সুখু রসিকতা করে বলেন, “আমি সমুচা খাই না। তাছাড়া সমুচা কোথা থেকে এসেছে, কারা আনিয়েছেন তাও জানি না।’’
Published : 09 Nov 2024, 02:42 PM
পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডির গোয়ন্দারা সাধারণত খুন খারাবি বা বড় ধরনের কোনো অপরাধের অপরাধী ধরতে ব্যস্ত থাকেন। এবার ভারতের হিমাচল প্রদেশের সিআইডি কর্মকর্তারা নাকি নেমেছেন ‘সমুচা তদন্তে’।
যদিও সিআইডির তরফে তদন্তের বিষয়টি স্বীকার করা হয়নি।
ঘটনাটি হল হিমাচলের মুখ্যমন্ত্রী সুখবিন্দর সিং সুখুর জন্য পর্যটন হোটেল থেকে আনা হয়েছিল সমুচা ও কেক। কিন্তু সেসব নাকি খেয়ে ফেলেছেন তার
নিরাপত্তাকর্মীরা। কীভাবে এই কাণ্ড ঘটল, সেটি তদন্ত করার জন্য হিমাচল প্রদেশ সরকার সিআইডিকে নির্দেশ দিয়েছে বলে এনডিটিভি জানালেও পুলিশের এই বিভাগটি বলছে অন্য কথা।
সিআইডির মহাপরিচালক সঞ্জীব রঞ্জন জানিয়েছেন, এ ঘটনাটি নিয়ে কোনো ধরনের তদন্ত হচ্ছে না।
ঘটেছিল কী?
এনডিটিভি লিখেছে, ঘটনাটি ঘটেছে গত ২১ অক্টোবর। ওইদিন মুখ্যমন্ত্রী সিআইডির সদর দপ্তরে গিয়েছিলেন একটি সাইবার উইং স্টেশন উদ্বোধন করতে।
সিআইডির তদন্ত প্রতিবেদন বলছে, মুখ্যমন্ত্রীর খাবারের মেন্যু জানতেন কেবল একজন উপপরিদর্শক। হোটেল থেকে আনা সমুচা ও কেকের তিনটি বাক্স পাঠানো হয় একজন নারী পরিদর্শকের কাছে।
খাবারগুলো কোথায় পাঠানো হবে সেটি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা না করে ওই নারী পরিদর্শক সেগুলো পাঠিয়ে দেন মেকানিক্যাল ট্রান্সপোর্ট সেকশনে। মূলত এই বিভাগটিও খাবারের আয়োজনের দায়িত্বে ছিল। তবে ওই নারী পরিদর্শক তার বয়ানে বলেছেন, খাবারের বাক্সগুলো যে মুখ্যমন্ত্রীর জন্য আনা হয়েছে, সেটি তিনি জানতেন না।
এরপর সেখানে থাকা মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ১০-১২ জন কর্মীকে সেই সমুচা ও কেক পরিবেশন করা হয়।
এ ঘটনায় তদন্তের দায়িত্বে থাকা ডেপুটি সুপারিনটেনডেন্ট অব পুলিশ বিক্রম চৌহান জানিয়েছেন, সমুচা বিভ্রাটে জড়িত সিআইডির ওই উপপরিদর্শক, নারী পরিদর্শকসহ পাঁচ গোয়েন্দা পুলিশকে কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়া হয়েছে।
সিআইডির মহাপরিচালক সঞ্জীব রঞ্জন জানিয়েছেন, পুরো ঘটনাটিকে খুব ‘ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে’।
বিষয়টি নিয়ে ‘রাজনীতিও শুরু হয়ে গিয়েছে’ বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
রঞ্জন বলেন, “সমুচা বিতর্কে সিআইডি তদন্তের যে প্রসঙ্গ উঠেছে, তা সম্পূর্ণ ভুল। সিআইডি কোনো ধরনের তদন্ত করছে না।”
মুখ্যমন্ত্রীর মিডিয়া উপদেষ্টা নরেশ চৌহানও দাবি করেছেন, সিআইডিকে তদন্তের কোনো নির্দেশ দেওয়া হয়নি। বিষয়টিকে ‘অন্য মাত্রা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে’ বলে অভিযোগ নরেশের।
সমুচা নিয়ে ‘রাজনীতি’
এই ঘটনা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী সুখু রসিকতা করে বলেন, “আমি সমুচা খাই না। স্বাস্থ্যগত কারণে বাইরের খাবারও খাই না, এটাও আমার লোকজন জানেন। তাছাড়া সমুচা কোথা থেকে এসেছে, কারা আনিয়েছেন তাও জানি না।’’
বিষয়টি নিয়ে ‘অহেতুক রাজনীতির চেষ্টা চলছে’ অভিযোগ করে সুখু বলেন, “এটাকে এতটা গুরুত্বও দিতে চাইছি না।”
এদিকে তদন্তের খবর প্রকাশ্যে আসার পর ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) অভিযোগ করেছে, রাজ্যের কংগ্রেস সরকার মুখ্যমন্ত্রীর খাবার নিয়ে বেশি চিন্তিত, জনসাধারণের ‘সমস্যা নিয়ে নয়’।
বিজেপি নেতা রণধীর শর্মা বলেছেন, “দেখে মনে হচ্ছে সরকার কোনো উন্নয়নমূলক কাজে আগ্রহী নয়। কেবল খাবারের ওপরই তাদের মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করেছে!”
বিজেপির ভাষ্য, রাজ্য সরকার সমুচা ইস্যুতে নিজেদের ‘হাসির পাত্র’ করে তুলেছে। মুখ্যমন্ত্রী সুখুও ‘শিশুসুলভ আচরণ’ করছে বলে শাসক দলের অনেক নেতাই মনে করেন।