বোলসোনারো ফ্লোরিডার হাসপাতালে, ব্রাজিলে গ্রেপ্তার ১৫০০ সমর্থক

বোলসোনারোকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের করে দেওয়ার দাবি জোরালো হচ্ছে; বিষয়টি জো বাইডেন সরকারের জন্যও মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠেছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Jan 2023, 04:59 AM
Updated : 10 Jan 2023, 04:59 AM

ব্রাজিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট জাইর বোলসোনারো পেটের ব্যথা নিয়ে ফ্লোরিডার একটি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন বলে জানিয়েছেন তার স্ত্রী।

বোলসোনারোর হাজার হাজার সমর্থক ব্রাজিলের রাজধানীতে প্রেসিডেস্ট প্রাসাদ, কংগ্রেস আর সুপ্রিম কোর্টের মত গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় নজিরবিহীন তাণ্ডব চালানোর পরদিন এ খবর এল।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের বরাতে বিবিসি জানিয়েছে, বোলসোনারোকে সোমবার অরল্যান্ডোর কাছে একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়। সাবেক এই প্রেসিডেন্ট ২০১৮ সালে ছুরিকাহত হয়েছিলেন। এর পর থেকে মাঝেমধ্যেই তাকে পেটের ব্যথায় ভুগতে হয়।

তার স্ত্রী মিশেল বোলসোনারো সোমবার ইন্সটাগ্রামে জানিয়েছেন, পেটের ব্যথার কারণে তার স্বামীকে হাসপাতালে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। তবে পরিবারের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্রের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, বোলসোনারোর অবস্থা ততটা গুরুতর কিছু নয়।

গত ৩০ অক্টোবর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বামপন্থি লুলা দা সিলভার কাছে হেরে যাওয়ার পর কট্টর ডানপন্থি বোলসোনারো ইলেকট্রনিক ভোটিংয়ে জালিয়াতির অভিযোগ করেন। তার সেই অভিযোগ প্রমাণিত না হলেও তার সমর্থকদের সহিংস বিক্ষোভের ইন্ধন জুগিয়েছে।  

নিজের মেয়াদ শেষ হওয়ার দুই দিন আগে ফ্লোরিডায় উড়াল দেন বোলসোনারো। নির্বাচনে লুলার কাছে হার তিনি এখনও মেনে নেননি, নতুন প্রেসিডেন্টের অভিষেকেও যোগ দেননি।  

রোববার তার হাজার হাজার সমর্থক পতাকার রঙে হলুদ-সবুজ পোশাকে রাজধানী ব্রসিলিয়ায় প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে তাণ্ডব চালায়। টেলিভিশনে প্রচারিত ভিডিওতে দেখা যায়, বিক্ষোভকারীরা বানের পানির মত প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ, সুপ্রিম কোর্ট ও কংগ্রেস ভবনে প্রবেশ করছে, স্লোগান দিচ্ছে, আসবাবপত্র ভাঙছে।

পুলিশের সাথে তারা সংঘাতেও জড়ায়। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তিন ভবন থেকে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। গ্রেপ্তার করা হয় অন্তত দেড় হাজার মানুষকে।

এ ঘটনায় জড়িত প্রত্যেককে খুঁজে বের করে শাস্তির মুখোমুখি করার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট লুলা। নির্বাচন নিয়ে ‘মিথ্যা অভিযোগ’ তুলে সমর্থকদের সহিংসতার পথে উসকে দেওয়ার জন্য সাবেক প্রেসিডেন্ট বোলসোনারোকে দায়ী করেছেন তিনি।

লুলা বলেন, “এই গণহত্যাকারী…. মিয়ামিতে বসে সোশাল মিডিয়ায় সে উসকানি দিয়ে যাচ্ছে। সবাই জানে, সাবেক প্রেসিডেন্টের ও্সব বক্তব্যই সহিংসতায় ইন্ধন দিচ্ছে।”

বোলসোনারো অবশ্য টুইট করে লুলার অভিযোগগুলো প্রত্যাখ্যান করেছেন। পাশাপাশি এও বলেছেন, শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ গণতন্ত্রেই অংশ; তবে সরকারি স্থাপনায় হামলা এবং ক্ষতিসাধন করা হলে সেটা সীমা ছাড়িয়ে যায়।

রয়টার্স লিখেছে, বোলসোনারোর ফ্লোরিডায় অবস্থান করার বিষয়টি মার্কিন সরকারের জন্যও মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠেছে। তাকে বের করে দেওয়ার দাবি নিয়ে চাপের মধ্যে আছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ডেমোক্র্যাট আইন প্রণেতারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র আর বোলসোনারোকে আশ্রয় দিতে পারে না।

প্রতিনিধি পরিষদের ডেমোক্র্যাট সদস্য হোয়াকিন কাস্ত্রো সিএনএনকে বলেন, “ব্রাজিলে অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাসবাদকে উসকে দিয়েছে যে স্বৈরাচার, তাকে আশ্রয় দেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের উচিৎ নয়। বরং তাকে ব্রাজিলে ফেরত পাঠানো উচিত।"

কংগ্রেসের আরেক ডেমোক্র্যাট সদস্য আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও-কর্টেজও টুইট করে বলসোনারোকে ব্রাজিলে ফেরত পাঠানোর দাবি তুলেছেন।

Also Read: ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ, কংগ্রেস, সুপ্রিম কোর্টে বোলসোনারো সমর্থকদের তাণ্ডব 

Also Read: ব্রাজিলে বোলসোনারোর সমর্থকদের শিবির ঘিরে পুলিশ মোতায়েন

তিনি বলেন, “যেদিন মার্কিন ক্যাপিটল আক্রান্ত হয়েছিল, তার প্রায় দুই বছর পর আমরা আবারও দেখতে পেলাম, ফ্যাসিবাদী শক্তি ব্রাজিলে একই কাজ করার চেষ্টা করছে।”

তবে যুক্তরাষ্ট্রে বোলসোনারোর ভিসা নিয়ে ব্রাজিল সরকারের তরফ থেকে কোনো অনুরোধ এখনও আসেনি বলে জানিয়েছেন মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সুলিভান।

গ্রেপ্তার দেড় হাজার ব্রাজিলের বৃহত্তম শহর সাও পাওলোতে হাজার হাজার মানুষ এখন ‘গণতান্ত্রিক আদর্শের’ সমর্থনে সমাবেশ করছেন। দেশটির সবচেয়ে বিখ্যাত সড়ক পলিস্তা অ্যাভিনিউয়ের একটি অংশ আটকে লুলা সমর্থকরা সেখানে নেচে, গেয়ে ‘ন্যায়ের’ পক্ষে স্লোগান দিচ্ছেন, বিচারের দাবি জানাচ্ছেন। 

বিবিসি জানিয়েছে, রোববারের তাণ্ডবের ঘটনায় বোলসোনারোর দেড় হাজার সমর্থককে এ পর্যন্ত গ্রেপ্তার করেছে ব্রাজিলের পুলিশ। ভারী অস্ত্রে সজ্জিত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ব্রাসিলিয়ায় বোলসোনারোর কর্মীদের একটি ক্যাম্প ভেঙে দিয়েছে। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর এরকম অনেক ক্যাম্প গড়ে তুলেছিল বোলসোনারোর সমর্থকরা।

ব্রাজিলের আইনমন্ত্রী ফ্লাভিও ডিনো বলেছেন, পুলিশ প্রায় ৪০টি বাস জব্দ করেছে। এসব বাসে করে বোলসোনারোর সমর্থকদের রোববার রাজধানীতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল বিক্ষোভের জন্য।

প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ, কংগ্রেস ভবন আর সুপ্রিম কোর্টে সেই তাণ্ডবের চিহ্ন এখনও বেশ স্পষ্ট ছিল। সোমবার বিকালেও ভাঙা জিনিসপত্র সরানোর কাজে ব্যস্ত ছিলেন সরকারি কর্মীরা।

শ্রমিকরা প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের বাইরে ভাঙা কাচ পরিষ্কার করছিলেন। ওই ভবনের নিচতলায় প্রায় প্রতিটি জানালা হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কর্মীরা ভাঙা কাচ সরিয়ে সেখানে নতুন কাচ বসাচ্ছিলেন।

প্রাসাদের বাইরে পাথরের পেভমেন্টও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেখান থেকে পাথর ভেঙে নিয়ে জানালার কাজ ভাঙার কাজে ব্যবহার করেছে দাঙ্গাকারীরা।

কাছের কংগ্রেস ভবনে থাকা বেশ কিছু মূল্যবান শিল্পকর্মও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দাঙ্গাকারীরা ভবনের ভেতরে আগুন জ্বালায় স্প্রিংকলার সিস্টেম চালু হয়ে পানিতে ভেসে গিয়েছিল চারদিক। তাতে নষ্ট হয়েছে মূল্যবান বেশ কিছু চিত্রকর্ম।