জাপানে বিতর্কের মধ্যেই ফুল-তোপধ্বনিতে শিনজো আবেকে শেষ বিদায়

জাপানে ৫৫ বছরের মধ্যে প্রথম একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে এভাবে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শেষ বিদায় জানানো হল।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Sept 2022, 11:11 AM
Updated : 27 Sept 2022, 11:11 AM

বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ করে রাষ্ট্রীয় শেষকৃত্য করা নিয়ে বিতর্ক ও বিক্ষোভের মধ্যেই ফুলেল শ্রদ্ধা, প্রার্থনা আর তোপধ্বনি দিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবেকে শেষ বিদায় জানিয়েছে জাপান। দেশটিতে ৫৫ বছরের মধ্যে প্রথম একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে এভাবে বিদায় জানানো হল।

মঙ্গলবার জাপানের স্থানীয় সময় বেলা দুইটায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের শেষকৃত্যানুষ্ঠান শুরু হয়। এক মোটরশোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে আবের দেহভস্মভর্তি বাক্স নিয়ে তার স্ত্রী আকি আবে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়াস্থলে পৌঁছান। তিনি নিপ্পন বুদোকান হলে ঢোকার সময় ১৯ বার তোপধ্বনি করা হয়।

শেষকৃত্যস্থলে সকাল থেকেই উপস্থিত ছিলেন হাজার হাজার শোকার্ত মানুষ। তোপধ্বনির পরপরই প্রায় ১০ হাজার মানুষ আবেকে শ্রদ্ধা জানাতে ফুল দেয়। টিভি গরমের মধ্যে মানুষকে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে থেকে ফুল দিতে দেখা গেছে।

কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে অতীত-বর্তমান প্রায় অর্ধশত রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানও জাপানে উপস্থিত হয়ে শিনজো আবেকে শেষ শ্রদ্ধা জানিয়েছে। তার রাষ্ট্রীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় অংশ নিতে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীসহ ৭০০’র বেশি বিদেশি অতিথি উপস্থিত হয়েছিলেন বলে জানিয়েছে বিবিসি।

জাপানের পশ্চিমাঞ্চলের নারা শহরে দলের এক নির্বাচনী প্রচারসভায় বক্তৃতা দেওয়ার সময় গত ৮ জুলাইয়ে বন্দুকধারীর গুলিতে নিহত হয়েছিলেন আবে। এরপর পারিবারিকভাবে তার দাহ সম্পন্ন হয়। মঙ্গলবার আয়োজন করা হয় রাষ্ট্রীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার।

অনেকেই সাবেক এ প্রধানমন্ত্রীকে কেন রাষ্ট্রীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া দিতে হবে সেই প্রশ্ন তুলছেন, জাপানে সাধারণত রাজপরিবারের সদস্যদেরই রাষ্ট্রীয়ভাবে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া হয়।

অনেকে এই অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার বিপুল ব্যয় নিয়েও ক্ষুব্ধ। তাদের ভাষ্য, আবেকে শ্রদ্ধা জানাতে বিরাট অংকের খরচ না করে সেই অর্থ টাইফুন শিজুয়োকাতে ক্ষতিগ্রস্তদের পেছনে ব্যয় করা উচিত ছিল।

বিক্ষোভকারীরা মঙ্গলবারও দেশজুড়ে নানান কর্মসূচি পালনের পরিকল্পনা করে। অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার অনুষ্ঠানস্থলের কাছে বিক্ষোভকারীরা জড়োও হয়েছিল বলে জানিয়েছে বিবিসি। তবে বিক্ষোভ হলেও অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় শোকাহত মানুষেরও কোনও কমতি দেখা যায়নি।

ইয়োশিকো কোজিমা নামের ৬৩ বছর বয়সী এক গৃহবধু বলেন, “আমি জানি এ অনুষ্ঠান নিয়ে বিতর্ক আছে। অনেক মানুষ এর বিপক্ষে। কিন্তু অনেক মানুষ আবার ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য লাইনেও দাঁড়িয়েছেন। আমার মনে হয়, এখন সত্যিই যখন এ অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া হচ্ছে, তখন অনেক মানুষই তার জন্য প্রার্থনা করতে এসেছেন।”

জাপানে প্রয়াত কোনও প্রধানমন্ত্রীর জন্য সর্বশেষ ১৯৬৭ সালে রাষ্ট্রীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার আয়োজন করা হয়েছিল। আর এবার জাপানে অর্থনৈতিক সংকট চলার মধ্যে শিনজো আবের শেষকৃত্যের জন্য সরকার ১ কোটি ১৫ লাখ ডলার বরাদ্দ করার কারণে মানুষজন ক্ষেপেছে বেশি।

জনমত জরিপে প্রায় ৬০ শতাংশ মানুষকেই আবের শেষকৃত্যের বিরোধিতা করতে দেখা গেছে। নিপ্পন বুদোকান হলে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া চলার সময় টোকিওর উপকণ্ঠের একটি এলাকায় বিক্ষোভকারীরা জড়ো হয়। ‘কোনও রাষ্ট্রীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া নয়’ বলে স্লোগান দেয় তারা।

আবের শেষকৃত্য উপলক্ষে বুদোকান হলের ভেতরের বেদিতে এদিন সবুজ, সাদা ও হলুদ রঙের ফুলের ওপর তার একটি বড় প্রতিকৃতি ঝুলিয়ে রাখা হয়। প্রতিকৃতিতে জড়ানো হয় কালো রঙের ফিতা। পাশের একটি দেয়ালে সাঁটানো হয় আবের আরও কিছু ছবি।

অনুষ্ঠানের শুরুর দিকে আবের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে কিছুক্ষণ নীরবতা পালন করা হয়। এরপর ক্ষমতাসীন দলের নেতারা আবের রাজনৈতিক জীবন নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন।

বুদোকান হলের বাইরে আবেকে শেষ বিদায় জানাতে আসা মানুষের লাইন চলে যেতে দেখা গেছে তিন কিলোমিটার পর্যন্ত। তারা কালো পোশাক পরে ফুল নিয়ে আবেকে শেষবারের মতো শ্রদ্ধা জানাতে এসেছিলেন।

শোকার্ত এই জনতার মধ্য থেকে ১৯ বছর বয়সী একজন বলেন, “আমি আবেকে ভালবাসি। তার সবকিছুই পছন্দ করি। এজন্যই আমি এখানে লাইনে দাঁড়িয়েছি।” আবের জন্য শোকার্ত আরেকজন বলেন, “দীর্ঘদিন প্রধানমন্ত্রী হিসাবে তার সেবা দিয়ে যাওয়ার জন্য তাকে শ্রদ্ধা জানাতেই আমি আজ এখানে।”