়ার শীর্ষ নেতৃত্বের এ সরাসরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে পারে; সম্ভাবনা আছে অন্য কোনো এশীয় দেশ, ইউরোপ এমনকী আন্তর্জাতিক জলসীমায় কোনো নৌযানের মধ্যে হওয়ারও।