বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসের একটি বিমানবন্দর ও একটি মেট্রো ট্রেন স্টেশনে বিস্ফোরণে অন্তত ৩০ জন নিহত হয়েছে। ইসলামিক স্টেট (আইএস) এ হামলার দায় স্বীকার করেছে।
Published : 22 Mar 2016, 01:46 PM
বিবিসি’র খবরে বলা হয়, আইএস সংশ্লিষ্ট আমাক নিউজ এজেন্সিতে ইস্যু করা এক বিবৃতিতে দলটি হামলায় জড়িত থাকার দায় স্বীকার করে।
আমাক এজেন্সির বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, আইএস এর আত্মঘাতী বোমা হামলাকারীরা বিস্ফোরক বেল্ট পরে দুটো হামলাই চালায়।
বেঁচে যাওয়া একজন হামলাকারীকে পুলিশ খুঁজছে বলে জানিয়েছে বেলজিয়ামের গণমাধ্যম।
একটি ক্রাইসিস সেন্টারের মুখপাত্রের বরাত দিয়ে হামলায় প্রাথমিক হিসাবে মেট্রো স্টেশনে ২০ জন নিহত এবং বিমানবন্দরে ১০ জন নিহত হওয়ার খবর জানিয়েছে রয়টার্স।
এর আগে দেশটির সম্প্রচারমাধ্যম ভিআরটি’র খবরে মেট্রো স্টেশনে ২০ জন এবং বিমানবন্দরে ১৪ জন নিহত হওয়ার কথা বলা হয়েছিল।
ওদিকে, বেলজিয়ামের স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বরাত দিয়ে বিবিসি ইয়াবেনতেম বিমানবন্দরে জোড়া বিস্ফোরণে ১১ জন নিহত এবং ৮১ জন আহত হওয়ার কথা জানায়।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার সকাল ৮টার দিকে (জিএমটি ০৭:০০) ব্রাসেলসের ইয়াভেনতেম বিমানবন্দরের বহির্গমন এলাকা জোড়া বিস্ফেরণে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়।
এর ঘণ্টাখানেক পর ইউরোপীয় ইউনিয়নের দপ্তরের কাছে মালবিক মেট্রো স্টেশনে বিস্ফোরণ ঘটে।
প্যারিস হামলার মূল সন্দেহভাজন সালাহ আব্দেস্লামকে ব্রাসেলস থেকে গ্রেপ্তারের চার দিনের মাথায় এই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটল।
আইএস সংশ্লিষ্ট আমাক বার্তা সংস্থা বলেছে, ইসলামিক স্টেটের যোদ্ধারা ইয়াবেনতেম বিমানবন্দরে আগে গুলি ছোড়ে, এরপরই তাদের কয়েকজন বিস্ফোরক বেল্টের বিস্ফোরণ ঘটায়। অন্যদিকে, আরেকজন বোমা হামলাকারী মেট্রো স্টেশনে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে শহীদ হয়।
পরিবহন ব্যবস্থা বন্ধ, সতর্কতা, শোক:
সকালে বিস্ফোরণের পরপরই ইয়াবেনতেম বিমানবন্দর থেকে ফ্লাইট ওঠানামা বন্ধ করে দেওয়া হয়। বর্তমানে ব্রাসেলসের সব ধরণের গণপরিবহন ব্যবস্থা বন্ধ রয়েছে।
সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সতর্কতার মাত্রা সর্বোচ্চ পর্যায়ে উন্নীত করেছে বেলজিয়াম। এছাড়া, হামলায় হতাহতদের জন্য তিনদিনের রাষ্ট্রীয় শোকও ঘোষণা করা হয়েছে।
হামলার নিন্দা-সমালোচনা:
বেলজিয়ামের প্রধানমন্ত্রী চার্লস মিশেল এ হামলাকে ‘অন্ধ, নৃশংস, কাপুরুষোচিত’ বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, “এটি খুবই বেদনাদায়ক দিন, একটি কালো দিন.. আমি সবাইকে শান্ত এবং ধৈর্য্যশীল আচরণ করার আহ্বান জানাচ্ছি।”
বিশ্বের বিভিন্ন দেশও এ হামলার নিন্দা জানিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা একে নিরীহ মানুষের বিরুদ্ধে লজ্জ্বাজনক হামলা বলে বর্ণনা করেছেন।
২৮ জাতি ইইউ নেতারা এক যৌথ বিবৃতিতে এ হামলাকে ইউরোপের উন্মুক্ত গণতান্ত্রিক সমাজের ওপর হামলা বলে অভিহিত করেছেন।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া অলন্দ বলেন, সন্ত্রাসীরা আঘাত হেনেছে বেলজিয়ামে কিন্তু আসলে হামলার লক্ষ্য হয়েছে ইউরোপ। তিনি বলেন, আমরা যুদ্ধের মধ্যে রয়েছি।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এ হামলাকে ‘বর্বরোচিত’ আখ্যা দিয়েছেন।
