নিরাপত্তা জোরদার করছে নেটো, বেলারুশকে জি৭-এর হুঁশিয়ারি

রাশিয়া আরও বেশি হুমকি হয়ে ওঠায় নেটো দেশগুলো নিরাপত্তা জোরদার করছে। ওদিকে, জি৭ নেতারা বেলারুশকে ইউক্রেইন যুদ্ধে বেশি জড়িয়ে না পড়ার ব্যাপারে সতর্ক করেছেন।

রয়টার্স
Published : 11 Oct 2022, 07:52 PM
Updated : 11 Oct 2022, 07:52 PM

রাশিয়া ইউক্রেইনে হামলার তীব্রতা বাড়ানোয় এবং পশ্চিমাদের জন্য আরও বেশি হুমকি হয়ে ওঠায় পশ্চিমা সামরিক জোট নেটোর সদস্য দেশগুলো গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন স্থাপনা ঘিরে নিরাপত্তা জোরদার করতে শুরু করেছে।

ওদিকে, জি৭ জোটের নেতারা মঙ্গলবার তাদের ভার্চুয়াল এক বৈঠকের যৌথ বিবৃতিতে ইউক্রেইন যুদ্ধে আরও বেশি জড়িয়ে না পড়ার ব্যাপারে বেলারুশকে হুঁশিয়ার করেছেন।

গত শনিবার রাশিয়া-ক্রাইমিয়ার মধ্যকার একমাত্র সংযোগ সেতুতে ট্রাক বিস্ফোরণের ঘটনার পর প্রতিশোধ নিতে ইউক্রেইনে হামলার তীব্রতা বাড়িয়ে দিয়েছে রাশিয়া। মঙ্গলবার দ্বিতীয় দিনের মতো জোর হামলা চলেছে। দু’দিনের হামলায় নিহত হয়েছে ১৯ জনের বেশি মানুষ এবং আহত হয়েছে শতাধিক জন।

এ পরিস্থিতির মধ্যে রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ মিত্রদেশ বেলারুশ ইউক্রেইন এবং পশ্চিমাদের কাছ থেকে হামলার হুমকি থাকার কথা উল্লেখ করে মস্কোর সঙ্গে যৌথভাবে ইউক্রেইন সীমান্তে সেনা মোতায়েনের ঘোষণা দিয়েছে।

বেলারুশ শুরু থেকেই রাশিয়াকে ইউক্রেইনে যুদ্ধ চালানোর জন্য নিজেদের ভূখন্ড ব্যবহার করতে দিয়েছে। তবে এতদিন ইউক্রেইন সীমান্তের কাছে বেলারুশ তাদের সেনা মোতায়েন করেনি। এবার তারা সেটিই করার তোড়জোড় শুরু করেছে।

ওদিকে, ইউক্রেইনের চারটি অঞ্চলকে রাশিয়ার অন্তর্ভুক্ত করার পরপরই প্রেসিডেন্ট পুতিন পশ্চিমাদের সতর্ক করে বলে রেখেছেন, এসব অঞ্চলে হামলা হলে তা রাশিয়ার ওপর হামলা হিসেবেই বিবেচিত হবে এবং এর জবাব পারমাণবিক অস্ত্রে দেওয়া হতে পারে।

রাশিয়ার এ হুমকিতে পশ্চিমা দেশগুলোর উদ্বেগ বেড়েছে। ইউরোপের এক কূটনীতিক বলেছেন, নেটো এই হুমকি মোকাবেলায় করণীয় ঠিক করতে পশ্চিমা প্রতিরক্ষা জোটের একটি ভার্চুয়াল সম্মেলন করার কথা বিবেচনা করছে।

যদিও নেটো মহাসচিব ইয়েন্স স্টলটেনবার্গ ব্রাসেলসে সাংবাদিকদের বলেছেন, নেটো রাশিয়ার পারমাণবিক বাহিনীর ওপর নজর রেখেছে। তবে সেখানে কোনও তৎপরতা চোখে পড়েনি।

তবে তিনি বলেন, বাল্টিক সাগরের তলদেশের গ্যাস পাইপলাইনে বিস্ফোরণের ঘটনার পর থেকেই নেটো সদস্য দেশগুলো গুরুত্বপূর্ণ সব স্থাপনা ও অবকাঠামো ঘিরে নিরাপত্তা জোরদার করছে এবং ইচ্ছাকৃতভাবে চালানো কোনও হামলার ঘটনা ঘটলে নেটো সম্মিলিতভাবে শক্তিশালী পাল্টা জবাব দেবে।

মঙ্গলবার রুশ হামলায় ইউক্রেইনের দক্ষিণপূর্বের শহর জাপোরিজিয়া এবং পশ্চিমের নগরী লভিভের অর্ধেকাংশ বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি অভিযোগ করে বলেছেন, যুদ্ধে রাশিয়া বেশি বেশি হামলা চালানোর এক নতুন অধ্যায় শুরু করেছে।

এ কারণে রাশিয়ার ওপর আরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা এবং বেলারুশের সঙ্গে ইউক্রেইনের সীমান্তে আন্তর্জাতিক নজরদারি অভিযান শুরুর আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। রাশিয়ার জোর হামলার মুখে পশ্চিমা দেশগুলোর কাছ থেকে ‘এক নম্বর অগ্রাধিকার’ ভিত্তিতে আকাশ সুরক্ষা ব্যবস্থাও চেয়েছেন জেলেনস্কি।

ইউক্রেইনেকে সহায়তার পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং জি৭ এর অন্যান্য নেতারা মঙ্গলবার জরুরি ভার্চুয়াল বৈঠক করেন।

বৈঠকে নেতারা ইউক্রেইনে রাশিয়ার তীব্র ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কড়া নিন্দা জানিয়ে এর জন্য দায়ী রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনসহ অন্যান্যদের জবাবদিহি করানোর অঙ্গীকার করেছেন। একইসঙ্গে রাশিয়ার আগ্রাসনের যুদ্ধকে সমর্থন না দেওয়ার জন্য বেলারুশ কর্তৃপক্ষকেও আহ্বান জানিয়েছেন।

ইউক্রেইন যুদ্ধে আরও বেশি জড়িয়ে না পড়ার ব্যাপারে বেলারুশকে হুঁশিয়ার করেছেন ফ্রান্সের পররাষ্ট্রবিষয়ক মন্ত্রী। ফরাসি বেতারে তিনি বলেন, ইউক্রেইন যুদ্ধে বেশি জড়িয়ে গেলে বেলারুশকে আরও পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়তে হতে পারে।

ইউক্রেইনে হামলা বাড়িয়ে রাশিয়া যুদ্ধের নিয়ম লঙ্ঘন করেছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।