নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারানো এএনসি জোট বেঁধেছে প্রতিদ্বন্দ্বী ডিএ’র সঙ্গে।
Published : 15 Jun 2024, 10:58 AM
দক্ষিণ আফ্রিকার ক্ষমতাসীন আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস (এএনসি) ও বিরোধী দলগুলো যুগান্তকারী জোট গঠন করার পর সিরিল রামাফোসাকে আবারও প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করেছে দেশটির পার্লামেন্ট।
রামাফোসার এএনসি, মধ্য ডানপন্থি ডেমোক্রেটিক এলায়েন্স (ডিএ) এবং কয়েকটি ছোট দল মিলে জাতীয় ঐক্যমত্যের সরকার গঠন করেছে।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর নতুন জোটের প্রশংসা করে রামাফোসা বলেন, “ভোটাররা আশা করেন নেতারা দেশের সবার ভালোর জন্য কাজ করবেন এবং একসঙ্গে কাজ করবেন।”
বিবিসি লিখেছে, রাজনৈতিক চরম নাটকীয়তার দিনে দলগুলো ঐক্যমত্যে পৌঁছায়, যেখানে নতুন প্রেসিডেন্ট ঠিক করতে সন্ধ্যার পর ভোটের জন্য বসে ন্যাশনাল অ্যাসেস্বিলি।
এএনসি কার সঙ্গে জোট বাঁধছে কয়েকদিনের এমন জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটে এর আগে। গত মাসে অনুষ্ঠিত ভোটে ৩০ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারায় এএনসি। দলটি এবার মাত্র ৪০ শতাংশ ভোট পেয়েছে, যেখানে তার শরিক ডিএ ২২ শতাংশ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় অবস্থান অর্জন করে।
এএনসির সাধারণ সম্পাদক ফিকিল এমবালুলা এই জোট গঠনকে ‘দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
দুর্নীতির অভিযোগে ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে ৭৭ বছরের জ্যাকব জুমাকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়। জুমার সহযোগী সিরিল রামাফোসা তার স্থলাভিষিক্ত হন। নতুন জোট গঠনের কারণে তিনিই রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্বে থাকছেন।
মন্ত্রিসভার পদ বণ্টন করাই এখন রামাফোসার কাজ, যেখানে ডিএ’র সদস্যদেরকেও জায়গা দিতে হবে।
জোট সরকারে এএনসির সঙ্গে হাত মেলায়নি দুটি দল। নতুন সরকার ভোটরদের দাবি অনুযাযী অর্থনৈতিক উন্নতি করতে না পারলে তারা লাভবান হতে পারে বলে বিবিসি লিখেছে।
তবে জনমত জরিপ বলছে, এই জোটকে সফল হিসেবে দেখতে চান দক্ষিণ আফ্রিকানদের অনেকে।
১৯৯৪ সালে অনুষ্ঠিত প্রথম গণতান্ত্রিক নির্বাচনে এএনসি থেকে নেলসন ম্যান্ডেলা প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন। ওই নির্বাচন থেকে সবসময়ই ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পেয়ে আসছিল দলটি।
তবে চরম মাত্রার দুর্নীতি, বেকারত্ব ও অপরাধ নিয়ে ক্ষোভ তৈরি হওয়ায় দলটির প্রতি সমর্থন উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাচ্ছে।
এবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর দলের ৩০ বছর আগের বিজয়কে স্মরণ করেছেন রামাফোসা।
তিনি বলেছেন, “আমরা এখানে আগেও ছিলাম, ১৯৯৪ সালে আমরা এখানে ছিলাম, যখন আমরা দেশকে ঐক্যবদ্ধ ও পুনর্মিলন করতে চেয়েছিলাম এবং আমরা এখন এখানে আছি।”
বিবিসি লিখেছে, মধ্য-ডানপন্থি ডিএ’র সঙ্গে এনএনসির জোটকে নজিরবিহীন ঘটনা হিসাবে দেখা হচ্ছে। কারণ তারা কয়েক দশক ধরেই প্রতিদ্বন্দ্বী।
নেলসন ম্যান্ডেলার অধীনে এএনসি বর্ণবাদী ব্যবস্থার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয় এবং দেশের প্রথম গণতান্ত্রিক নির্বাচনে জয়লাভ করে।
ডিএ'র সমালোচকদের অভিযোগ, বর্ণবাদের সময় দেশটির শ্বেতাঙ্গ সংখ্যালঘুদের অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধা রক্ষার চেষ্টা করে ডিএ। যদিও দলটি সেই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।
শুক্রবার কেপটাউনে আইনপ্রণেতাদের উদ্দেশে ডিএ নেতা জন স্টিনহিইসেন বলেন, “আজ আমাদের দেশের জন্য একটি ঐতিহাসিক দিন এবং আমি মনে করি, এটি একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা।”
ন্যাশনাল অ্যাসেম্বিলিতে এএনসির একজন স্পিকার হিসেবে শপথ নিয়েছেন। সেখানে ডেপুটি স্পিকার হচ্ছেন ডিএ’র একজন।
জোট গঠনের পর শুক্রবার বক্তব্য রাখেন ইকনোমিক ফ্রিডম ফাইটার্স দলের প্রধান জুলিয়াস মালেমা, যিনি ২০১৩ সালে এনএসি ছাড়ার পর ওই দলটি প্রতিষ্ঠা করেন।
দক্ষিণ আফ্রিকার মানুষের ভোটের ফল ও চাওয়াকে তার দল মেনে নিয়েছে বলে মন্তব্য করলেও জোট নিয়ে সমালোচনাও করেন মালেমা।
তিনি বলেছেন, দক্ষিণ আফ্রিকার অর্থনীতি বা উৎপাদন ব্যবস্থায় শ্বেতাঙ্গদের একচেটিয়া ক্ষমতা সংহত করার চেষ্টার সঙ্গে একমত নন।