ত্রিপুরার বিধানসভা নির্বাচনে ভোট পড়েছে ৭৪ শতাংশ

টানা ২৫ বছর ধরে রাজ্যের ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত বামফ্রন্টের সঙ্গে কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোটের মুখোমুখি প্রতিদ্বন্দ্বিতার মধ্যে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Feb 2018, 06:33 AM
Updated : 18 Feb 2018, 04:54 PM

ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে কয়েকটি জায়গায় ইভিএম বিভ্রাটের মধ্য দিয়ে কেটেছে বিধানসভা নির্বাচন। ভোট পড়েছে ৭৪ শতাংশ । গতবারের তুলনায় যা প্রায় ১৭ শতাংশ কম।

‘ইলেক্ট্রোনিক ভোটিং’ মেশিনে সাময়িক অসুবিধার কারণে সন্ধ্যার পরও ভোট গ্রহণ চলে বলে জানায় এনডিটিভি।

২০১৩ সালের নির্বাচনে ৯১ দশমিক ৮২ শতাংশ ভোট পড়েছিল।

টানা ২৫ বছর ধরে ত্রিপুরার ক্ষমতায় আছে বামফ্রন্ট। গতবার ৬০টি আসনের মধ্যে ৫০টিতেই জয়লাভ করেছিল দলটি। ষষ্ঠবারের মত ক্ষমতায় আসতে তারা জোর প্রচার চালিয়েছে।

অন্যদিকে, ইনডিজেনাস পিপুলস ফ্রন্ট অব ত্রিপুরা (আইপিএফটি) এর সঙ্গে জোট বেঁধে ক্ষমতায় আসতে চাইছে ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপি।

রোববার স্থানীয় সময় সকাল ৭টা থেকে উত্তরপূর্বের এ রাজ্যের মোট ৩১৭৪টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ শুরু হয়।

আগামী ৩ মার্চ ভোটের ফলাফল প্রকাশ করা হবে বলে জানায় এনডিটিভি।

ত্রিপুরায় টানা চার মেয়াদে মুখ্যমন্ত্রীর পদে থাকা মানিক সরকারের জন্য এবারের নির্বাচনকে পরীক্ষা হিসেবে দেখা হচ্ছে। লড়াইয়ে উৎরে গেলে কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়া মার্কসবাদীর (সিপিএম) পলিটব্যুরো সদস্য মানিক রেকর্ড পঞ্চমবারের মতো রাজ্যের শীর্ষপদে আসীন হবেন বলে ধারণা পর্যবেক্ষকদের।

উত্তরপূর্ব অঞ্চলে নিজেদের প্রভাব বিস্তারে মরিয়া বিজেপির জন্যও এ নির্বাচন বেশ গুরুত্বপূর্ণ। মোট ভোটারের ৩২ শতাংশ আদিবাসী হওয়ায় তাদের ভোট টানতে বিজেপি আদিবাসীদের দল ইন্ডিজেনাস পিপলস ফ্রন্ট অব ত্রিপুরার (আইপিএফটি) সঙ্গে জোট বেঁধেছে; আদিবাসীদের এ দলটি দীর্ঘদিন ধরেই ত্রিপুরা ভেঙে আলাদা রাজ্যের দাবিতে আন্দোলন করে আসছে।

ভোটের শুরুতেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ত্রিপুরার তরুণ জনগোষ্ঠীকে ভোটকেন্দ্রে এসে পছন্দের প্রার্থী নির্বাচনে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

৬০ আসনের ত্রিপুরা বিধানসভার ৫৯টির ভাগ্য নির্ধারিত হবে রোববার। সিপিএম প্রার্থী রমেন্দ্র নারায়ন দেববর্মার মৃত্যুতে চারিলাম এলাকার ভোট স্থগিত হয়ে গেছে; আগামী ১২ মার্চ এই আসনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

রোববারের ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন ২৯২ জন প্রার্থী। ক্ষমতাসীন বামফ্রন্ট ও বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোট সব আসনেই প্রার্থী দিয়েছে। ভোটের মাঠে আলাদা করে আছে কংগ্রেস। ৫৮টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে তারা।

ভারতের উত্তরপূর্ব এ রাজ্যটির মোট ভোটার প্রায় ২৬ লাখ, যার অর্ধেকই নারী। তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার আছেন ১১ জন; নতুন ভোটার ৪৭ হাজার ৮০৩।

সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের লক্ষ্যে রাজ্যে কেন্দ্রীয় বাহিনীর ৩০০ কোম্পানি সেনা মোতায়েন করা হয়। ইন্দো-তিব্বত সীমান্ত পুলিশের মহাপরিচালক আর কে পাচনন্দকে নিরাপত্তা বাহিনীর কার্যক্রম সমন্বয় করতে বিশেষ পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

গতবারের মত এবারও নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের লক্ষ্যে মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারকেই ঢাল বানিয়েছে বামফ্রন্ট; জনপ্রিয় এ বাম নেতা নির্বাচনের প্রচারে ত্রিপুরার সবকটি আসন চষে বেড়িয়েছেন।

অন্যদিকে বামপন্থিদের ভিত উপড়ে ফেলতে বিজেপি নরেন্দ্র মোদীসহ তাদের শীর্ষ নেতাদের প্রচারে নামিয়ে রাজ্যে পরিবর্তনের ডাক দিয়েছে।

বামফ্রন্ট বলছে, ত্রিপুরাকে দ্বিখণ্ডিত করতেই আইপিএফটিকে সঙ্গে নিয়েছে কেন্দ্রে ক্ষমতাসীনরা; বিজেপি এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে।

বামফ্রন্টের ৬০ আসনের ৫৭টিতেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সিপিএম প্রার্থীরা, তিনটি ছেড়ে দেওয়া হয়েছে শরিক দলগুলোকে।

বিজেপি লড়ছে ৫১ আসনে, ৯টিতে তাদের জোট সঙ্গী আইপিএফটি।

প্রচারের একেবারে শেষ দিনে ত্রিপুরায় আসেন কংগ্রেস প্রধান রাহুল গান্ধী। গতবারের বিধানসভা নির্বাচনে ১০টি আসনে জয়ী কংগ্রেসের বেশ ক’জন সাংসদ পরে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন।