কোষের ‘আত্মভক্ষণ’ ব‌্যাখ‌্যা করে চিকিৎসায় নোবেল

জীবদেহ কেমন করে ত্রুটিপূর্ণ কোষ ধ্বংস করে নিজের সুরক্ষার ব‌্যবস্থা করে, আর কোষ কীভাবে নিজের আবর্জনা প্রক্রিয়াজাত করে সুস্থ থকে, সেই রহস‌্যে আলো ফেলে নোবেল পুরস্কার জিতে নিয়েছেন জাপানের এক বিজ্ঞানী।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Oct 2016, 10:08 AM
Updated : 3 Oct 2016, 03:45 PM

সুইডেনের কারোলিনস্কা ইনস্টিটিউট সোমবার চিকিৎসা বিজ্ঞানে চলতি বছরের বিজয়ী হিসেবে ইয়োশিনোরি ওশুমির নাম ঘোষণা করে।

কোষ তার নিজের ভেতরের ক্ষতিগ্রস্ত প্রোটিন কণাকে যেভাবে সরিয়ে ফেলে, সে পদ্ধতিকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় অটোফাজি। আর যে জিনটি এই প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে, সেটি শনাক্ত করেন টোকিও ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির অধ‌্যাপক ইয়োশিনোরি ওশুমি।

নোবেল কমিটির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অটোফাজি শব্দটি এসেছে গ্রিক শব্দ অটো (আত্ম) ও ফাজেইন (ভক্ষণ) থেকে। অর্থাৎ, শাব্দিক অর্থে অটোফাজি হল আত্মভক্ষণ।

১৯৬০ সালে বিজ্ঞানীরা প্রথম দেখতে পান, কোষ কীভাবে নিজের ভেতরে একটি বস্তার মত ঝিল্লি তৈরি করে নিজের আবর্জনা বা ক্ষতিগ্রস্ত উপাদানকে তার ভেতরে আটকে ফেলে এবং লাইসোজম নামের ‘রিসাইক্লিং চেম্বারে’ তা সরিয়ে নেয়। সেখানে ঠিক কী ঘটে সেই ব‌্যাখ‌্যা তখন বিজ্ঞানীদের জানা ছিল না।

১৯৯০ এর দশকে ইয়োশিনোরি ওশুমি এ গবেষণাকে এগিয়ে নেন। বেকারিতে ব‌্যবহৃত ইস্ট নিয়ে গবেষণা করে তিনি শনাক্ত করেন সেই জিনটি, যা অটোফাজির পেছনে মূল ভূমিকা রাখে। এরপর ইস্টের অটোফাজি ব‌্যাখ‌্যা করে তিনি দেখান, মানব দেহেও ঠিক একই ব‌্যাপার ঘটে।

দেহ নিজেরই তার কোষ ধ্বংস করছে- এটা শুনতে নেতিবাচক মনে হলেও আত্মভক্ষণ বা অটোফাজি কোষের একটি স্বাভাবিক প্রতিরক্ষা ব‌্যবস্থা। কোনো কারণে খাদ‌্য বা শক্তির অভাব দেখা দিলে বা জীবাণুর সংক্রমণ ঘটলে নিজের সুরক্ষার জন‌্য কোষ ধ্বংস করতে দেহ ওই প্রক্রিয়া ব‌্যবহার করে। পাশাপাশি নতুন কোষের জন‌্য জায়গা ছেড়ে দিতে পুরনো কোষ এভাবেই তার আবর্জনা প্রক্রিয়াজাত করে।         

ঠিকমত অটোফাজি না হলে বুড়ো বয়সে স্মৃতিভ্রংশের মত রোগ দেখা দিতে পারে। আর জিনের ত্রুটি গড়াতে পারে ক‌্যান্সার বা পারকিনসনস ডিজিজের মত জটিল রোগের দিকে। অটোফাজি নিয়ে ইয়োশিনোরি ওশুমির গবেষণা এসব রোগের ওষুধ উদ্ভাবনের চেষ্টায় গুরুত্বপূর্ণ রসদ যুগিয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে বিবিসির এক প্রতিবেদনে।

অধ‌্যাপক ওশুমি সাংবাদিকদের বলেছেন, নোবেল জয়ের খবরে তিনি ‘বিস্মিত’, সেই সঙ্গে ‘দারুণ সম্মানিত’ও বোধ করছেন।

জাপানি টেলিভিশন এসএইচকে-কে তিনি বলেন, মানবদেহে সর্বক্ষণ নতুন কোষ তৈরি আর পুরনো কোষ ধ্বংসের প্রক্রিয়ায় রয়েছে এক সুক্ষ্ণ ভারসাম‌্যের খেলা। তার ভাষায়, ‘এটাই হল জীবন’।

জাপানের ফুকুওয়াকায় ১৯৪৫ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি ইয়োশিনোরি ওশুমির জন্ম। টোকিও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে যান এবং রকফেলার বিশ্ববিদ্যালয়ে পোস্ট ডক্টরাল শেষ করে দেশে ফেরেন। পরে টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হয় তার গবেষণা। ২০০৯ সাল থেকে তিনি টোকিওর ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে অধ‌্যাপনা করছেন।

গোলকৃমি ও ম্যালেরিয়ার পরজীবীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য গতবছর চিকিৎসায় নোবেল পেয়েছিলেন আইরিশ উইলিয়াম সি ক্যাম্পবেল, জাপানি সাতোশি ওমুরা এবং চীনা বিজ্ঞানী ইউইউ তু।

এবার নোবেল পুরস্কারের ৮০ লাখ সুইডিশ ক্রোনার ইয়োশিনোরি ওশুমি একাই পাচ্ছেন। আগামী ১০ ডিসেম্বর সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে আনুষ্ঠানিকভাবে তার হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হবে।

মঙ্গলবার পদার্থ, বুধবার রসায়ন, শুক্রবার শান্তি এবং আগামী ১০ অক্টোবর অর্থনীতিতে এবারের নোবেল বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হবে। আর সাহিত্য পুরস্কার কবে ঘোষণা করা হবে, সে তারিখ পরে জানানো হবে বলে নোবেল পুরস্কারের ওয়েবসাইটে জানানো হয়েছে।