ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জানিয়েছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে দেখা করতে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন।
বুধবার তার ওয়াশিংটনের পৌঁছানোর কথা, বাইডেনের সঙ্গেও তিনি এদিনই বৈঠক করবেন বলে হোয়াইট হাউসের বিবৃতির বরাত দিয়ে জানিয়েছে বিবিসি।
ফেব্রুয়রিতে রাশিয়া তাদের ‘বিশেষ সামরিক অভিযানে’ ইউক্রেইনে সেনা পাঠানোর পর এটাই হতে যাচ্ছে জেলেনস্কির প্রথম বিদেশ সফর।
হোয়াইট হাউসও তার এই সফরের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানিয়েছে, তারা ইউক্রেইনকে একটি প্যাট্রিয়ট মিসাইল ব্যাটারি দিতে যাচ্ছে, যা দেশটির আকাশ প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বাড়াবে।
মঙ্গলবার ইউক্রেইনে রুশ সেনা প্রবেশের ৩০০ দিন পার হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র সফরে জেলেনস্কির কংগ্রেসে ভাষণ দেওয়া এবং অনেকগুলো দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করার কথা রয়েছে।
“ইউক্রেইনের প্রতিরোধ ও প্রতিরক্ষা সক্ষমতা জোরদারে যুক্তরাষ্ট্রের পথে রয়েছি আমি,” টুইটারে এমনটাই লিখেছেন ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট।
ফেব্রুয়ারিতে রুশ আগ্রাসন শুরুর পর জেলেনস্কি নিয়মিতিই কিইভে বিদেশি রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের স্বাগত জানিয়েছেন; যুদ্ধরত সেনাদের সঙ্গে দেখা করতে ইউক্রেইনের বিভিন্ন অংশেও গেছেন তিনি। সর্বশেষ মঙ্গলবারই অঘোষিত সফরে তিনি বাখমুত গিয়েছিলেন।
ইউক্রেইনের এই প্রেসিডেন্ট তার কিইভের কার্যালয় থেকে প্রায়ই টেলিফোন ও ভিডিও কলে বিশ্বনেতাদের সঙ্গে কথাও বলেন।
কিন্তু যুদ্ধ শুরুর পর প্রথম অঘোষিত সফরে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার মধ্য দিয়ে জেলেনস্কি ইউক্রেইনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের গুরুত্বের দিকেই ইঙ্গিত করলেন। রাশিয়া সেনা পাঠানোর পর কিইভকে যারা সামরিক সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে, ওয়াশিংটনের নাম তাদের মধ্যে সবার উপরে।
বিবিসি লিখেছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি দেওয়া নতুন প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্রের মাধ্যমে ইউক্রেইন তাদের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোকে রাশিয়ার হামলার হাত থেকে রক্ষা করতে পারবে।
ইউক্রেইনের কর্মকর্তারা দীর্ঘদিন ধরেই পশ্চিমা দেশগুলোর কাছে শক্তিশালী আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাপনা চেয়ে আসছিল।
রাশিয়া সাম্প্রতিক মাসগুলো ইউক্রেইনের বিদ্যুৎ খাত লক্ষ্য করে একের পর এক হামলা চালিয়ে আসছে; তাদের হামলার কারণে প্রতিবেশী দেশটির লাখ লাখ লোক এমন এক সময়ে অন্ধকারে ডুবে আছে, যখন তাপমাত্রাও হিমাঙ্কের কয়েক ডিগ্রি নিচে অবস্থান করছে।
জেলেনস্কির সফরের আগে দেওয়া ব্রিফিংয়ে হোয়াইট হাউস ইউক্রেইনকে ২০০ কোটি ডলারের কাছাকাছি নিরাপত্তা সহায়তা দেওয়ার নতুন একটি প্যাকেজের কথাও নিশ্চিত করেছে।
আগামী বছর দেশটিকে ৪ হাজার কোটি ডলারেরও বেশি অতিরিক্ত সহায়তা দিতে একটি বিল নিয়ে কাজ চলছে বলেও জানিয়েছে তারা।
ইউক্রেইনে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র কিইভকে যে পরিমাণ সরাসরি সামরিক সহায়তা দিয়েছে, অন্য দেশগুলো তার ধারেকাছেও নেই।
প্রতি মাসে ইউক্রেইনের প্রতিরক্ষা ব্যয় প্রায় ৫০০ কোটি ডলার জানিয়ে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি অবশ্য তাদেরকে আরও অর্থ সহায়তা দিতে পশ্চিমা দেশগুলোর প্রতি নিয়মিতই অনুরোধ জানিয়ে আসছেন।
ওয়াশিংটনে যাওয়ার আগেরদিনই ইউক্রেইনের এই প্রেসিডেন্ট আচমকা এক সফরে বাখমুত যান; শহরটির দখল নিয়ে গত কয়েকমাস ধরেই রুশ বাহিনীর সঙ্গে কিইভের সেনাদের তুমুল লড়াই চলছে।
জেলেনস্কি সেখানে গিয়ে সেনাদের সঙ্গে দেখা করেন এবং অনেককে পুরস্কৃত করেন, বলেছে তার কার্যালয়।
বাখমুতের সেনারা জেলেনস্কিকে তাদের নাম লেখা একটি ইউক্রেইনের পতাকা জেলেনস্কির হাতে দেন এবং সেটি মার্কিন কংগ্রেস ও প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে দিতে অনুরোধ করেন।
একইদিন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনও ক্রেমলিনের ভেতরে যুদ্ধে অংশ নেওয়া অনেক রুশ সেনাকে তাদের বীরত্বের জন্য পদকে ভূষিত করেন।
রাশিয়া চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেইনে সেনা পাঠানোর পর এখন পর্যন্ত ইউক্রেইন ও রাশিয়া উভয় পক্ষের হতাহতের সংখ্যাই লাখ ছাড়িয়েছে বলে অনুমান যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর। এই যুদ্ধ বেসামরিক ৪০ হাজার মানুষের প্রাণও কেড়ে নিয়েছে বলে ধারণা করছে তারা।
জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ইউক্রেইনের প্রায় ৭৮ লাখ মানুষ রাশিয়াসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নিয়েছে। তাদের এই হিসাবে ঘরবাড়ি ছেড়ে ইউক্রেইনের অন্যত্র আশ্রয় নেওয়া মানুষের সংখ্যা যুক্ত হয়নি।