সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইংলাক সিনাওয়াত্রা কোথায় আছেন তা জানে না থাইল্যান্ড সরকার।
Published : 28 Aug 2017, 10:23 PM
সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে প্রতিরক্ষামন্ত্রী প্রায়ুত ওয়াংসুয়ান বলেন, “ইংলাক কোথাও পালিয়ে গেছেন বা তিনি কোথাও আশ্রয় চেয়েছেন কিনা আমরা তা জানি না।”
“আমরা তার বহিঃসমর্পণের বিষয়ও কোনও আলোচনা শুরু করিনি।”
দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে একটি মামলার শুনানিতে গত শুক্রবার আদালতে হাজির না হওয়ায় ইংলাকের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। এদিন ওই মামলার রায় দেওয়ার কথা ছিল।
ওই দিন তার আইনজীবীরা আদালতে তার অসুস্থতার কথা বলেছিলেন। যদিও এ সংক্রান্ত কোনো প্রমাণ তারা উপস্থাপন করতে পারেনি।
একদিন পরই ইংলাকের দল পুয়ে থাই পার্টির এক সদস্যের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, গত সপ্তাহেই সিঙ্গাপুর হয়ে দুবাইয়ে ভাইয়ের বাড়ি পৌঁছে গেছেন তিনি।
ইংলাকের ভাই থাকসিন সিনাওয়াত্রাও থাইল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী। ২০০৮ সালে দুর্নীতির মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়ে কারাদণ্ডের বদলে দুবাইয়ে স্বেচ্ছা নির্বাসন বেছে নেন থাকসিন।
২০১১ সালে থাইল্যান্ডের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হন ইংলাক।
চালে ভর্তুকি প্রকল্পে লাখ লাখ ডলার অনিয়মের অভিযোগ উঠার পর ২০১৪ সালে সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তাকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়।
ইংলাকের বিরুদ্ধে অভিযোগ, নিজের সমর্থক কৃষকদের খুশি করতে চাল ক্রয় প্রকল্পে আন্তর্জাতিক বাজার দরের চেয়ে বেশি মূল্যে চাল কিনেছিল ইংলাক সরকার। এতে সরকারি গুদামে চাল উপচে পড়ে, কিন্তু বেশি দামে কেনায় আন্তর্জাতিক বাজারে সেই চাল রপ্তানি করা যায়নি।
বর্তমানে ক্ষমতাসীন সামরিক সরকারের অভিযোগ, এর মাধ্যমে রাষ্ট্রের অন্তত ৮শ’ কোটি ডলার অপচয় হয়েছে।
চাল ক্রয় সংক্রান্ত অন্য একটি মামলায় শুক্রবারই ইংলাকের সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রীকে ৪২ বছরের কারাদণ্ড দেয় আদালত।
রয়টার্স জানায়, ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর সব সময়ই সাদা পোশাকের পুলিশ ইংলাককে অনুসরণ করত।
এমনকি গত বছর একটি প্রাদেশিক সফরে যাওয়া ইংলাককে সামরিক পোশাক পরা ব্যক্তিরা অনুসরণ করেছেন।
এত কড়া নিরাপত্তা নজরদারিতে থাকার পরও কিভাবে প্রশাসনের নজর এড়িয়ে ইংলাক দেশ ছাড়লেন তা নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়েছে।
সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে প্রায়ুত বলেন, “আমি কিভাবে এটা জানব?”
ডেপুটি ন্যাশনাল পুলিশ চিফ জেনারেল শ্রিভারা রানসিব্রাহমানাকুল সাংবাদিকদের বলেন, পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের তথ্যানুযায়ী গত বুধবার দুপুর ২টা পর্যন্ত ইংলাক ব্যাংককে তার বাড়িতে ছিলেন।
তবে এ বিষয়ে আর কোনো ব্যাখ্যা দেননি তিনি।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সাংবাদিকদের বলেন, ইংলাক থাইল্যান্ডে নেই বলেই তার বিশ্বাস।
“আমরা আগে দেখতে চাই তিনি কোনো দেশে গেছেন। এ বিষয়ে কাজ চলছে।”
রয়টার্সের পক্ষ থেকে ইংলাক ও থাকসিনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হতে হয়েছে।
সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অত্যন্ত সক্রিয় ইংলাক বৃহস্পতিবারের পর আর কোনো নতুন পোস্ট দেননি বলেও জানায় রয়টার্স।
ওই দিন ফেইসবুকে সর্বশেষ পোস্টে ইংলাক তার সমর্থকদের উদ্দেশে বলেছিলেন, আদালতে তাদের সঙ্গে দেখা হবে।
২৭ সেপ্টেম্বর ইংলাকের মামলার পরবর্তী রায়ের দিন ধার্য করেছে আদালত।
দোষী সাব্যস্ত হলে সর্বোচ্চ ১০ বছর কারাদণ্ডের পাশপাশি রাজনীতিতে আজীবনের জন্যও নিষিদ্ধ হতে পারেন ইংলাক।