যুক্তরাষ্ট্রে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে চীনা প্রকৌশলীর কারাদণ্ড

এক দশক আগে শিক্ষার্থী ভিসায় যুক্তরাষ্ট্র গিয়েছিলেন জি চাওচেন।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Jan 2023, 04:39 PM
Updated : 26 Jan 2023, 04:39 PM

গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে এক চীনা প্রকৌশলী ও বিজ্ঞানীকে আট বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

যুক্তরাষ্ট্রের বিচার মন্ত্রণালয় থেকে এ তথ্য জানিয়ে বলা হয়, ওই প্রকৌশলীর নাম জি চাওচেন। তার বয়স ৩১ বছর। তিনি ‘ইউএস আর্মি রিজার্ভস’ হিসেবে নিবন্ধিত ছিলেন। এজন্য তিনি তার নিয়োগকর্তাকে নিজের সম্পর্কে মিথ্যা তথ্য দিয়েছিলেন।

এক দশক আগে শিক্ষার্থী ভিসায় জি যুক্তরাষ্ট্র গিয়েছিলেন বলেও বিচার বিভাগের বিবৃতিতে জানানো হয়।

বিজ্ঞানী এবং প্রকৌশলী জির বিরুদ্ধে অভিযোগ, যুক্তরাষ্ট্রের ‘এভিয়েশন ট্রেড সিক্রেট চুরির’ যে চেষ্টা চীন করছে তিনি তার সঙ্গে জড়িত। তিনি চীনের গোয়েন্দা সংস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটের নির্দেশে কাজ করছিলেন।

মার্কিন অ্যাটর্নি-জেনারেলকে না জানিয়ে বিদেশি সরকারের এজেন্ট হিসেবে কাজ করার জন্য গত সেপ্টেম্বর মাসে জি দোষী সাব্যস্ত হন বলে জানায় বিবিসি। তার বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তির মামলায়ও এ অভিযোগ আনা হয়। একইসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীকে মিথ্যা তথ্য দেওয়ার অভিযোগও করা হয়েছে।

তার বিরুদ্ধে জিয়াংসু প্রভিন্স মিনিস্ট্রি অব স্টেট সিকিউরিটি (জেএসএসডি) কে সম্ভাব্য নিয়োগ নিয়ে আটজনের বিষয়ে তথ্য সরবরাহের অভিযোগও ছিল।

ওই আটজনের সবাই যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক, যারা চীন বা তাইওয়ানে জন্ম নিয়েছেন এবং তাদের কেউ কেউ যুক্তরাষ্ট্রের ডিফেন্স কনট্রাক্টর হিসেবে কাজ করছেন।

২০১৬ সালে জি ‘ইউএস আর্মি রিজার্ভাস’ হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। তিনি যে প্রকল্পের অধীনে যুক্তরাষ্ট্রের রিজার্ভ সেনাবাহিনীর সদস্য হন সেই প্রকল্পে জাতীয় স্বার্থে গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করে দক্ষ বিদেশি নাগরিকদের নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা জানান, জি এজন্য নিজের আবেদনপত্রে মিথ্যা তথ্য দেন এবং ইন্টারভিয়্যুর সময় বলেন, গত সাত বছর তিনি বিদেশি কোনো সরকারের সঙ্গে কোনো ধরণের যোগাযোগ রাখেননি।

২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে জি কে গ্রেপ্তার করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের আইন প্রয়োগকারী সংস্থার একজন ছদ্মবেশী সদস্য তার সঙ্গে চীনের মিনিস্ট্রি অব স্টেট সিকিউরিটির (এমএসএস) সদস্য হিসেবে আলাপ জমিয়ে তার কাছ থেকে প্রকৃত তথ্য বের করার পর জি গ্রেপ্তার হন।

ওই এজেন্টের সঙ্গে আলাপের সময় জি বলেছিলেন, তিনি তার সামরিক পরিচয়পত্র ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্রের এয়ারক্রাফ্ট ক্যারিয়ারে প্রবেশের এবং ছবি তোলার অনুমতি পান।

এমনকি তিনি এও বলেছিলেন, যখন তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব এবং যাবতীয় নিরাপত্তা ছাড়পত্র পেয়ে যাবেন তখন তিনি সিআইএ, এফবিআই বা নাসায় চাকরির জন্য আবেদন করবেন।

তার লক্ষ্য ছিল ওই সব প্রতিষ্ঠানের সাইবার নিরাপত্তা বিভাগে কাজ নেওয়া। যাতে তিনি ওইসব প্রতিষ্ঠানের সব ‘ডেটাবেজে’ প্রবেশ করার সুযোগ পান। এমনকি তারা যেসব বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা করছে সেগুলোর তথ্য সংগ্রহ করাও তার লক্ষ্য ছিল।

জি মূলত নামকরা এমএসএস কর্মকর্তা জু ইয়ানজুনের নির্দেশে কাজ করতেন। জু চীনের প্রথম গোয়েন্দা কর্মকর্তা যাকে বিচারের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কাছে প্রত্যর্পণ করা হয়েছে।

বিচারে গত বছর জু কে ২০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তার বিরুদ্ধে জেনারেল ইলেক্ট্রিকসহ যুক্তরাষ্ট্রের এভিয়েশন ও অ্যারোস্পেস কোম্পানি থেকে গোপন তথ্য চুরির চক্রান্ত করার অভিযোগ আনা হয়।

গত বছর জুলাইয়ে এফবিআই পরিচালক ক্রিস্টফার রে বলেছিলেন, ‘‘চীন পশ্চিমা কোম্পানিগুলোর বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তি লুণ্ঠন করা লক্ষ্য ঠিক করেছে। যেন তারা চুরি করা তথ্যের মাধ্যমে নিজস্ব শিল্প বিকাশকে ত্বরান্বিত করতে পারে এবং ওইসব শিল্পের উপর আধিপত্য বিস্তার করতে সক্ষম হয়।”

যার উত্তরে ওই সময় চীন বলেছিল, রে ‘চীনকে অপমান করছেন’ এবং তিনি ‘স্নায়ু যুদ্ধের সময়ের মানসিকতা’ দেখাচ্ছেন।