দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নাৎসিদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে, নিজ দেশের যুদ্ধ তৎপরতায় আরও সহায়তা চেয়ে প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি মার্কিন কংগ্রেসকে বলেছেন, ইউক্রেইনকে সহায়তা হচ্ছে গণতন্ত্রে ‘বিনিয়োগ, দান নয়’।
বুধবার এমন এক সময়ে তার এ মন্তব্য এল, যখন ইউক্রেইনে বিপুল সহায়তা পাঠানো নিয়ে অনেক রিপাবলিকানই ক্রমাগত সংশয় প্রকাশ করে আসছেন। মধ্যবর্তী নির্বাচনে জেতা রিপাবলিকানরা আগামী ৩ জানুয়ারি মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের নিয়ন্ত্রণ নিতে যাচ্ছে।
কট্টর রিপাবলিকানদের অনেকে এমনকী ইউক্রেইনে সহায়তা পাঠানো বন্ধ এবং এতদিন ধরে পাঠানো সহায়তা কিভাবে কাজে লাগানো হয়েছে তা নিয়ে অডিটেরও দাবি তুলেছেন।
“আপনাদের অর্থ দান নয়। এটা বৈশ্বিক নিরাপত্তা ও গণতন্ত্রে বিনিয়োগ, আর এ বিনিয়োগে আমরা সর্বোচ্চ দায়িত্বশীলতার সঙ্গে হাত দিচ্ছি,” যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের উভয় কক্ষের যৌথ অধিবেশনে ইংরেজিতে দেওয়া ভাষণে জেলেনস্কি এমনটাই বলেছেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট এর আগে তার ট্রেডমার্ক জলপাই সবুজ ট্রাউজার ও সোয়েটার পরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে দেখা করেন।
এ সময় বাইডেন ২০২৩ সালেও ইউক্রেইনে সহায়তা অব্যাহত রাখার আশ্বাস দেন।
যুক্তরাষ্ট্র এদিন ইউক্রেইনের জন্য প্যাট্রিয়ট আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাপনাসহ আরও ১৮৫ কোটি ডলার সামরিক সহায়তারও ঘোষণা দিয়েছে; ইউক্রেইনের বিভিন্ন স্থাপনা লক্ষ্য করে রাশিয়ার ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র রুখতে এই প্যাট্রিয়ট ব্যবস্থাপনা বেশ কাজে আসবে বলে মনে করা হচ্ছে।
ইউক্রেইনে বিমান প্রতিরক্ষা তৈরিতে এই প্যাট্রিয়ট ব্যবস্থাপনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি পদক্ষেপ, বলেছেন জেলেনস্কি।
“এটাই একমাত্র পথ, যার মাধ্যমে আমরা সন্ত্রাসী রাষ্ট্রের সন্ত্রাস সৃষ্টির প্রধান উপকরণ, আমাদের শহর, আমাদের বিদ্যুৎখাতে হামলার সম্ভাবনা ঠেকিয়ে তাদের হতাশ করতে পারি,” বাইডেনের পাশে দাঁড়িয়ে হোয়াইট হাউসে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট।
“আমরা আরও প্যাট্রিয়ট চাই, আমরা যুদ্ধের মধ্যে আছি,” হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের বলেন জেলেনস্কি।
ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেইনে ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ শুরুর সময় রাশিয়া বলেছিল, উগ্র জাতীয়তাবাদীদের নির্মূলে এবং রুশ ভাষাভাষীদের রক্ষায় প্রতিবেশী দেশটিতে সেনা পাঠাচ্ছে তারা।
ইউক্রেইন এবং তার পশ্চিমা মিত্ররা একে বিনা উসকানিতে রাশিয়ার চাপিয়ে দেওয়া যুদ্ধ হিসেবে দেখছে।
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ইউক্রেইনের বিদ্যুৎ স্থাপনাগুলো একের পর এক রুশ হামলার সম্মুখীন হচ্ছে, এতে তুমুল ঠাণ্ডার মধ্যেই দেশটির লাখ লাখ মানুষকে বিদ্যুৎ ও সরবরাহকৃত পানি, উষ্ণতা ছাড়া কাটাতে হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত রুশ বার্তা সংস্থা তাসকে বলেছেন, রাশিয়ার সঙ্গে সংঘাত চায় না বলে যুক্তরাষ্ট্র যেসব বিবৃতি দিয়ে যাচ্ছে, তা যে কেবল কথার কথা, জেলেনস্কির যুক্তরাষ্ট্র সফরই তা দেখাচ্ছে।
ইউক্রেইনে যুক্তরাষ্ট্রের উসকানিমূলক পদক্ষেপ উত্তেজনাকে এমন পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছে, যার পরিণতি কল্পনা করাও অসম্ভব, রাষ্ট্রদূত আনাতোলি আন্তোনভ এমনটাই বলেছেন বলে জানিয়েছে তাস।
ইউক্রেইনে প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাপনা সরবরাহ করা হলে তা রাশিয়ার ‘বৈধ টার্গেটে’ পরিণত হবে বলে গত সপ্তাহেই রাশিয়া হুঁশিয়ারি দিয়েছিল।
আরও খবর: