দক্ষিণ কোরিয়ার অভিশংসসিত প্রেসিডেন্ট ইউনকে গ্রেপ্তারের আরও কোনও চেষ্টার ক্ষেত্রে রক্তক্ষয় এড়াতে কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করেছিলেন তার নিরাপত্তা প্রধান।
Published : 10 Jan 2025, 06:42 PM
দক্ষিণ কোরিয়ার অভিশংসিত প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওলকে গ্রেপ্তারের চেষ্টার বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষকে হুঁশিয়ারি দেওয়ার পর পদত্যাগ করেছেন দেশটির নিরাপত্তা প্রধান পার্ক জং-জুন।
শুক্রবার তিনি পদত্যাগ করেন। এর আগে ইউনকে গ্রেপ্তারের আরও যে কোনও চেষ্টার ক্ষেত্রে ‘রক্তক্ষয়’ এড়ানোর ব্যাপারে কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করে দেন তিনি।
ইউন সুক-ইওলের নিরাপত্তা প্রধান পার্ক সরকারি দায়িত্ব পালনে বাধা দেওয়ার অভিযোগের তদন্ত চলার মধ্যেই পদত্যাগ করলেন।
দক্ষিণ কোরিয়ার ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট চোই স্যাং-মক এর কার্যালয় পার্কের পদত্যাগপত্র গ্রহণের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানিয়েছে। শুক্রবার সকালের দিকে পার্ক জেরার জন্য পুলিশের কাছে হাজিরা দিয়েছিলেন।
সে সময়ই তিনি বলেন, “তদন্তকারীরা ইউনকে আরেক দফায় গ্রেপ্তারের চেষ্টা নিলে রক্তক্ষয় ঘটতে পারে বলে বহু নাগরিক উদ্বেগে আছে। আমি আজ এই বিশ্বাস নিয়ে এখানে এসেছি যে, কোনও অবস্থাতেই কোনওরকম হাতাহাতি বা রক্তক্ষয় হওয়া উচিত নয়। এ ধরনের ঘটনা ঘটতে দেওয়া হবে না বলেই আমি আশা করি।”
দক্ষিণ কোরিয়ায় হঠাৎ করেই সামরিক আইন জারি এবং চাপের মুখে তা প্রত্যাহারকে কেন্দ্র করে গত ১৪ ডিসেম্বর পার্লামেন্টে অভিসংশিত হওয়ার পর সাময়িকভাবে বরখাস্ত হয়েছেন ইউন সুক-ইওল।
গ্রেপ্তার হলে তিনিই হবেন দক্ষিণ কোরিয়ায় ইতিহাসে আটক হওয়া প্রথম কোনও প্রেসিডেন্ট। পদত্যাগ করা নিরাপত্তা প্রধান পার্ক বলেন, ইউনের সঙ্গে অন্যায় আচরণ করা হয়েছে।
প্রেসিডেন্সিয়াল সিকিউরিটি সার্ভিসের (পিএসএস)-এর প্রধান পদে ছিলেন পার্ক জং-জুন। তার বিরুদ্ধে গত সপ্তাহে পিএসএস এজেন্ট এবং তদন্তকারীদের মধ্যে ছয় ঘণ্টার অচলাবস্থার সময় কর্মকর্তাদের বাধা দেওয়ার অভিযোগে তদন্ত চলছে।
ইউনকে গ্রেপ্তারের চেষ্টায় বাধা দিয়েছিল তার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা প্রেসিডেনশিয়াল সিকিউরিটি সার্ভিস (পিএসএস)।পুলিশ কর্মকর্তা ও সিআইও সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত একটি দল প্রেসিডেন্টকে গ্রেফতার করতে তার বাসভবনে গিয়েছিল।
২০ সদস্যের একটি দল নিয়ে অভিযান শুরু হলেও দ্রুতই তা বেড়ে ১৫০ জনে দাঁড়ায়। দলের প্রায় অর্ধেক সদস্য ভেতরে ঢুকতে পারলেও ইউনের নিরাপত্তা দল এবং সিউল শহর রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত একটি সামরিক ইউনিট তাদের অবরুদ্ধ করে ফেলে।
সিউলের জয়েন্ট চিফস অব স্টাফের এক কর্মকর্তা সংবাদসংস্থাকে বলেন, এক পর্যায়ে নিরাপত্তা দলটি প্রেসিডেন্টের বাসভবনে সিআইওর সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।
পরে তদন্তকারীরা গ্রেপ্তারের চেষ্টা থেকে সরে আসেন এবং প্রেসিডেন্টের বাসভবন ত্যাগ করেন। মূলত সংঘর্ষের আশঙ্কায় তদন্তকারীরা বেরিয়ে আসেন।
তদন্তের নেতৃত্ব দেওয়া দুর্নীতি তদন্ত অফিসের (সিআইও) কর্মকর্তারা বলেছেন, পিএসএস এজেন্টরা সেদিন সশস্ত্র ছিল, যদিও কোনও অস্ত্র ব্যবহার করা হয়নি।
তদন্তকারীরা এ সপ্তাহে নতুন গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন। কারণ ইউন বারবার জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হাজির হওয়ার সমন অগ্রাহ্য করেছেন। বৃহস্পতিবার, ইউনের আইনজীবীরা গ্রেপ্তারি পরোয়ানাটিকে অবৈধ বলে অভিহিত করেছেন।
ইউনকে ১৪ ডিসেম্বর পার্লামেন্টে অভিশংসন করায় সাংবিধানিক আদালতে বিচারের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। এতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে যে, তিনি পদে থাকবেন নাকি স্থায়ীভাবে তাকে অপসারণ করা হবে। তার আইনজীবীরা বলছেন, আদালতে যাই সিদ্ধান্ত হবে তিনি এই সিদ্ধান্ত মেনে নেবেন।