ঘটনা পরম্পরা:
বিস্ফোরণ ঘটার পরপরই বেলজা নিউজ এজেন্সির খবরে বলা হয়, স্থানীয় সময় সকাল ৮টার দিকে একটি এয়ারলাইন্সের চেক-ইন ডেস্কের কাছে ওই জোড়া বিস্ফোরণের আগে আরবী ভাষায় চিৎকার ও গুলির শব্দ শোনা যায়।
বিস্ফোরণের পর আতঙ্কিত লোকজনের ছুটোছুটি শুরু হয় পুরো বিমানবন্দরে। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে আসা ছবিতে টার্মিনাল ভবন থেকে ধোঁয়া বের হতে এবং বিস্ফোরণের ধাক্কায় ভাঙা জানালা দেখা যায়।
ঘটনাস্থলে থাকা স্কাই নিউজের সাংবাদিক অ্যালেক্স রোজি বলেন, “ভবনটি নড়ছিল আমি টের পাচ্ছিলাম। প্রচুর ধূলা আর ধোঁয়া ছিল। যেদিক থেকে বিস্ফোরণের শব্দ এসেছে আমি সেদিকে এগিয়ে গিয়ে আতঙ্কিত লোকজনকে ছুটে বের হতে দেখেছি।”
ভিআরটি’র খবরে বলা হয়েছে, নিহত এক হামলাকারীর পাশে একটি এসাল্ট রাইফেল পাওয়া গেছে। সম্প্রচারমাধ্যম ভিটিএম একটি অবিস্ফোরিত বোমার বেল্ট পাওয়ার কথাও জানিয়েছে। বেল্টটি খুব শিগগিরই নিষ্ক্রিয় করা হবে বলে জানানো হয়েছে খবরে।
বেলজিয়ামের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়ান ইয়ামবন সোমবার আব্দেস্লাম গ্রেপ্তারকে কেন্দ্র করে জঙ্গিদের প্রতিশোধের আশঙ্কায় সারা দেশে সর্বোচ্চ সতর্কতা বজায় রাখার কথা জানিয়েছিলেন।
যেকোনো ধরনের হামলা প্রতিহত করতে বেলজিয়ামের সড়কগুলোতে পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা অবস্থানও নেয়। কিন্তু সন্ত্রাসীরা হামলার জন্য এমন জনাকীর্ণ স্থান বেছে নিয়েছে যেখানে লোকজন বা ব্যাগ খুব একটা তল্লাশি করা হয় না।
বিমানবন্দরের একজন কর্মী রয়টার্সকে বলেন, বিমানবন্দরে হতাহত বেশিরভাগেরই পা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ থেকে ধারণা করা হচ্ছে, অন্তত একটি বোমা ব্যাগে ছিল।
ওদিকে মালবিক মেট্রো স্টেশনে তিন বগির একটি ট্রেনের মাঝের বগিতে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। ট্রেনটি স্টেশন ত্যাগ করার জন্য চলতে শুরু করলে বিস্ফোরণটি ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের একজন আলেক্সান্ডার ব্রান্স বলেন, “মালবিক স্টেশন ছেড়ে যাওয়ার জন্য ট্রেনটি চলতে শুরু করে। তখনই প্রচণ্ড শব্দে বোমা বিস্ফোরণ হয়। চারিদিকে হুলুস্থুল শুরু হয়ে যায়। ট্রেনে প্রচুর মানুষ ছিল।”
ব্রাসেলসে এ হামলার পর ইউরোপীয় কমিশন এক নির্দেশনায় তাদের কর্মীদের বাইরে বের না হতে বলেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সংস্থাগুলোর সব ধরনের বৈঠকও স্থগিত করা হয়েছে।
চারমাস ধরে ব্যাপক খোঁজাখুঁজি শেষে শুক্রবার ব্রাসেলসের মলেনবেক এলাকায় পুলিশের অভিযানে পায়ে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় গ্রেপ্তার হন আব্দেস্লাম।
পরে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে দেওয়া জবানবন্দিতে তিনি বলেন, স্তাতে দে ফ্রাঁসের (স্টেডিয়াম) অভিযানে আত্মঘাতী বোমায় নিজেকেও উড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল তার। তবে পরে পিছিয়ে আসেন।
প্যারিসের ওই স্টেডিয়ামসহ কয়েকটি বার ও একটি কনসার্ট হলে গতবছর ১৩ নভেম্বর সেই জঙ্গি হামলায় ১৩০ জন নিহত হন।
২৬ বছর বয়সী ফরাসি নাগরিক আব্দেস্লামের বড় ভাই ব্রাহিম ওই আত্মঘাতী হামলায় নিহত হন।