এক দশকেই সমুদ্রে প্লাস্টিকের পরিমাণ হতে পারে তিনগুণ

আজেবাজে জিনিস ফেলার পরিমাণ কমিয়ে আনতে না পারলে আগামী এক দশকের মধ্যে সমুদ্রে ক্ষতিকর প্লাস্টিক ও প্লাস্টিকজাত পদার্থের পরিমাণ তিনগুণ হতে পারে বলে শঙ্কা বিজ্ঞানীদের।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 March 2018, 10:10 AM
Updated : 21 March 2018, 10:10 AM

সাগরের পরিবেশ এখন যেসব প্রতিকূলতার মুখে পড়েছে তার মধ্যে প্লাস্টিক ছাড়াও আছে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, উষ্ণতা ও দূষণ, বলছেন তারা।

বিবিসি বলছে, যুক্তরাজ্য সরকারকে দেওয়া ফোরসাইট ফিউচার অব দ্য সি-র প্রতিবেদনে ‘সমুদ্র অর্থনীতি’ থেকে বিপুল আয়ের সম্ভাবনার কথাও বলা হয়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যে এই আয় এখনকার দ্বিগুণ হয়ে তিন হাজার কোটি ডলারে দাঁড়াবে বলেও এতে ধারণা দেওয়া হয়েছে।

প্রতিবেদনে সমুদ্র থেকে জ্ঞান আহরণে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে; লেখকরা বলছেন, পৃথিবীর জন্য এখন প্রয়োজন ‘প্ল্যানেট ওশান’ মিশন, যেটি চাঁদ ও মঙ্গলে অভিযানের মতোই বিস্ময় এনে দেবে।

গবেষকদের একজন যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল অশেনোগ্রাফি সেন্টারের অধ্যাপক এডওয়ার্ড হিল বলেছেন, অর্থনৈতিক ভবিষ্যতের ক্ষেত্রে সমুদ্রের গুরুত্ব অপরিসীম।

“আরও আরও খাদ্যের জন্য নয়শ কোটি মানুষ সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে আছে। অথচ সেখানে কি আছে সে সম্বন্ধে আমরা অল্পই জানি। মহাশূন্যে অভিযানে আমরা বিস্তর টাকা ও উদ্দীপনা বিনিয়োগ করেছি, অথচ সেখানে কিছুই বাস করছে না; অন্যদিকে সমুদ্র প্রাণপ্রাচুর্য ভরপুর। আমাদের দরকার প্ল্যানেট ওশান মিশন, এটাই শেষ ফ্রন্টিয়ার,” বিবিসি নিউজকে বলেন তিনি।

যুক্তরাজ্য সরকারের পরিবেশ বিভাগের বিজ্ঞানী ইয়ান বয়েডও বলছেন, ‘চোখের আড়াল’ থাকতে থাকতে সমুদ্র আমাদের ‘মনেরও আড়াল হয়ে গেছে’।

“সমুদ্রকে শুষে নিতে ধারাবাহিক অনুসন্ধান কার্যক্রম চলছে, এটা এত দ্রুত চলছে যে বিজ্ঞানীরাও তাল মেলাতে পারছে না; আইন কিংবা বিধিবিধানও এর সঙ্গে তাল মেলাতে পারছে কিনা, তাতে সন্দেহ আছে। অবশ্যই এ কারণে ঝুঁকি বাড়ছে,” বলেন তিনি।

অফশোর উইন্ড ফার্ম, তেল শিল্প ও খনি কোম্পানিগুলো সমুদ্রের দুর্গম স্থানগুলোতে ছড়িয়ে পড়ছে বলেও মন্তব্য করেন এ গবেষক।

“বাণিজ্যিক লোকদের আগেই অথবা অন্ততপক্ষে একইসঙ্গে বিজ্ঞানীদের সেখানে যাওয়া প্রয়োজন, ওইসব শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করার জন্যই এটা প্রয়োজন,” বলেছেন তিনি। 

ফোরসাইটের প্রতিবেদনে সমুদ্রবিষয়ক বিভিন্ন উদ্বেগের বিষয়েও আলোকপাত করা হয়েছে, যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচিত হয়েছে সমুদ্রে ফেলা প্লাস্টিক পণ্যের কথা। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এ হার কমানো না গেলে ২০২৫ সালে সমুদ্রে ক্ষতিকর প্লাস্টিকজাত পদার্থের পরিমাণ ২০১৫ সালের তুলনায় তিনগুণ হবে।

কৃষিতে ব্যবহৃত কীটনাশক ও সার, পিসিবির মতো শিল্পখাতে ব্যবহৃত বিষাক্ত দ্রব্য এবং ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্যের কারণেও সমুদ্র ভয়াবহ দূষণের কবলে পড়ছে বলেও প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।

গবেষকরা বলছেন, সরকারগুলো যদি সমুদ্রের বৈচিত্র্য ও বাস্তুসংস্থান রক্ষার উপায় চিহ্নিত করতে পারে, তাহলে সেখান থেকে ধাতু কণাসহ বিপুল পরিমাণ সম্পদ সংগ্রহ করা সম্ভব হবে; সমুদ্রের নিচ থেকে ক্যান্সার রোগের প্রতিষেধকের মতো মহামূল্যবান উদ্ভাবনের খোঁজও মিলতে পারে বলে ধারণা তাদের।

নিকট ভবিষ্যতে সমুদ্র থেকে মাছ ধরার হার বাড়বে বলেও ফোরসাইটের প্রতিবেদনে ধারণা দেওয়া হয়েছে, যা নিয়ে আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন লন্ডনের জেডএসএল চিড়িয়াখানার সমুদ্রবিশেষজ্ঞ র‌্যাচেল জোনস।

“বিশ্বব্যাপী গ্রহণযোগ্য মাছ ধরার মাত্রার ৯০ শতাংশ বা তার বেশি এখনই ধরা হয়; আমি জানি না, কীভাবে এরচেয়ে বেশি ধরা সম্ভব,” বলেছেন তিনি।