তাকে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে প্রভাবশালী মাদক কারবারি হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
Published : 26 Jul 2024, 12:44 PM
বিশ্বের অন্যতম মাদক সম্রাট ইসমাইল ‘এল মায়ো’ জাম্বাদাকে যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের এল পাসো থেকে গ্রেপ্তার করেছে ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই)।
বিবিসি লিখেছে, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের কারাগারে থাকা জোয়াকিন 'এল চ্যাপো' গুজম্যানের সঙ্গে হাত মিলিয়ে
মেক্সিকোর সিনালোয়া মাদক চক্র গড়েন ৭৬ বছর বয়সী জাম্বাদা। আশির দশকের শেষ দিকে গুয়াদালাজারা চক্রের পতনের পর এই সিনালোয়া চক্র প্রতিষ্ঠা করেন জাম্বাদা।
যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার জাম্বাদার সঙ্গে গুজম্যানের ছেলে জোয়াকিন গুজম্যান লোপেজকেও গ্রেপ্তার করা হয়।
আফিম থেকে প্রস্তুত মাদকে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে যে উচ্চ মৃত্যুহার দেখা যাচ্ছে, তার জন্য ফেন্টানিলকে দায়ী করা হয়। জাম্বাদার বিরুদ্ধে হেরোইনের চেয়েও শক্তিশালী এই মাদক তৈরি ও সরবরাহের অভিযোগ গত ফেব্রুয়ারিতে এনেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের কৌঁসুলিরা।
জাম্বাদা ও গুজম্যান লোপেজ 'বিশ্বের সবচেয়ে সহিংস ও শক্তিশালী মাদক পাচারকারী সংগঠনগুলোর একটি'র নেতৃত্ব দিচ্ছেন জানিয়ে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাটর্নি জেনারেল মেরিক গারল্যান্ড এক বিবৃতিতে বলেন, সিনালোয়া মাদক চক্রের নেতা ও সহযোগীদের জবাবদিহি করছে যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ।
“ফেন্টানিল আমাদের দেশে সবচেয়ে প্রাণঘাতী মাদক হিসেবে হাজির হয়েছে এবং আমাদের কমিউনিটির সর্বনাশ করার জন্য মাদক চক্রের প্রতিটি নেতা, সদস্য এবং সহযোগীর শাস্তি নিশ্চিত না করা পর্যন্ত বিচার বিভাগ ক্ষান্ত হবে না।”
যুক্তরাষ্ট্রের কৌঁসুলিরা বলছেন, সিনালোয়া চক্রই যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় মাদক সরবরাহকারী।
এর আগে মার্কিন কর্তৃপক্ষ বলেছিল, ১৮ থেকে ৪৫ বছর বয়সী আমেরিকানদের মৃত্যুর প্রধান কারণ ফেন্টানিল।
জাম্বাদাকে ধরিয়ে দিতে দেড় কোটি ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেছিল যুক্তরাষ্ট্রের ড্রাগ এনফোর্সমেন্ট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (ডিইএ)।
২০১৯ সালে জোয়াকিন ‘এল চ্যাপো’ গুজম্যানের বিচারের সময় তার আইনজীবীরা বলেছিলেন, বিচারের মুখোমুখি না হতে এবং স্বাধীন জীবনযাপন করতে ‘পুরো’ মেক্সিকান সরকারকে ঘুষ দেন জাম্বাদা।
গুজম্যানের আইনজীবী জেফরি লিচটম্যান তার মক্কেলের বিচারকদের উদ্দেশে বলেছিলেন, “প্রকৃতপক্ষে তিনি (গুজম্যান) কিছুই নিয়ন্ত্রণ করেননি; মায়ো জাম্বাদা করেছেন।”
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের তথ্য অনুযাযী, মেক্সিকোতে জাম্বাদার বেশ কয়েকটি বৈধ ব্যবসা আছে, যার মধ্যে দুধের একটি বড় কোম্পানি, একটি বাস পরিষেবা কোম্পানি, হোটেল এবং আবাসন খাত আছে। ফেন্টানিল মাদকের পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে মাদক পাচার, হত্যা, অপহরণ, অর্থ পাচার ও সংগঠিত অপরাধের অভিযোগও রয়েছে।
জাম্বাদার ভাতিজা এলিসিও ইম্পেরিয়াল কাস্ত্রো গত মে মাসে মেক্সিকোতে এক অতর্কিত হামলায় প্রাণ হারান। ‘চেয়ো এন্ট্রাক্স’ নামে ওই ব্যক্তিকে খুঁজছিল যুক্তরাষ্ট্রও।
বিবিসি লিখেছে, জাম্বাদাকে বিশ্বের বৃহত্তম মাদক সম্রাট হিসেবে বিবেচনা করা হয়, আর যুক্তরাষ্ট্রে তিনিই সবচেয়ে প্রভাবশালী মাদক কারবারি। কয়েক দশক ধরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে এড়িয়ে চলা এই কারবারির ধরা পড়ার ঘটনাকে মেক্সিকোতে ধাক্কা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
মেক্সিকো ও মার্কিন কর্মকর্তাদের বরাতে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানিয়েছে, হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ইনভেস্টিগেশনস ও এফবিআইয়ের কয়েক মাস ধরে চলা অভিযানের মধ্যে জাম্বাদাকে কৌশলে বিমানে উঠতে বাধ্য করেন সিনালোয়ারই শীর্ষ এক সদস্য। জাম্বাদা ভেবেছিলেন, তিনি মেক্সিকোতে গোপন বিমান ঘাঁটি পরিদর্শন করতে যাচ্ছেন।
বিবিসি লিখেছে, সিনালোয়া মাদক চক্রের হোতা হিসেবে প্রকাশ্যে পরিচিত ছিলেন জোয়াকিন 'এল চ্যাপো' গুজম্যান। তবে অনেকেই বিশ্বাস করতেন জাম্বাদা বা এল মায়োই আসল নেতা।
কেবল নির্মমতাই নয়, উদ্ভাবনীর প্রশ্নেও তিনি সফল ছিলেন। কোকেন, হেরোইনে যুক্তরাষ্ট্র সয়লাব করতে শুরুর দিকে জাম্বাদা কলম্বোবীয় চক্রের সঙ্গে হাত মিলিয়েছিলেন। পরে তাদের ব্যবসায় ফেন্টানিল যোগ হয়।