সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে ডনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে কথা বলতে দেখা গেছে গ্রেপ্তার রায়ান রুথকে, লিখেছে রয়টার্স।
Published : 16 Sep 2024, 11:09 PM
মাস দুই আগে পেনসিলভানিয়ায় নির্বাচনি প্রচারের অনুষ্ঠানে গুলিতে রক্তাক্ত হয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডনাল্ড ট্রাম্প; সে যাত্রায় বেঁচে গেলেও নির্বাচনের আগ দিয়ে আবারও তাকে হত্যার চেষ্টা চালানো হয়েছে।
ফ্লোরিডার ওয়েস্ট পাম বিচে রোববার সাবেক এ প্রেসিডেন্ট যখন গলফ খেলছিলেন, সেসময় হঠাৎ সিক্রেট সার্ভিসের সদস্যরা সন্দেহভাজন হামলাকারীর দিকে গুলি চালান।
পরে গলফ মাঠের সীমানায় ঝোপের মধ্যে একে ৪৭ ঘরানার অস্ত্র, দুটি ব্যাকপ্যাক, ‘গো প্রো’ ক্যামেরা আর অন্যান্য সরঞ্জাম ফেলে পালিয়ে যান সন্দেহভাজন ব্যক্তি। যদিও পরে তিনি গ্রেপ্তার হয়েছেন।
আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে সিএনএন, ফক্স নিউজ ও নিউইয়র্ক টাইমস গ্রেপ্তার ওই ব্যক্তিকে রায়ান ওয়েসলি রুথ (৫৮) বলে শনাক্ত করেছে। তবে হাওয়াইয়ের বাসিন্দা রুথের ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করেনি এফবিআই।
আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তারা বলছেন, ট্রাম্প যেখানে গলফ খেলছিলেন, সেখান থেকে কয়েকশ গজ দূরে গলফ কোর্সের সীমানার ঝোপঝাড়ের মধ্যে অস্ত্র ও অন্যান্য সরঞ্জাম নিয়ে ওঁৎ পেতে ছিলেন এক ব্যক্তি। তবে সিক্রেট সার্ভিসের সদস্যরা তাকে দেখতে পেয়ে গুলি চালালে সবকিছু ফেলে ওই ব্যক্তি পালিয়ে যান।
পাম বিচ কাউন্টি শেরিফ রিক ব্র্র্র্যাডশো জানান, বন্দুকধারীকে দেখতে পেয়ে সে চলে যাওয়ার আগেই তার গাড়ি ও গাড়ির নাম্বার প্লেটের ছবি তুলে রাখতে সক্ষম হন এক প্রত্যক্ষদর্শী। তিনি সেটি আইনপ্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষকে দেন। এর কিছুক্ষণ পর মার্টিন কাউন্টিতে শেরিফের ডেপুটিরা ইন্টারস্টেট ৯৫ এ সন্দেহভাজন রায়ান ওয়েসলি রুথকে ধরে ফেলেন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স, ফেইসবুক ও লিঙ্কডইনে একজন রায়ান রুথের প্রোফাইল খুঁজে পাওয়ার কথা জানিয়েছে রয়টার্স। সেগুলো রুথের বলেই মনে করছে রয়টার্স। তবে গুলির ওই ঘটনার কয়েক ঘণ্টা পর থেকে ফেইসবুক ও এক্সের প্রোফাইলগুলোতে আর প্রবেশ করা যাচ্ছে না বলেও জানিয়েছে বার্তা সংস্থাটি।
আরও পড়ুন-
আরেক হত্যাচেষ্টা থেকে রক্ষা পেলেন ট্রাম্প
নির্বাচনি সভায় ট্রাম্পকে গুলি করে হত্যার চেষ্টা
রুথ নামের ওই অ্যাকাউন্টগুলো থেকে ধারণা করা হচ্ছে, রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইউক্রেইনের কট্টর সমর্থক রুথ। ইউক্রেইনের যুদ্ধে সহয়তা করতে সেনা সংগ্রহ করে সাহায্য করার চেষ্টা করেন তিনি। বেশ কয়েকটি পোস্ট থেকে এমন ধারণা পাওয়া যায়।
রয়টার্স জানিয়েছে, গত ২১ এপ্রিল এক্সে ইলন মাস্ককে একটি বার্তা পাঠিয়েছিলেন রুথ। তিনি লিখেছিলেন, “আমি আপনার কাছ থেকে একটি রকেট কিনতে চাই। এতে একটি ওয়্যারহেড লাগিয়ে পুতিনকে শেষ করতে তার কৃষ্ণ সাগরের বাড়ির বাংকারে মারতে চাই। আপনি কি দামটা বলতে পারবেন?”
নিউ ইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইউক্রেইনের জন্য স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করা আমেরিকানদের নিয়ে একটি প্রতিবেদনের জন্য ২০২৩ সালে রুথের সাক্ষাৎকার নিয়েছিল তারা।
রুথ সেসময় বলেন, ২০২২ সালে তিনি ইউক্রেইনে কয়েক মাস ছিলেন। দেশ ছেড়ে পালানো আফগান যোদ্ধাদের তিনি ইউক্রেইনে যুদ্ধে নিয়োগ করার চেষ্টা করেছিলেন।
নিউজউইক রোমানিয়াকে ২০২২ সালের এক সাক্ষাতকারে রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধকে ‘ভালো বনাম মন্দের’ যুদ্ধ বলে বর্ণনা করেন।
রাশিয়া ও ইউক্রেইনের যুদ্ধ শুরু হয়েছিল ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে। যুদ্ধ শুরুর প্রথম দিকেই রুথ ইউক্রেইনে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু বয়স আর সামরিক অভিজ্ঞতার অভাবের কারণে যেতে পারেননি বলে নিউজউইক রোমানিয়াকে জানান তিনি।
ইউক্রেইনে স্বেচ্ছাসেবী বিদেশি যোদ্ধাদের নিয়ে গঠিত সামরিক ইউনিট ‘দি ইন্টারন্যাশনাল লিজেন ডিফেন্স অব ইউক্রেইন’ বলছে, ট্রাম্পের সন্দেহভাজন হামলাচেষ্টাকারী রুথের সঙ্গে তাদের সঙ্গে সংযোগ বা সম্পর্ক নেই।
রয়টার্স জানায়, ২০২০ সালে রুথ ডেমোক্র্যাটিক প্রেসিডেন্ট প্রার্থী বার্নি স্যান্ডার্সকে সমর্থন করেছিলেন। এক্সে এক পোস্টে তখন জো বাইডেনকে ‘স্লিপি জো’ বলে উপহাস করেন।
তবে এ বছরের শুরুর দিকে অবশ্য এক্সে এক পোস্টে জো বাইডেনকে ট্যাগ করে তার সমর্থনে রুথ লিখেন, “আপনার প্রচারকে ‘কেডিএএফ’ এর মত কিছু বলা উচিত। আমেরিকাকে গণতান্ত্রিক ও স্বাধীন রাখুন।”
আর ট্রাম্পকে নিয়ে তিনি লিখেন, “তাকে ‘মাসা’ বা ‘মেইক আমেরিকানস স্লেভস এগেইন মাস্টার’ বলা উচিত। গণতন্ত্র রয়েছে ব্যালটে। আমরা হারতে পারি না।”
ট্রাম্পকে দ্বিতীয় দফায় হত্যাচেষ্টা এবং রুথকে গ্রেপ্তারের পর তার ছেলে অ্যাডামের সঙ্গেও যোগাযোগ করেছে রয়টার্স। হাওয়াইয়ের একটি হার্ডওয়্যারের কাজ করছিলেন তিনি।
রয়টার্সকে অ্যাডাম বলেন, ট্রাম্পকে হামলার নতুন কোনো খবরই তিনি শোনেননি। এ ব্যাপারে কোনো তথ্যও তার জানা নেই। তার বাবা এমন কোনোকিছু করতে পারেন বলে বিশ্বাসও করেন না।
পরবর্তীতে ফের তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তার এক সহকর্মী জানান, জরুরি কারণে অ্যাডাম বাসায় চলে গেছে।
তবে রায়ান রুথের আরেক ছেলে ওরান সিএনএনকে এক বিবৃতিতে বলেন, “একজন স্নেহবান আর যত্নশীল বাবার বিষয়ে কিছু বলতে চাই না।…জানি না ফ্লোরিডায় কী হয়েছে। তবে বোধ করি, যে খবর ছড়িয়েছে, তা বাবার সঙ্গে যায় না।”