রাশিয়ার সীমান্তবর্তী কুর্স্ক অঞ্চলে আচমকা ইউক্রেইনের শতাধিক সেনা অনুপ্রবেশ দেখিয়ে দিয়েছে যে, রাশিয়ার যুদ্ধ পরিকল্পনামতো চলছে না-বিবিসি সাংবাদিকের বিশ্লেষণ।
Published : 08 Aug 2024, 10:32 PM
ইউক্রেইনে রাশিয়ার পুরোদস্তুর আগ্রাসনকে ক্রেমলিন ধরে নিয়েছিল একটি সংক্ষিপ্ত, শাণিত সামরিক অভিযান হিসাবে।
এই অভিযান মাত্র কয়েক দিনেই শেষ হয়ে যাবে কিংবা প্রতিবেশী দেশটির ওপর রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণ করায়ত্ব করতে খুব বেশি হলে কয়েক সপ্তাহ লাগতে পারে বলে ক্রেমলিন আশা করেছিল।
প্রায় আড়াইবছর আগে ইউক্রেইনে যুদ্ধ শুরু করে রাশিয়া। এখনও লড়াইয়ের পরিধি বাড়ছেই। মস্কো যা ভেবেছিল, যুদ্ধ মোটেও সেভাবে এগোয়নি।
তারপরও অনেক সময়ই গত ২৯ মাস ধরে রাশিয়ার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদেরকে প্রায়ই দাবি করতে শোনা গেছে যে, (ইউক্রেইন) অভিযান পরিকল্পনামতোই চলছে।
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সর্বশেষ এমন দাবি করেছিলেন গত মে মাসে। যদিও যুদ্ধের আগের দুইবছরে রণক্ষেত্রে ব্যাপক রুশ সেনা হতাহত, কৃষ্ণসাগরে রাশিয়ার একাধিক যুদ্ধজাহাজ ধ্বংস, রাশিয়ার অনেক ভেতরে- এমনকি ক্রেমলিনেও ড্রোন হামলা, ইউক্রেইন সীমান্তের কাছে রুশ শহর-গ্রামে তীব্র গোলা হামলা, রুশ ভাড়াটে সেনা দল ওয়াগনারের বিদ্রোহ এবং মস্কোর দিকে তাদের পদযাত্রা হতে দেখা গেছে।
এতসবকিছুর পর এবার এ তালিকায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে রাশিয়ার সীমান্তবর্তী কুর্স্ক অঞ্চলে আচমকা ইউক্রেইনের সেনা ও কিইভপন্থি যোদ্ধাদের ঢুকে পড়ে হামলার ঘটনা।
বিবিসি নিউজের ব্রিটিশ সাংবাদিক স্টিভ রজেনবার্গের মতে, কুর্স্কে ইউক্রেইনের এই অনুপ্রবেশই দেখিয়ে দিয়েছে যে, রাশিয়ার যুদ্ধ পরিকল্পনামতো চলছে না।
রাশিয়ার কর্মকর্তারাসহ ইউক্রেইনের সেনা কর্মকর্তা ও গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, গত মঙ্গলবার কিইভ শত শত সেনাকে সাঁজোয়া যান, গোলাবারুদ এবং ড্রোন সুসজ্জিত করে রাশিয়ার পশ্চিমাঞ্চলীয় কুর্স্ক অঞ্চলে পাঠিয়েছে।
অনুপ্রবেশকারীদের সঙ্গে রুশ সেনাদের তীব্র লড়াইও হয়েছে। বুধবার নিয়ে টানা দুদিন অঞ্চলটিতে এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। ইউক্রেইনের যোদ্ধারা এই লড়াইয়ের পর সুজ্জা শহরের দিকে অগ্রসর হয়েছে।
ইউক্রেইনের মধ্য দিয়ে ইউরোপে রাশিয়ার প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহের একমাত্র পাম্পিং স্টেশনটি আছে এই সুজ্জায়। ফলে এই শহরের পতন হলে ইউরোপে রাশিয়ার গ্যাস সরবারহ বিঘ্নিত হতে পারে।
কুর্স্কের সুজ্জায় এ মুহূর্তে ঠিক কী ঘটছে তা জানা কঠিন। কতজন ইউক্রেইনের সেনা সেখানে আছেন, কতটা ভূখন্ড তাদের দখলে গেছে আর তাদের চূড়ান্ত লক্ষ্যই বা কী তা স্পষ্ট নয়। বৃহস্পতিবার রাশিয়ার দৈনিক নেজাভিসিমায়া গেজেটাতে কুর্স্কের ঘটনাবলী ধোয়াঁশায় ঢাকা বলা হয়েছে।
তবে বিবিসি সাংবাদিক স্টিভ রজেনবার্গ তার বিশ্লেষণে বলেছেন, ধোঁয়াশার মধ্যেও কিছু জিনিস স্পষ্ট আছে। তার মতে, এটি স্পষ্ট যে, কুর্স্ক অঞ্চলে যা ঘটছে তাতে রাশিয়ার যুদ্ধ যে ‘পরিকল্পনামতো চলছে না’ সেটিই আরও বেশি করে প্রমাণিত হয়।
সেখানে ঘটে যাওয়া সব ঘটনায় রাশিয়ার রাজনৈতিক এবং সামরিক নেতারা বিস্মিত হয়েছেন বলেই প্রতীয়মান হয়। তবে, মস্কো যে তা স্বীকার করবে সেটি আশা করা যায় না।
রাশিয়ার যা করার সম্ভাবনা বেশি সেটি হচ্ছে, কুর্স্কে ইউক্রেইনের হামলাকে রুশ জনগণের সামনে এভাবে চিত্রিত করা যে, এই সংঘাতে রাশিয়া আগ্রাসনকারী নয় বরং রাশিয়া হচ্ছে শত্রু দিয়ে ঘেরাও হয়ে যাওয়া একটি দুর্গ। যে শত্রুরা রাশিয়ায় আগ্রাসন চালিয়ে একে ধ্বংস করে দেওয়ার চক্রান্ত করছে।
অথচ বাস্তবে রাশিয়াই প্রতিবেশী ইউক্রেইনে সর্বাত্মক আগ্রসনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। রাশিয়ার তখনকার আর এখনকার বলা কথার মধ্যে স্পষ্টতই বড় ধরনের পার্থক্য আছে।
২০২২ সালে ইউক্রেইন সীমান্তপারে রাশিয়া তাদের সেনা পাঠানোর সময় ক্রেমলিন বলেছিল, তারা সেখানে বিশেষ সামরিক অভিযান শুরু করছে। সেখানকার শহর, গ্রামগুলোকে স্বাধীন করার দাবি করেছিল তারা। আর এখন রাশিয়ায় ঢুকে পড়ে ইউক্রেইনের সেনাদের হামলাকে মস্কো বলছে ‘সন্ত্রাসী হামলা’, ‘উস্কানি’।
কিন্তু রাশিয়া যাই বলুক, কুর্স্কে ইউক্রেইনীয় সেনাদের হামলা এবং সেখানে তীব্র লড়াই এই সংকেতই দিচ্ছে যে, যুদ্ধ বাড়ির কাছে এসে পড়ছে।