মাদ্রিদের সরাসরি শাসনের বিরুদ্ধে লড়বে কাতালুনিয়া

কাতালুনিয়ায় সরাসরি কেন্দ্রের শাসন চাপিয়ে দেওয়ার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্পেনের সরকার তা মেনে নেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলটির নেতারা।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Oct 2017, 05:29 AM
Updated : 22 Oct 2017, 06:01 AM

শনিবার স্পেনের প্রধানমন্ত্রী মারিয়ানো রাখয় মন্ত্রিসভার এক জরুরি বৈঠক শেষে কাতালুনিয়ায় সংবিধানের বিশেষ ধারা প্রয়োগ করে আঞ্চলিক সরকারকে বরখাস্ত ও দ্রুত নির্বাচন করার পরিকল্পনা জানান। এরপরই কাতালান নেতারা এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ঘোষণা দেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

রয়টার্স বলছে, দুই পক্ষের এই পাল্টাপাল্টি অবস্থান দেশটির রাজনৈতিক সঙ্কটকে আরও গভীর করে তুলবে।

এরই মধ্যে কাতালান সঙ্কট স্পেনের অর্থনীতিকে জোর ধাক্কা দিয়েছে। কোনো পক্ষই সুর নরম না করায় রাজনৈতিক অস্থিরতা আরও দীর্ঘতর হবে বলেও আশঙ্কা অনেকের।

স্বাধীনতার প্রশ্নে কাতালুনিয়ায় গণভোট আয়োজনের প্রায় তিন সপ্তাহ পর স্পেনীয় মন্ত্রিসভা স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলটিতে সংবিধানের ১৫৫ অনুচ্ছেদের আলোকে পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।

১ অক্টোবরের ওই গণভোটকে অবৈধ বলছে স্পেনিশ সরকার; অন্যদিকে কাতালুনিয়ার প্রেসিডেন্ট কার্লোস পুজদেমনের দাবি, গণভোট তাকে স্বাধীনতা ঘোষণার অনুমতি দিয়েছে।

এর আগে গত ১০ অক্টোবর কাতালান পার্লামেন্টে স্বাধীনতার ‘প্রতীকী ঘোষণা’ দিয়েছিলেন পুজদেমন; স্পেনের সঙ্গে আলোচনার দরজা খোলা রাখার চিন্তায় সেই ঘোষণার কার্যকারিতা স্থগিতেরও আহ্বান জানান তিনি।

স্পেনীয় মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত কার্যকরে পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ সিনেটের অনুমোদন লাগবে, এ নিয়ে ২৭ অক্টোবর সিনেটে ভোটও ডাকা হয়েছে। কাতালান প্রশ্নে বিরোধীদের ও রাজার সমর্থন পাওয়া রাখয় সরকার এই ভোটে সহজেই উৎরে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সামরিক শাসন পেরিয়ে গণতন্ত্রে উত্তরণের পর চার দশকের মধ্যে এবারই প্রথম কোনো স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে কেন্দ্রের সরাসরি শাসন চালু করতে যাচ্ছে মাদ্রিদ। যাকে সামরিক একনায়কতন্ত্রের পর ‘কাতালুনিয়ার জনগণের ওপর সবচেয়ে নিকৃষ্ট আঘাত’ বলছেন পুজদেমন।

“কাতালান পার্লামেন্টকে একটি প্লেনারি সেশনে একত্রিত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছি যেখানে আমরা নাগরিকদের সার্বভৌমত্বের প্রতিনিধিরা একত্রিত হয়ে আমাদের সরকার ও গণতন্ত্র শেষ করার উদ্যোগ ও এর ফলাফল নিয়ে কথা বলবো,” টেলিভিশনে প্রচারিত এক ভাষণে এমনটাই বলেন তিনি।

সোমবার কাতালান পার্লামেন্ট সদস্যরা একত্রিত হবেন এবং সেখান থেকেই স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

শনিবার কাতালান নেতা তার মন্ত্রিসভার সদস্য ও দলীয় নেতা কর্মীদের নিয়ে একটি শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভেও অংশ নেন। রাষ্ট্রদ্রোহীতার অভিযোগে মাদ্রিদের কারাগারে আটক দুই স্বাধীনতাপন্থি নেতার প্রতি সমর্থন জানিয়ে হলুদ ফিতা পরে স্বাধীনতাপন্থি আন্দোলনকারীরা বিক্ষোভটিতে অংশ নেন।

লাখ লাখ বিক্ষোভকারীর কণ্ঠে ধ্বনিত হয় ‘স্বাধীনতা’ স্লোগান; হাতে ছিল কাতালুনিয়ার পতাকা এবং ‘নিজের এলাকা রক্ষা করা অপরাধ নয়’ ও ‘স্বাধীনতার ডাক দাও’ শীর্ষক প্ল্যাকার্ড।

কাতালান গণমাধ্যমগুলো বলছে, পুজদেমন নিজেও আঞ্চলিক পার্লামেন্ট বিলুপ্ত করে দুই মাসের মধ্যে নতুন নির্বাচন ডাকতে পারেন; যা মাদ্রিদের ডাকা নির্বাচনের আগে অনুষ্ঠিত হবে।

তবে যাই হোক কোনোটাই মাদ্রিদের জন্য স্বস্তি বয়ে আনবে না।  স্পেন সরকারের নেওয়া পদক্ষেপের পাল্টায় কাতালুনিয়ায় স্বাধীনতার আন্দোলন আরও জোরদার হবে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

“রাখয় কাতালুনিয়ার পার্লামেন্টকে গণতান্ত্রিকভাবে কাজ করতে দিতে চান না, আমরা এটি হতে দেবো না,” বলেন কাতালান পার্লামেন্টের স্পিকার কারমে ফোরকাদেল।

আঞ্চলিক সরকারকে বরখাস্ত করে নতুন নির্বাচন চাপিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে স্পেনের প্রধানমন্ত্রী ‘অভ্যুত্থানের’চেষ্টা করছেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।