সৌদি আরব সফরে গিয়ে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সাদর অভ্যর্থনা পেয়েছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। একইসঙ্গে আরব বিশ্বের সঙ্গে চীনের সম্পর্কে ‘নতুন যুগের’ ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, আরবী ঘোড়া চড়া সৌদি রয়্যাল গার্ড চীন ও সৌদি আরবের পতাকা হাতে শি’র গাড়িকে পাহারা দিয়ে রিয়াদ সৌদি রাজপ্রাসাদে নিয়ে যায়। সেখানে হাসিমুখে তাকে অভ্যর্থনা জানান যুবরাজ মোহাম্মদ। যাকে তার বাবা সৌদি বাদশাহ সালমান সম্প্রতি দেশটির প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন।
বুধবার চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়, শি কে বহনকরা উড়োজাহাজ সৌদি আরবের আকাশ সীমায় প্রবেশের পর সৌদি বিমান বাহিনীর কয়েকটি যুদ্ধবিমান সেটিকে পাহারা দিয়ে বিমানবন্দর পর্যন্ত নিয়ে যায়। বিমানবন্দরে সৌদি রাজপরিবারের একজন জ্যেষ্ঠ সদস্য শি ও তার দলকে অভ্যর্থনা জানান এবং ২১ বার ‘গান-স্যালুট’ দেয়া হয়।
শি কে যে রাজকীয় অভ্যর্থনা জানানো হল, সেই তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গত জুলাই মাসে যখন সৌদি আরব সফরে গিয়েছিলেন তাকে দেওয়া অভ্যর্থনা অনেকটাই অনুজ্জ্বল ছিল।
যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরব একসময়ের ঘনিষ্ঠ মিত্র হলেও বর্তমানে রিয়াদের জ্বালানি নীতি এবং সাংবাদিক জামাল খাশুগজি হত্যাকাণ্ড নিয়ে দুই দেশের মধ্যে চাপা অস্বস্তি বিরাজ করছে।
বাইডেন ক্ষমতায় আসার পরই বলেছিলেন, খাশুগজি হত্যাকাণ্ডে যুবরাজ মোহাম্মদকে জবাবদিহিতার মুখোমুখি করা হবে। এছাড়া, গত জুলাইয়ে সৌদি আরব সফরে গিয়ে বাইডেন যুবরাজ মোহাম্মদকে তিনি ‘খাশুগজি হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী’ বলেছিলেন বলে হোয়াইট হাউজ থেকে দাবি করা হয়।
যদিও বাইডেন শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে হওয়া খাশুগজি হত্যা মামলা থেকে সৌদি যুবরাজের ‘দায়মুক্তি’ দিয়েছেন। যে কারণে যুক্তরাষ্ট্রের এক ফেডারেল বিচারক যুবরাজ মোহাম্মদের বিরুদ্ধে খাশুগজির বাগদত্তা হেতিস চেঙ্গিসের করা মামলা গত মঙ্গলবার খারিজ করে দেন।
যুবরাজ মোহম্মদকে খাশুগজি হত্যাকাণ্ড থেকে ‘দায়মুক্তি’ দিলেও সৌদি আরবের মন খুব একটা গলেছে বলে মনে হয় না। বরং যুক্তরাষ্ট্রকে সৌদি আরবের সঙ্গে তাদের সম্পর্কের চূড়ান্ত অবনতির মধ্যে চির প্রতিদ্বন্দ্বী চীনের সঙ্গে দেশটির সম্পর্কের ক্রম উন্নতি দেখতে হচ্ছে।
শি’র সফর কে কেন্দ্র করে বুধবার যুক্তরাষ্ট্র থেকে বলা হয়, তার এই সফর বিশ্বজুড়ে চীনের প্রভাব বিস্তারের চেষ্টার একটি উদাহরণ। যদিও এ কারণে মধ্যপ্রাচ্যের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের নীতিতে পরিবর্তন আসবে না।
সৌদি সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী শি সেখানে বলেছেন, তিনি ‘আরব বিশ্ব, উপসাগরীয় আরব দেশগুলো এবং সৌদি আরবের সঙ্গে চীনের সম্পর্কের একটি নতুন যুগের সূচনা করার জন্য’ এ সফরে এসেছেন।
‘‘চীন এবং আরব দেশগুলো পরষ্পরের অভ্যন্তরীন বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবে না এবং সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় একে অপরকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করবে।’’
শি শুক্রবার আরব বিশ্বের নেতা এবং তেল উৎপাদনকারী উপসাগরীয় অন্যান্য দেশের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন বলে জানা গেছে।
শি বলেন, এই দেশগুলো ‘বিশ্ব অর্থনীতির জন্য জ্বালানির ভান্ডার ... এবং উচ্চ প্রযুক্তির শিল্পের বিকাশের জন্য উর্বর স্থল’।
বিশ্বের সবচেয়ে বেশি জ্বালানি ব্যবহারকারী দেশ চীন পারস্য উপসাগরীয় দেশগুলোর ব্যবসার বড় অংশীদার।