যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচনের আগে দিয়ে প্রতিপক্ষের সঙ্গে প্রথম বিতর্কে প্রেসিডেন্টের বাজে পারফরমেন্সের পর দলের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে তৎপর ডেমোক্র্যাটরা।
Published : 28 Jun 2024, 05:14 PM
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে বৃহস্পতিবার প্রথম মুখোমুখি বিতর্কে অংশ নিয়েছেন দুই প্রতিদ্বন্দ্বী জো বাইডেন এবং ডনাল্ড ট্রাম্প। আর এতে বাইডেনের দুর্বল, টলমল বিতর্কে খোদ তার ডেমোক্র্যাটিক দলের সদস্যরাই হতাশ হয়েছেন।
নির্বাচনের আগে দিয়ে বাইডেনের এমন বাজে পারফরমেন্সে দল ক্ষতির মুখে পড়া নিয়েও তারা উদ্বিগ্ন। এ ক্ষতি কীভাবে পুষানো যাবে তা নিয়ে শুরু হয়েছে কথাবার্তা। বাইডেনের বিকল্প খুঁজতে শুরু করেছেন তারা।
কেউ কেউ বাইডেনকে সরিয়ে নির্বাচনে অন্য কাউকে প্রার্থী করার কথা বলছেন। কিছু ডেমোক্র্যাট বাইডেনকে সরে দাঁড়ানোর দাবি জানাতে শুরু করেছেন। আবার বাইডেন নিজে থেকে সরে দাঁড়াবেন কিনা সেটি নিয়েও ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে কথা হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান ডেমোক্র্যাটিক প্রেসিডেন্ট ৮১ বছরের জো বাইডেন এবং তার প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী রিপাবলিকান দলের ৭৮ বছরের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প- দুজনের বয়সই এবারের নির্বাচনে ভোটারদের কাছে উদ্বেগের একটি বড় বিষয়।
বাইডেন শিবির আশা করেছিল বিতর্কে তিনি প্রাণবন্ত, জোরাল বক্তব্য রাখলে ভোটারদের সেই শঙ্কা দূর করতে পারবেন। কিন্তু তা হয়নি। উল্টো ঘোড়ার মতো স্বরে বিতর্কের মাঝে কখনও কখনও বাইডেন হোঁচট খেয়েছেন। বিশেষ করে বিতর্কের শুরুর দিকে।
বাইডেনের কণ্ঠস্বর নিয়ে হোয়াইট হাউজ বলছে, বিতর্কে নামার আগে থেকে তিনি সর্দিতে ভুগছিলেন। কিন্তু ৯০ মিনিটের ভাষণে বাইডেনকে কথা বলতে এবং প্রতিপক্ষ ট্রাম্পকে মোকাবেলা করতে রীতিমত সংগ্রাম করতে হচ্ছিল।
এতে নির্বাচনের চারমাস আগে অফুরন্ত প্রাণশক্তি নিয়ে তিনি নির্বাচনী প্রচার চালাতে পারবেন কিনা তা নিয়েই শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। আরতার বয়স নিয়ে ভোটারদের ভয় দূর হওয়ার পরিবর্তে আরও বেড়েছে। সিদ্ধান্তহীন ভোটারদের মধ্যে পরিচালিত একটি জরিপে দেখা গেছে তারা বাইডেনের বিতর্কে মোটেও সন্তুষ্ট হয়নি।
ওদিকে, বাইডেনের এক শীর্ষ তহবিল যোগানদাতা তো তার পারফরম্যান্সে ক্ষুব্ধ হয়ে বলেই ফেলেছেন, প্রেসিডেন্ট ‘অযোগ্য’ প্রমাণিত হয়েছেন। অগাস্টে দলের জাতীয় সম্মেলনের আগে বাইডনের ভোটের লড়াই থেকে সরে যেতে নতুন করে আহ্বান জানানো হবে বলে তিনি আশা করছেন।
প্রেসিডেন্ট পদের জন্য সম্ভাবনাময় তিন ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থীর ঘনিষ্ঠ তিন উপদেষ্টা বলেছেন, বিতর্ক চলার পুরো সময়টাতেই তাদের কাছে টেক্সট মেসেজের বন্যা বয়ে গেছে। এক উপদেষ্টা বলেন, তারা তাদের প্রার্থীকে বাইডেনের বিকল্প হিসাবে সামনে আনার অসংখ্য অনুরোধ পেয়েছেন।
আরেকজন উপদেষ্টা বলেন, তারা ‘বিপর্যয়’ লেখা আধা ডজনেরও বেশি টেক্সট মেসেজ পেয়েছেন তহবিল যোগানদাতাদের কাছ থেকে। এই দাতারা বলেছেন, এ বিপর্যয় সামলাতে দলের কিছু করা উচিত। তবে বাইডেন সরে না দাঁড়ালে তেমন কিছু করার নেই বলেও তারা স্বীকার করেছেন।
একজন শীর্ষ ডেমোক্র্যাটিক তহবিল যোগানদাতা এবং বাইডনের সমর্থক বলেছেন, এখন প্রেসিডেন্টের নির্বাচনী প্রচার শেষ করার সময়। তিনি বলেছেন, “ইতিহাসে এই বিতর্কের রাতে বাইডেন সবচেয়ে বাজে পারফরমেন্স করেছেন। তিনি এতটাই খারাপ করেছেন যে কেউ ট্রাম্পের মিথ্যা বলার দিকে ধ্যানই দেবে না।”
এক টেক্সট মেসেজে তিনি লেখেন, “বাইডেনকে যে এখন সরানো দরকার সেটি পশ্নাতীত।” বাইডেনের বিকল্প প্রার্থী হিসাবে তিনি মেরিল্যান্ড ও মিশিগানের গভর্নরদের নাম প্রস্তাব করেন।
বাইডেনের আরেক ঘনিষ্ঠ সমর্থক এবং ডেমোক্র্যাটিক আইনপ্রণেতাও বলেছেন, নতুন একজনকে এখন দলের মনোনয়ন দেওয়ার সময় হয়ে এসেছে।
তবে বাইডেনের বিকল্প খুব বেশি নেই। তাছাড়া, বাইডেনকে দল একপাশে সরিয়ে দিতে পারবে কিনা সেটি নিয়েও অনেকে সন্দিহান। বাইডেন ছাড়া কোন প্রার্থী দলের সমর্থন পাবেন সেটিও যেমন নিশ্চিত নয়, তেমনি সেই প্রার্থী ট্রাম্পকে মোকাবেলা করতে পারবেন কিনা সেটিও নিশ্চিত নয়।
আরেকটি বিষয় হচ্ছে, নির্বাচন এরই মধ্যে কাছে এসে পড়েছে। এরকম একটি সময়ে বাইডেনের সরে দাঁড়ানোটাও হবে নজিরবিহীন। যদিও বাইডেনকে সরে দাঁড়ানোর আহ্বান জানাবে অনেকেই।
কিন্তু বাইডেনকে সরে দাঁড়াতে হলেও সে পথ হবে দীর্ঘ এবং নড়বড়ে। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের ৫০ টি রাজ্যের প্রাইমারি হয়ে গেছে। আর সেগুলোর প্রতিটিতেই প্রায় সব ডেলিগেট জিতে নিয়েছেন বাইডেন। এ সময়ে তার সরে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি নেই।
বাইডেনকে সরাতে গেলে এখন দলের এখন দুটো পথই আছে। প্রথমত বাইডেনের সম্মতি, আর নয়ত ওই ডেলিগেটদের মুখ ফিরিয়ে নেওয়া যারা বাইডেনকে সমর্থন দিয়েছেন।
কিন্তু বাইডেন সরে গেলে তার জায়গায় প্রার্থী কে হবেন সেটিও একটি প্রশ্ন। জরিপে দেখা গেছে, ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস আমেরিকানদের মধ্যে জনপ্রিয় হবেন না । কিন্তু হ্যারিস ছাড়া ট্রাম্পকে মোকাবেলা করার মতো হাতে থাকা আর কোনও বিকল্প প্রার্থী এ মুহূর্তে নেই।
২০২৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য সম্ভাবনাময় দুই বিশিষ্ট প্রার্থী হচ্ছেন, ইলিনয়ের গভর্নর জে বি প্রিৎজকার এবং ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউসম; যারা হতে পারেন বাইডেনের বিকল্প। তবে তারা বলছেন, বাইডেন বিতর্কে যেমনই করে থাকুন না কেন তারা তার সঙ্গেই আছেন।
এমএসএনবিসি টিভি চ্যানেলে এক সাক্ষাৎকারে নিউসমকে বাইডেনের সরে যাওয়ার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, “একটি মাত্র পারফরমেন্সের কারণে আপনি মুখ ফিরিয়ে নিতে পারেন না। তাই যদি হয় তাহলে সেটি কী ধরনের দল?
সূত্র: বিবিসি/রয়টার্স/পলিটিকো