অকাস সাবমেরিন চুক্তির পর চীনের সঙ্গে বৈঠকের প্রত্যাশা বাইডেনের

মূলত ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে চীনের আধিপত্যের বিস্তার রুখতে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়া ওই চুক্তি করেছে।

রয়টার্স
Published : 14 March 2023, 01:38 PM
Updated : 14 March 2023, 01:38 PM

যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে নতুন করে যে সাবমেরিন চুক্তি হয়েছে তা নিয়ে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে শিগগিরই কথা হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।

মূলত ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে চীনের আধিপত্যের বিস্তার রুখতেই ওই তিন দেশ এই চুক্তি করেছে। যেটি অকাস (এইউকেইউএস) সাবমেরিন চুক্তি নামে পরিচিত।

স্যান ডিয়েগোর মার্কিন নৌঘাঁটিতে সোমবার অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ ও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাককে পাশে নিয়ে বাইডেন নতুন ওই চুক্তির বিষয়টি জনসম্মুখে আনেন।

তিনি বলেন, ২০২১ সালের অকাস অংশীদারিত্বের আওতায় হওয়া সাবমেরিন চুক্তিটির লক্ষ্য হলো অবাধ ও মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক। আমেরিকা তার দুই ‘শক্তিশালী ও সক্ষম মিত্রকে’ সঙ্গে নিয়ে যৌথভাবে যা করার অঙ্গীকার করেছে।

অকাস সাবমেরিন চুক্তিকে চীন আগ্রাসন হিসেবে বিবেচনা করবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে বাইডেন বলেন, ‘‘না।” তিনি শিগগির এ বিষয়ে চীনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা বলবেন কিনা সে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘হ্যাঁ।”

তবে কবে নাগাদ তাদের বৈঠক হবে সে বিষয়ে তিনি সাংবাদিকদের কিছু জানান নি।

এর আগে গত মাসের মাঝামাঝিতে বাইডেন বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আকাশে চীনের গুপ্তচর বেলুন উড়ার বিষয়ে জানতে তিনি শি’র সঙ্গে আলোচনায় বসার প্রত্যাশা করছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত এই দুই নেতার এ ধরণের কোনো বৈঠকের ঘোষণা আসেনি।

গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভানও চীনের সঙ্গে পুনরায় নিয়মিত যোগাযোগ স্থাপনের যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহের কথা জানিয়েছিলেন।

বলেছিলেন, বার্ষিক ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেস শেষে চীন সরকার নিজেদের স্বাভাবিক কার্যক্রমে ফিরে যাওয়ার পর টেলিফোনে দেশটির প্রেসিডেন্ট শি’র সঙ্গে কথা হবে বলে প্রত্যাশা করছেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন।

সোমবার চীনের ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেস শেষ হয়। 

অকাস চুক্তিতে যা আছে:

 অকাস চুক্তির আওতায় যুক্তরাষ্ট্র ২০৩০ এর দশকের শুরুর দিকে অস্ট্রেলিয়ার কাছে জেনারেল ডায়নামিক্সের বানানো তিনটি মার্কিন ভার্জিনিয়া শ্রেণির পারমাণবিক শক্তিধর সাবমেরিন বিক্রি করবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। প্রয়োজন পড়লে অস্ট্রেলিয়া যেন একই ধরনের আরও দুটি সাবমেরিন কিনতে পারে, সে সুযোগও থাকছে বলে যৌথ বিবৃতিতে জানানো হয়।

এতে আরও বলা হয়, অনেকগুলো ধাপের এই প্রকল্পে যুক্তরাষ্ট্রের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে এবং যুক্তরাজ্যের পরবর্তী প্রজন্মের নকশা অনুসরণ করে যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ায় এসএসএন-অকাস নামের ‘তিনপক্ষের বানানো’ একটি নতুন শ্রেণির সাবমেরিন সমুদ্রে নামানো হবে।

ব্রিটেন তার প্রথম এসএসএন-অকাস সাবমেরিনটি পাবে ২০৩০ এর দশকের শেষদিকে, অস্ট্রেলিয়া পাবে ২০৪০ এর দশকের শুরুতে। এই নৌযানগুলো বানাবে বিএই সিস্টেমস ও রোলস রয়েস।

এ বিষয়ে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী আলবানিজ  বলেন, “এখানে, স্যান ডিয়োগেতে আমরা অকাস চুক্তির আওতায় অস্ট্রেলিয়ার ইতিহাসে প্রতিরক্ষা সক্ষমতায় সবচেয়ে বেশি একক বিনিয়োগের বিষয়টি নিশ্চিত করেছি। যা অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় নিরাপত্তা এবং আমাদের অঞ্চলের স্থিতিশীলতাকে শক্তিশালী করবে।”

অকাসের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র কয়েক দশকের মধ্যে এবারই প্রথম শক্তির উৎস হিসেবে পরমাণু ব্যবহারের প্রযুক্তি অন্যকারো সঙ্গে ভাগ করে নিতে যাচ্ছে; সর্বশেষ ১৯৫০ এর দশকে তারা ব্রিটেনের সঙ্গে এমন ভাগাভাগি করেছিল।

অনুষ্ঠানে বাইডেন জোরের সঙ্গে বলেছেন, যেসব সাবমেরিন অস্ট্রেলিয়া পেতে যাচ্ছে সেগুলো পারমাণবিক শক্তিধর হবে, পারমাণবিক অস্ত্রধর নয়।

“ওইসব নৌযানে কোনো ধরনের পারমাণবিক অস্ত্র থাকবে না,” বলেছেন তিনি।

তবে এই চুক্তির জন্য অস্ট্রেলিয়াকে বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ করতে হবে। ২০৫৫ সাল নাগাদ এই প্রকল্পে তাদের ব্যয় ২৪ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের মতো হতে পারে বলে অনুমান করা হচ্ছে।

আলবানিজ এই বিপুল ব্যয়ের পক্ষে যুক্তি দিয়ে বলেছেন, “এই পরিকল্পনাটি কেবল প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা বিষয়ক পরিকল্পনাই নয়, এটি অর্থনৈতিক পরিকল্পনাও।”

অকাসের ফলে আগামী চার বছরের মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার শিল্প খাতে ৬০০ কোটি অস্ট্রেলিয়ান ডলার বিনিয়োগ হবে এবং আগামী ৩০ বছরে প্রায় ২০ হাজার নতুন চাকরি সৃষ্টি হবে বলে আশা অস্ট্রেলীয় প্রধানমন্ত্রীর।

অস্ট্রেলিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী রিচার্ড মারলেস বলছেন, চুক্তিতে অস্ট্রেলিয়ার যা খরচ হচ্ছে, তা মূলত দেশের নিরাপত্তায় বিনিয়োগ।