হাইতিতে জেল ভেঙে ৪০০০ বন্দিকে মুক্ত করেছে অপরাধী দলগুলো

এসব কয়েদীদের মধ্যে ২০২১ সালে প্রেসিডেন্ট জোভেনেল মোইস হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার দায়ে অভিযুক্তরাও আছেন।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 March 2024, 08:07 AM
Updated : 4 March 2024, 08:07 AM

হাইতির সশস্ত্র অপরাধী দলগুলো দেশটির রাজধানী পর্তোপ্রাঁসের প্রধান কারাগার ভেঙে প্রায় ৪০০০ বন্দিকে মুক্ত করে দিয়েছে।

এসব কয়েদীদের মধ্যে ২০২১ সালে প্রেসিডেন্ট জোভেনেল মোইস হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার দায়ে অভিযুক্তরাও ছিলেন বলে জানিয়েছে বিবিসি।

স্থানীয় একজন সাংবাদিক জানিয়েছেন, কারাগারটিতে প্রায় চার হাজারের মতো বন্দি ছিলেন, তাদের প্রায় সবাই পালিয়ে গেছে।   

দুই আমেরিকা মহাদেশের মধ্যে সবচেয়ে দরিদ্র দেশ হাইতি ব্যাপক সহিংসতায় অস্থির হয়ে আছে। কয়েক বছর ধরে সহিংসতা বাড়তে বাড়তে এখন গুরুতর পরিস্থিতি ধারণ করেছে। দেশটির অপরাধী জোটের নেতা জিমি শেরিজিয়ে (যিনি বারবিকিউ নামেও পরিচিত) প্রধানমন্ত্রী এরিয়েল হেনরিকে ক্ষমতাচ্যুত করার প্রত্যয় জানিয়েছেন।

রাজধানীর ৮০ শতাংশ এলাকা অপরাধী দলগুলোর নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। বাকি অংশের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সরকারি বাহিনীগুলোর সঙ্গে অপরাধীদের ব্যাপক গোলাগুলি চলছে। যেখানে লড়াই চলছে তার কাছাকাছি এলাকার বহু বাসিন্দা ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গেছে।

রাস্তায় রাস্তায় পোড়া বাস, যানবাহন পড়ে আছে। জলন্ত ব্যারিকেডগুলো থেকে ঘন ধূসর ধোঁয়া বাতাসে ছড়িয়ে পড়ছে।

প্রধানমন্ত্রী হেনরি বৃহস্পতিবার কেনিয়া সফরে গিয়ে দেশটির নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক নিরাপত্তা বাহিনী হাইতিতে মোতায়েন নিয়ে আলোচনা শুরুর পর পর্তোপ্রাঁসে ব্যাপক সহিংসতা শুরু হয়। হাইতিতে অপরাধী দলগুলোর সহিংসতা নিয়ন্ত্রণে জাতিসংঘের অনুমোদিত মিশনের অংশ হিসেবে দেশটিতে এক হাজার পুলিশ কর্মকর্তা পাঠানোর পরিকল্পনা করেছে কেনিয়া। এ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে একটি চুক্তি হয়েছে।

অপরাধী জোটের নেতা শেরিজিয়ে হেনরিকে ক্ষমতাচ্যুত করতে একযোগে আক্রমণ চালানোর ঘোষণা দিয়েছেন।

সাবেক এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেছেন, “আমাদের সবাই, প্রাদেশিক শহরগুলোর ও রাজধানীর সশস্ত্র দলগুলো ঐক্যবদ্ধ আছি।”

এই শেরিজিয়ে ২০২২ সালে দলবল নিয়ে হাইতির বৃহত্তম তেল টার্মিনাল অবরোধ করে দেশজুড়ে অচলাবস্থা তৈরি করেছিলেন। জাতিসংঘ ও যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ মন্ত্রণালয় তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।

বৃহস্পতিবার ব্যাপক গোলাগুলি চলাকালে চার পুলিশ কর্মকর্তা নিহত ও পাঁচজন আহত হন। সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া এক ভিডিওতে খুন হওয়ার দুই পুলিশ কর্মকর্তার লাশ রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখা গেছে। হাইতির ফরাসি দূতাবাস রাজধানী ভেতরে বা আশপাশে ভ্রমণ না করতে নিজ নাগরিকদের সতর্ক করেছে।

হাইতির পুলিশ ইউনিয়ন কারাগারে শক্তি বাড়াতে সামরিক বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছিল। কিন্ত শনিবার রাতে কারাগারটিতে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাংচুর চালানো হয়।

রয়টার্স জানিয়েছে, রোববারও কারাগারের ফটকগুলো খোলা ছিল এবং সেখানে কোনো কর্মকর্তাকে দেখা যায়নি। পালানোর সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত তিন কয়েদীর লাশ কারাগারটির খোলা প্রাঙ্গণে পড়ে ছিল।

এক স্বেচ্ছাসেবক কারারক্ষী রয়টার্সের সাংবাদিককে জানিয়েছেন, প্রেসিডেন্ট মোইসের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত কলম্বিয়ার সাবেক কয়েকজন সেনাসহ ৯৯ জন বন্দি কারাগারে তাদের সেলেই থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কারাগার ছাড়লে ক্রসফায়ারে পড়ে নিহত হতে পারেন, এমন আশঙ্কা থেকেই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা।

২০২১ সালে দেশের বাইরে থেকে আসা একদল ভাড়াটে সেনা হাইতির তৎকালীন প্রেসিডেন্টের বাসভবনে হামলা চালিয়ে তাকে হত্যা করে। তারপর দেশটির ক্ষমতায় আসেন হেনরি। কিন্তু ওই সময় থেকেই হাইতিজুড়ে ব্যাপক সহিংতা ও বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে।

জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৩ সালে সহিংসতায় ৮৪০০ জন নিহত, আহত ও অপহৃত হয়েছে। আর সহিংসতার কারণে প্রায় তিন লাখ হাইতিবাসী নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গেছেন।

এক রাজনৈতিক চুক্তি অনুযায়ী নির্বাচন দিয়ে ৭ ফেব্রুয়ারির মধ্যে হেনরির ক্ষমতা ছাড়ার কথা ছিল, কিন্তু তা হয়নি।

আরও পড়ুন:

Also Read: হাইতির প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ‘লড়াইয়ের’ শপথ অপরাধী দলের নেতার